আজকাল ওয়েবডেস্ক: সংসদে এমজিএনরেগা (মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ রোজগার নিশ্চয়তা আইন) বা ১০০ দিনের কাজ  বাতিলের প্রক্রিয়া চলার মধ্যেই দিল্লিতে সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে গুরুতর বাধার মুখে পড়ল এনরেগা সংগ্রাম মোর্চা। গ্রামীণ কর্মসংস্থান ও এমজিএনরেগা শ্রমিকদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠনের এই বৃহৎ জোটকে দিল্লি পুলিশের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয় যে, রাজধানীর কোথাও, এমনকি নির্দিষ্ট প্রতিবাদস্থল যন্তর মন্তরেও তাদের প্রতিবাদ কর্মসূচির অনুমতি দেওয়া হবে না।

এনরেগা সংগ্রাম মোর্চার পক্ষ থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যন্তর মন্তরে প্রতিবাদের অনুমতি পেতে পুলিশের তরফে ১০ দিনের আগাম নোটিশ  দাবি করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, অনুমতি ছাড়া কর্মসূচি করলে সংগঠকদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। মোর্চার বক্তব্য, এই আচরণ বিশেষভাবে উদ্বেগজনক, কারণ এই সংগঠনের সদস্যদেরই একাধিকবার সংসদের গ্রামীণ উন্নয়ন সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটি বিশেষজ্ঞ মতামত দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে।

সব বাধা সত্ত্বেও বুধবার দুপুর ১২টা নাগাদ এনরেগা সংগ্রাম মোর্চার একটি ক্ষুদ্র প্রতিনিধি দল ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে যন্তর মন্তরে হাজির হয়। তাঁদের সঙ্গে সংহতি জানাতে উপস্থিত ছিলেন পাঁচ জন সাংসদ- কংগ্রেসের শশীকান্ত সেথিল, ডিএমকের এস. মুরাসোলি ও থাঙ্গা তামিঝ চেলভান, সিপিআই (এমএল)-এর রাজা রাম সিং এবং সিপিআই (এম)-এর বিকাশ ভট্টাচার্য।

এই প্রতিনিধিদল একটি ‘ফ্ল্যাশ ডেমোনস্ট্রেশন’ বা সংক্ষিপ্ত প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে। সেখানে একদিকে যেমন এমজিএনরেগা বাতিলের তীব্র বিরোধিতা করা হয়, তেমনই গণতান্ত্রিক দেশে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অধিকারের প্রশ্নটি জোরালোভাবে তোলা হয়। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশ সেখানে পৌঁছে প্রতিবাদকারীদের সরিয়ে দেয় এবং কর্মসূচি বন্ধ করে দেওয়া  হয়।

এনরেগা সংগ্রাম মোর্চা জানিয়েছে, শুধু দিল্লিতেই নয় এদিন দেশের একাধিক রাজ্যে এমজিএনরেগা বাতিলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কর্মসূচি সংগঠিত হয়েছে। গ্রামীণ দরিদ্র মানুষের জীবিকা ও কর্মসংস্থানের উপর এই আইনের গুরুত্ব তুলে ধরে বিভিন্ন রাজ্যে শ্রমিক সংগঠন ও সামাজিক সংগঠনগুলি রাস্তায় নামেন।

মোর্চার বিবৃতিতে সরকারের দ্বিচারিতার তীব্র সমালোচনা করে বলা হয়েছে, “যে সরকার মাত্র চার ঘণ্টার নোটিশে  নোটবন্দি ঘোষণা করতে পারে (৮ নভেম্বর, ২০১৬), কয়েক ঘণ্টার নোটিসে গোটা দেশে লকডাউন জারি করতে পারে (২৪ মার্চ, ২০২০), এমনকি সংসদে এমজিএনরেগা বাতিলের বিল কয়েক ঘণ্টার নোটিশে  আলোচনার জন্য তুলতে পারে (১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫) সেই সরকারই আবার একটি ছোট, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের জন্য নির্দিষ্ট প্রতিবাদস্থলে ১০ দিনের নোটিশ  চাওয়ার ধৃষ্টতা দেখাচ্ছে।”

এই ঘটনার মাধ্যমে দিল্লিতে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের পরিসর ক্রমশ সংকুচিত হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছে এনরেগা সংগ্রাম মোর্চা। তাদের মতে, এমজিএনরেগা বাতিলের সিদ্ধান্ত শুধু গ্রামীণ শ্রমিকদের জীবন-জীবিকাকেই বিপন্ন করবে না, একই সঙ্গে গণতান্ত্রিক অধিকার ও প্রতিবাদের স্বাধীনতাকেও গুরুতরভাবে ক্ষুণ্ণ করবে।