আজকাল ওয়েবডেস্ক: একসময় একজন প্রতিশ্রুতিশীল মেডিক্যাল কলেজের অধ্যাপক ছিলেন ডা. শাহিন শাহিদ। কিন্তু গত সপ্তাহে ফারিদাবাদ থেকে গ্রেপ্তারের পর তিনি এখন তদন্ত সংস্থার চোখে পাকিস্তানভিত্তিক জইশ-ই-মহম্মদ-এর সঙ্গে যুক্ত এক “হোয়াইট-কলার টেরর মডিউল”-এর মূল চরিত্র হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন।
জেম-এর নারী শাখা গঠনের দায়িত্বে শাহিন
প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, ডা. শাহিনকে ভারতে জইশ-ই-মহম্মদের নারী শাখা “জামাত-উল-মুমিনিন” প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এই নতুন সংগঠনটি JeM-এর নারী নিয়োগ ও পরিচালনা শাখা হিসেবে কাজ করত। গোয়েন্দাদের দাবি, শাহিন ভারতের মাটিতে নারী নেতৃত্বাধীন এক র্যাাডিকাল নেটওয়ার্ক তৈরি করতে সক্রিয় ছিলেন।
সাদিয়া আজহারের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের অভিযোগ
তদন্তে উঠে এসেছে, জইশ-ই-মহম্মদের প্রতিষ্ঠাতা মাসুদ আজহারের বোন সাদিয়া আজহার, যিনি পাকিস্তানে নারী শাখার প্রধান, তিনি সরাসরি শাহিনকে এই দায়িত্ব দিয়েছিলেন। সাদিয়ার স্বামী ইউসুফ আজহার ১৯৯৯ সালের কান্দাহার বিমান ছিনতাইয়ের অন্যতম মাস্টারমাইন্ড ছিলেন এবং এই বছরের শুরুতে বাহাওয়ালপুরে “অপারেশন সিন্ধুতে” নিহত হন।
সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সীমান্তপারের যোগাযোগ
নিরাপত্তা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ডা. শাহিন সীমান্তের ওপারের হ্যান্ডলারদের সঙ্গে গোপন সোশ্যাল মিডিয়া চ্যানেলের মাধ্যমে যোগাযোগ রাখতেন এবং JeM-এর পক্ষে সমর্থক ও নিয়োগপ্রাপ্তদের সংখ্যা বাড়ানোর কাজ করতেন।
ফারিদাবাদ টেরর মডিউল সংযোগ
তার গ্রেপ্তার আসে ডা. মুজাম্মিল আহমেদ গনাই ও ডা. উমর উ নাবি—দুজনই ফারিদাবাদের আল-ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসক গ্রেপ্তারের পর। এই দলটিই দিল্লির লালকেল্লা বিস্ফোরণের সঙ্গে যুক্ত আন্তঃরাজ্য সন্ত্রাস চক্রের কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত হয়।
জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের সূত্র অনুযায়ী, অক্টোবরের মাঝামাঝি শ্রীনগরের নওগাঁও এলাকায় JeM-এর পোস্টার দেখা যাওয়ার পর তদন্ত শুরু হয়। গ্রেপ্তারের পর মুজাম্মিলের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক ও একটি একে-৪৭ রাইফেল উদ্ধার হয়। তার জিজ্ঞাসাবাদেই শাহিনের নাম ও ভূমিকার সূত্র মেলে।
১১ নভেম্বর ডা. শাহিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তদন্তে জানা যায়, তিনি তার চিকিৎসক পরিচয় ও পেশাদার যোগাযোগ ব্যবহার করে সন্দেহ এড়িয়ে চলতেন এবং মডিউলের লজিস্টিক্স পরিচালনায় সহায়তা করতেন।
লখনউয়ে অভিযান ও পারিবারিক জিজ্ঞাসাবাদ
তার গ্রেপ্তারের পর উত্তরপ্রদেশ এটিএস, জম্মু–কাশ্মীর পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন মঙ্গলবার লখনউয়ের লালবাগে তার বাড়িতে অভিযান চালায়। সেখানে থেকে মোবাইল, হার্ডড্রাইভ ও বিভিন্ন নথি বাজেয়াপ্ত করা হয়। তার ভাই ডা. পারভেজ আনসারিকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।
তার বাবা সৈয়দ আহমদ আনসারি বলেন, “আমি এক মাস আগে শেষবার শাহিনের সঙ্গে কথা বলেছি। আমার তিন সন্তান—শোয়েব, শাহিন ও পারভেজ। কখনও শুনিনি সে এমন কোনও কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত।”
গণেশ শঙ্কর বিদ্যার্থী মেডিকেল কলেজ (কানপুর)-এর রেকর্ড অনুযায়ী, ডা. শাহিন ২০০৬ সালে ইউপিপিএসসি-র মাধ্যমে নিয়োগ পান। ২০০৯–১০ সালে তিনি কান্নৌজ মেডিকেল কলেজে কর্মরত ছিলেন। ২০১৩ সালে অনুমতি ছাড়া ছুটি নিয়ে চলে যান এবং আর ফিরে আসেননি। একাধিক নোটিশ পাঠানোর পর ২০২১ সালে সরকারিভাবে তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। একজন অধ্যাপক জানান, “তিনি শান্ত, মেধাবী ও সংযত ছিলেন। এমন কিছুতে যুক্ত থাকতে পারেন, কেউ ভাবেনি।”
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, শাহিনের প্রাক্তন স্বামী মহারাষ্ট্রের বাসিন্দা জাফর হায়াতের সঙ্গে ২০১৫ সালে তার বিবাহবিচ্ছেদ হয়। এরপরই তিনি ফারিদাবাদে চলে যান, যেখানে মুজাম্মিলসহ JeM চক্রের সঙ্গে তার যোগাযোগ তৈরি হয়। তার গাড়ি থেকে আগেই রাইফেল ও জীবন্ত কার্তুজ উদ্ধার হওয়ায় সন্দেহ আরও ঘন হয়েছে। এনআইএ এখন তদন্তভার হাতে নিয়েছে এবং শাহিনের রেকর্ড, যোগাযোগের ইতিহাস ও লখনউ–কানপুর–ফারিদাবাদ সংযোগ বিস্তারিতভাবে খতিয়ে দেখছে।
