আজকাল ওয়েবডেস্ক: সাইবার অপরাধের ঘটনা ভারতে বিপজ্জনক হারে বাড়ছে। গত তিন বছরে এই অপরাধের সংখ্যা প্রতি বছর অন্তত ৪০ শতাংশ হারে বেড়েছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। লোকসভায় জনতা দল (ইউনাইটেড)-এর সংসদ সদস্য অজয় কুমার মণ্ডলের এক প্রশ্নের উত্তরে এই তথ্য তুলে ধরেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বন্দি সঞ্জয় কুমার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তথ্য অনুসারে, ২০২২ সালে জাতীয় সাইবার অপরাধ রিপোর্টিং পোর্টালে (NCRP) মোট ১০,২৯,০২৬টি সাইবার অপরাধের অভিযোগ নথিভুক্ত হয়েছে, যা ২০২১ সালের তুলনায় ১২৭.৪৪ শতাংশ বেশি। ২০২১ সালে রিপোর্ট করা হয়েছিল ৪,৫২,৪২৯টি মামলা। এরপর ২০২৩ সালে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৫,৯৬,৪৯৩ এবং ২০২৪ সালে আরও লাফিয়ে উঠে পৌঁছায় ২২,৬৮,৩৪৬-এ, যা ২০২৩ সালের তুলনায় ৪২.০৮ শতাংশ বেশি।

এই সাইবার অপরাধের মধ্যে সবচেয়ে উদ্বেগজনক হচ্ছে আর্থিক প্রতারণা। ২০২৩ সালে আর্থিক জালিয়াতির কারণে ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৭৪৬৫.১৮ কোটি টাকা এবং ২০২৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২২,৮৪৫.৭৩ কোটিতে। অর্থাৎ, মাত্র দুই বছরে দেশের মানুষ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি মিলিয়ে ৩০,০০০ কোটিরও বেশি টাকা হারিয়েছে প্রতারণার জালে পড়ে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার 'প্রতিবিম্ব' নামক একটি প্রযুক্তিনির্ভর উদ্যোগ চালু করেছে। এটি অপরাধীদের অবস্থান ও অপরাধের পরিকাঠামো মানচিত্রে চিহ্নিত করে এবং সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশ আধিকারিকদের প্রযুক্তিগত ও আইনগত সহায়তা প্রদানে সাহায্য করে। সরকারের দাবি অনুযায়ী, এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত ১০,৫৯৯ জন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার, ২৬,০৯৬টি অপরাধ সংযোগ চিহ্নিত এবং ৬৩,০১৯টি সাইবার তদন্ত সহায়তার অনুরোধ নিষ্পত্তি হয়েছে।

 আরও পড়ুন: স্ট্রোক আর ডিমেনশিয়ার ছায়া—অল্পবয়সিদেরও ঝুঁকি, বিশেষজ্ঞ জানালেন মস্তিষ্ক সুস্থ রাখার পাঁচটি উপায়

তবে, সংসদ সদস্য মণ্ডল জানতে চেয়েছিলেন যে NCRP-তে জমা পড়া ১৯.১৮ লক্ষ অভিযোগের মধ্যে কতগুলির নিষ্পত্তি হয়েছে এবং কতগুলি এখনও বিচারাধীন রয়েছে, তার সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান সরকার জানায়নি। মন্ত্রকের দাবি, মামলা দায়ের, চার্জশিট প্রদান এবং অভিযোগ নিষ্পত্তির দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার অধীন।

এছাড়াও, সরকার জানিয়েছে যে পুলিশি তদন্তের ভিত্তিতে এখনও পর্যন্ত ৯.৪২ লক্ষেরও বেশি সিম কার্ড এবং ২,৬৩,৩৪৮টি মোবাইলের আইএমইআই নম্বর ব্লক করা হয়েছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির সঙ্গে যৌথভাবে 'সাসপেক্ট রেজিস্ট্রি' চালু করেছে ইন্ডিয়ান সাইবার ক্রাইম কোঅর্ডিনেশন সেন্টার (I4C)। এই প্ল্যাটফর্মে এখন পর্যন্ত ১১ লক্ষ সন্দেহভাজন অপরাধীর তথ্য এবং ২৪ লক্ষ ‘লেয়ার-১ মিউল অ্যাকাউন্ট’-এর তথ্য ভাগ করে নেওয়া হয়েছে। সরকারের দাবি, এর ফলে ৪৬৩১ কোটি টাকারও বেশি আর্থিক প্রতারণা রোধ করা সম্ভব হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই তথ্য সাইবার অপরাধ প্রতিরোধে সরকারের উদ্যোগকে দৃঢ় করলেও, রাজ্যস্তরে তদন্ত ও অভিযোগ নিষ্পত্তির গতি অনেক ধীর। ফলে সাধারণ মানুষের জন্য ঝুঁকি এখনও থেকেই যাচ্ছে।