আজকাল ওয়েবডেস্ক: দিল্লি সরকার চলতি বৈদ্যুতিক গাড়ি (ইভি) নীতির মেয়াদ আরও চার মাস বাড়িয়েছে। মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) দিল্লির পরিবহণ মন্ত্রী পঙ্কজ সিং জানান, নতুন ইভি নীতির খসড়া এখনো অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে, তাই এই নীতির মেয়াদ ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। তিনি বলেন, "আমরা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করছি এবং জনগণের জন্য আরও পরিচ্ছন্ন ও টেকসই পরিবহণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সমস্ত সম্ভাব্য দিক খতিয়ে দেখছি। ইতিমধ্যেই রাজধানীতে ইভি নিবন্ধনের হার বেড়েছে, এবং জনসাধারণের আগ্রহও বৃদ্ধি পাচ্ছে।"
২০২০ সালে চালু হওয়া দিল্লির প্রথম ইভি নীতি ২০২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হলেও, তারপরে একাধিকবার তা বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে এই নীতির আওতায় ই-সাইকেল কেনার জন্য ২৫% পর্যন্ত (সর্বোচ্চ ৫,৫০০ টাকা) ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে, ই-রিকশা ও ই-কার্টের জন্য ৩০,০০০ টাকা, এবং ব্যাটারির ক্ষমতার উপর নির্ভর করে ই-দুই-চাকার যানবাহনের জন্য সর্বোচ্চ ৩০,০০০ টাকা পর্যন্ত ভর্তুকি মিলছে। হালকা বৈদ্যুতিক বাণিজ্যিক যানবাহনের ক্ষেত্রেও একই পরিমাণ ভর্তুকির ব্যবস্থা রয়েছে।
আরও পড়ুন: দারিদ্র্য হ্রাস না, বরং বেড়েছে ক্ষুধা: সরকারি ও বিশ্বব্যাংকের দাবি নিয়ে প্রশ্ন
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, একটি সংশোধিত খসড়া ইতিমধ্যে মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্ত এবং পরিবহণ মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তবে কিছু নতুন পরামর্শ পাওয়ায় খসড়াটিকে আরেক দফা সংশোধনের প্রয়োজন পড়েছে। সংশোধনের কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার পর ১৫ দিনের জন্য জনসাধারণের মতামতের জন্য খসড়াটি প্রকাশ করা হবে। তারপর তা মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের জন্য পেশ করা হবে।
এই পদক্ষেপ দিল্লির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এখানে বায়ু দূষণ এক মারাত্মক সংকট হয়ে উঠেছে। আন্তর্জাতিক গবেষণা অনুযায়ী, দিল্লি বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরগুলির মধ্যে অন্যতম। বায়ুতে উচ্চমাত্রার পিএম ২.৫ ও পিএম ১০ কণার উপস্থিতি হৃদরোগ, ফুসফুসের অসুখ এবং শিশুদের বিকাশে প্রভাব ফেলছে। রাজধানীর এই দূষণ মূলত ডিজেল চালিত যানবাহন, নির্মাণ কাজ, এবং উন্মুক্ত জ্বালানির ব্যবহারের কারণে হয়।
বিশ্বজুড়েই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষিতে সবুজ বা ‘গ্রিন’ পরিবহণের গুরুত্ব ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। ইউরোপ, চীন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যেই বৈদ্যুতিক যানবাহনকে পরিবহণ ব্যবস্থার কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে। জাতিসংঘ এবং IPCC-র মতে, কার্বন নির্গমন কমাতে এবং গ্লোবাল ওয়ার্মিং নিয়ন্ত্রণে রাখতে ইভি ও পুনর্নবিকরণযোগ্য জ্বালানির উপর নির্ভরতা অত্যাবশ্যক। পরিবেশবান্ধব নগর পরিকল্পনা, গণপরিবহণের আধুনিকীকরণ এবং ইভি পরিকাঠামোর সম্প্রসারণ এখন আর বিলাসিতা নয়, বরং প্রয়োজন।
দিল্লি সরকারের এই পদক্ষেপ তাই শুধু একটি প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নয়, বরং জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে, পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে এক গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু ভর্তুকি দিলেই চলবে না; চার্জিং স্টেশন, ব্যাটারির মান এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্রযুক্তির প্রসারেও সরকারকে সমান মনোযোগ দিতে হবে। দিল্লির মতো মহানগরীগুলিকে যদি জলবায়ু বিপর্যয় থেকে রক্ষা করতে হয়, তবে পরিবহণ খাতে দ্রুত ও সাহসী পরিবর্তন জরুরি। ইভি নীতি তারই এক অঙ্গ।
