আজকাল ওয়েবডেস্ক: সাইবার জালিয়াতির নতুন দিক দেখে এবার সকলেই অবাক হয়ে গেল। যেভাবে প্রতারকরা এখানে জাল বিস্তার করেছিল তা দেখে কারও বোঝার উপায় ছিল না যে এভাবে খোয়া যেতে পারে লাখ লাখ টাকা। একটি আপাতদৃষ্টিতে নীরিহ মনে হওয়া ডিজিটাল বিয়ের নিমন্ত্রণপত্রই মহারাষ্ট্রের হিঙ্গোলি জেলার এক সরকারি কর্মচারীর কাছ থেকে প্রায় দুই লক্ষ টাকা কেড়ে নিল।


সাইবার জালিয়াতির শিকার ওই ব্যক্তি একটি অজানা নম্বর থেকে হোয়াটসঅ্যাপে ৩০ আগস্টের একটি বিয়ের নিমন্ত্রণ পান। বার্তায় লেখা ছিল— “Welcome. Shadi mein zarur aaye । 30/08/2025. Love is the master key that opens the gate of happiness.” এর নিচে একটি বিয়ের কার্ডের মতো দেখতে একটি পিডিএফ ফাইল সংযুক্ত ছিল। কিন্তু আসলে সেটি ছিল একটি অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ্লিকেশন প্যাকেজ (APK) ফাইল, যা বিয়ের কার্ডের ছদ্মবেশে মোবাইলে ঢুকে ব্যবহারকারীর সংবেদনশীল তথ্য চুরি করার জন্য তৈরি করা হয়েছিল।

আরও পড়ুন: যোগীরাজ্যে নৃশংসতার চরম নজির, মৃত সন্তানকে ব্যাগে নিয়ে ঘুরলেন বাবা


ভুক্তভোগী ফাইলটিতে ক্লিক করার সঙ্গেসঙ্গেই সাইবার অপরাধীরা তার তথ্যের অ্যাক্সেস পায় এবং ১,৯০,০০০ টাকা হাতিয়ে নেয়। এই ঘটনায় হিঙ্গোলি থানায় এবং সাইবার সেল বিভাগে এক অজ্ঞাত ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।


বিয়ের নিমন্ত্রণ প্রতারণা প্রথম সামনে আসে গত বছর, যখন বহু মানুষ এর ফাঁদে পা দিয়ে অর্থ হারান। প্রতারণার কৌশলটি হল। প্রথমে হোয়াটসঅ্যাপে বিয়ের নিমন্ত্রণ পাঠানো হয়। ফাইলটি খুললেই APK ফোনে ডাউনলোড হয়ে যায়। এরপর সাইবার অপরাধীরা ভুক্তভোগীর ফোনের তথ্য পর্যবেক্ষণ করতে পারে এবং সেখানে থাকা তথ্য ব্যবহার করে আরও প্রতারণা চালাতে পারে। এমনকি ফোনের মালিক সেজে অন্যদের কাছ থেকেও টাকা আদায় করতে সক্ষম হয়।


গত বছর হিমাচল প্রদেশ সাইবার পুলিশ এবিষয়ে সতর্কবার্তা জারি করে মানুষকে সাবধান থাকতে এবং অচেনা উৎস থেকে আসা কোনও ফাইল ডাউনলোড না করার পরামর্শ দিয়েছিল। তবে ফের একবার এই ধরণের ঘটনা সকলকে অবাক করে দিল। সেখান থেকে সাইবার অপরাধীদের নতুন কায়দা দেখে অবাক হয়েছেন প্রশাসনের কর্তারাও।


ভারতের টেলি যোগাযোগ নিয়ন্ত্রনকারী সংস্থা ট্রাই সাইবার কারচুপি ও অর্থনৈতিক প্রতারণার উত্তোরোত্তর বৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষের জন্য একটি বিধিমূলক সতর্কতা প্রকাশ করেছে। ট্রাই জানাচ্ছে, প্রতারকরা ট্রাই বা অন্য আইন প্রণয়নকারী সংস্থাগুলোর কর্মকর্তার ছদ্মবেশে টেলিকম বা অর্থনৈতিক নিয়মকানুন ভাঙা বা অন্য অপরাধমূলক কাজের মিথ্যা অভিযোগ আনছে সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে। তারপর তাঁদের ভয় দেখিয়ে ‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট’ বা ভুয়ো গ্রেফতারির আওতায় রাখা হচ্ছে।  


ট্রাইয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা মোবাইল ফোনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার ব্যাপারেও কখনও গ্রাহকদের ফোন করে না। কোনও এজেন্সির মাধ্যমেও এই ধরণের ফোন করানো হয় না বলেও নিশ্চিত করেছে ট্রাই এবং এই ব্যাপারে সাধারণ মানুষকে সতর্ক থাকতে নির্দেশ দিয়েছে।
বর্তমান সময়ে সাইবার প্রতারণার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বিশেষত মহিলারা অহরহ এর শিকার হয়ে চলেছেন। পরিসংখ্যান বলছে, গত বছরের তুলনায় দেশে ৭৪ লক্ষের বেশি সাইবার অপরাধের ঘটনা ঘটেছে। যার মধ্যে আর্থিক প্রতারণার ঘটনাই ৮৫%। মহিলাদের ছবি বিকৃত করে বা তাঁর সঙ্গে আপত্তিকর ছবি জুড়ে প্রতারণা করার ঘটনাও নেহাত কম নয়।


বর্তমানে নগদ লেনদেনের পরিবর্তে অনলাইন অর্থ লেনদেনের প্রবণতা অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। ১০ টাকা হোক বা ১০ লক্ষ টাকা, অনলাইনের মাধ্যমে খুবই সহজে একজনের অ্যাকাউন্ট থেকে অন্যজনের অ্যাকাউন্টে পাঠানো যায়।