আজকাল ওয়েবডেস্ক: দেশের অন্যতম আইটি হাব বেঙ্গালুরু দীর্ঘদিনের সমস্যার সম্মুখীন, অসহনীয় যানজট। এবার এই পরিস্থিতির উন্নতির লক্ষ্যে এগিয়ে এলেন ইজি মাই ট্রিপ-এর সহপ্রতিষ্ঠাতা প্রশান্ত পিট্টি। তিনি জানিয়েছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং গুগল ম্যাপসের ডেটার সাহায্যে শহরের যানজট কমাতে বিশেষ উদ্যোগ নেবেন। এমনকি, এই গোটা প্রকল্পের জন্য ১ কোটি টাকা পর্যন্ত ব্যয় করতেও তিনি প্রস্তুত। প্রশান্ত পিট্টি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স হ্যান্ডেলে নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে জানান, গত সপ্তাহান্তে মাত্র ১১ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে তাঁর দু’ঘণ্টারও বেশি সময় লেগে গিয়েছিল। ওই সময় তিনি বেঙ্গালুরুর আউটার রিং রোডে একটি চোক-পয়েন্টে দীর্ঘ সময় আটকে পড়েন।

এক্স হ্যান্ডেলে লেখা পোস্টে তিনি লেখেন, ‘আমি আউটার রিং রোডের একটি চোক-পয়েন্টে ১০০ মিনিট আটকে ছিলাম। সেখানে না ছিল কোনও ট্র্যাফিক লাইট, না কোনও পুলিশ। আমি শুধু অভিযোগ করতে চাই না। বরং এই সমস্যার সমাধান করতে চাই’। তিনি আরও লেখেন, ‘এই প্রকল্পে আমি ১ কোটি টাকা খরচ করতে ইচ্ছুক। এতে ১-২ জন সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ করা হবে। গুগল ম্যাপ, কল, স্যাটেলাইট ইমেজারি এবং জিপিইউ ব্যবহারের জন্যও বাজেট থাকবে’। এই ঘোষণার পর বহু নেটিজেন প্রশংসা করেছেন এবং অনেকেই নিজেদের অবদান রাখার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এরপরেই প্রশান্ত একটি গুগল ফর্ম শেয়ার করেন, যাতে ইচ্ছুক ব্যক্তিরা নিজেদের দক্ষতা ও প্রস্তাবনা জানাতে পারেন। তাঁর পোস্টটিতে ইতিমধ্যেই চার হাজারের বেশি লাইক এবং শতাধিক কমেন্ট পড়েছে।

আরও পড়ুন: লঙ্কার গুঁড়ো ছিঁটিয়ে গুলি, হায়দ্রাবাদে নৃশংসভাবে খুন সিপিআই নেতা

এক নেটিজেন কমেন্ট করেন, ‘অসাধারণ উদ্যোগ! সত্যি বলছি, বেঙ্গালুরুর প্রয়োজন ট্রাফিকমুক্ত ভাল রাস্তাঘাট’। আরও একজন লেখেন, ‘এটি নিঃসন্দেহে একটি দৃষ্টান্তমূলক নাগরিক প্রচেষ্টা। আপনি সফল হলে নয়, সফল হবেনই, আমরা নিশ্চিত’। তৃতীয় আর এক ব্যক্তি পরামর্শ দেন, ‘আপনি সাংসদদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। ট্র্যাফিক পুলিশের সঙ্গে কথা বলে কোনও লাভ হবে না’। অন্য আর একজন লেখেন, আমাদের মতো নাগরিকদের আরও বেশি করে এমন উদ্যোগে সামিল হওয়া দরকার। ধন্যবাদ প্রশান্ত’।

উল্লেখ্য, একসময় ভারতের ‘সিলিকন ভ্যালি’ নামে পরিচিত বেঙ্গালুরু বর্তমানে চরম যানজটের শিকার। শহরের জনসংখ্যা বর্তমানে ১.৩ কোটির বেশি। পাশাপাশি, প্রচুর পরিমাণে আইটি সেক্টর থাকার কারণে বাইরের রাজ্য থেকেও প্রচুর মানুষ বেঙ্গালুরুতে থাকেন। অন্যতম আইটি হাব হওয়ার কারণে প্রতিদিন রাস্তায় নামে লক্ষ লক্ষ গাড়ি। সংকীর্ণ রাস্তা, অপর্যাপ্ত গণপরিবহণ এবং চলমান অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প সব মিলিয়ে দৈনন্দিন যাতায়াত এক বিভীষিকা হয়ে উঠেছে স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে।

যদিও মেট্রো সম্প্রসারণ, ট্রাফিক অ্যাপ, ও নানা ট্র্যাফিক ম্যানেজমেন্ট পদ্ধতি চালু হয়েছে, কিন্তু অপরিকল্পিত নগরায়ন এবং অতিরিক্ত গাড়ির চাপে কোনও ব্যবস্থাই দীর্ঘমেয়াদে কার্যকর হচ্ছে না। ফলে, বেঙ্গালুরুর ক্রমবর্ধমান সমস্যা নিয়ে এখন সোশ্যাল মিডিয়াতে অভিযোগের ঢল। প্রযুক্তি কর্মী থেকে শুরু করে ছাত্রছাত্রী, বহু মানুষ জানাচ্ছেন, ট্র্যাফিকের কারণে জীবনের গতি থমকে যাচ্ছে। অফিস যাওয়া, স্কুলে পৌঁছানো, এমনকি হাসপাতালে পৌঁছানোও হয়ে উঠছে এক চ্যালেঞ্জ। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, এখন বেঙ্গালুরু ছেড়ে অন্য শহরে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন অনেকেই। আর এই প্রবণতা যদি বাড়ে, তবে দেশের অন্যতম বড় আইটি হাবের ভবিষ্যৎ যে অনিশ্চিত হয়ে উঠবে, তা বলাই বাহুল্য।