আজকাল ওয়েবডেস্ক: দিল্লির লালকেল্লায় গাড়ি বিস্ফোরণে ১২ জন নিহত ও ২০ জনের বেশি আহত হওয়ার ঘটনায় তদন্তে নতুন তথ্য সামনে এসেছে। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, এই “ডাক্তারের মডিউল”-এর মূল উৎস পাওয়া গেছে দুটি টেলিগ্রাম গ্রুপে—Farzandan-e-Darul Uloom (Deoband) এবং পাকিস্তানভিত্তিক জইশ-ই-মহম্মদ সদস্য উমর বিন খত্তাব পরিচালিত আরেকটি গোপন গ্রুপে। এই গ্রুপগুলো থেকেই মূলত অভিযুক্তদের র্যাপডিকালাইজেশন বা চরমপন্থায় উদ্বুদ্ধ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়।


টেলিগ্রাম গ্রুপ থেকেই যোগাযোগের সূত্রপাত
তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, তদন্তের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা ডা. উমর নবি এবং ইমাম ইরফান আহমদ ওয়াগায় প্রথম পরিচিত হন এই গ্রুপগুলোর একটিতে। শুরুতে তাদের আলাপচারিতা “কাশ্মীরের আজাদি” ও “কাশ্মীরিদের দমননীতি” নিয়ে সীমাবদ্ধ থাকলেও পরে আলোচনার বিষয় ঘুরে যায় “গ্লোবাল জিহাদ” ও “প্রতিশোধ”-এর মতো বিস্তৃত আদর্শিক প্রভাবের দিকে।


তদন্তকারীদের ধারণা, পাকিস্তানভিত্তিক হ্যান্ডলাররা এই গ্রুপের কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে বিদেশে সাক্ষাৎ করেছিলেন। বিশেষ করে এক তুরস্ক সফর ছিল এই মডিউলের গঠন প্রক্রিয়ার মোড় ঘোরানো মুহূর্ত। সেই সফর থেকে ফেরার পরই দলটি সংগঠিতভাবে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে কার্যক্রম বাড়াতে শুরু করে।


ফেরার পর ডা. মুজাম্মিল আহমেদ গনাই ফারিদাবাদের আল-ফালাহ মেডিকেল কলেজে যোগ দেন, আর ডা. আদিল নিয়োগ পান সাহারানপুরে। তদন্তে জানা গেছে, দলের অন্যান্য সদস্যদেরও দেশের বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল—নিয়োগ, যোগাযোগ ও লজিস্টিক্স পরিচালনার জন্য। এখন তদন্ত সংস্থাগুলো সেই সকল ব্যক্তির পরিচয় শনাক্তে কাজ করছে, যারা এই চক্রের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিল।


ডা. উমর নবি, ডা. মুজাম্মিল ও ডা. শাহিন শাহিদ—এই তিনজন ছিলেন ৯ থেকে ১০ সদস্যের এক সন্ত্রাসী লজিস্টিক্স নেটওয়ার্কের অংশ, যার মধ্যে প্রায় ৫ থেকে ৬ জনই চিকিৎসক। এই শিক্ষিত সদস্যরা নিজেদের পেশাগত পরিচয় ব্যবহার করে সন্দেহ এড়িয়ে অস্ত্র ও বিস্ফোরক সংগ্রহ, বোমা তৈরির উপাদান জোগাড় এবং অভিযানের সমন্বয় করতেন।


তদন্তকারীদের মতে, চিকিৎসক হিসেবে তাদের সহজ চলাচল, হাসপাতাল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রবেশাধিকার, এবং যোগাযোগের নেটওয়ার্ককে তারা সন্ত্রাসী কাজের আড়াল হিসেবে ব্যবহার করতেন।


প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণে নজর যোগাযোগের নেটওয়ার্কে। একই সঙ্গে প্রযুক্তিগত তদন্তও জোরদার করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ এখন লালকেল্লা বিস্ফোরণ-সংক্রান্ত সমস্ত যোগাযোগ বিশ্লেষণ করছে। বিস্ফোরণের দিন বিকেল ৩টা থেকে ৬টা ৩০ মিনিটের মধ্যে কে বা কার সঙ্গে ডা. উমর যোগাযোগ করেছিলেন, তা জানতে ওই এলাকার মোবাইল টাওয়ার ডেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।


তদন্তে আরও জানা গেছে, বিস্ফোরণে ব্যবহৃত গাড়িটি ডা. উমর নিজেই চালাচ্ছিলেন এবং বিস্ফোরণের আগে তিনি একাধিকবার ফোনে কারও সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। সেসব কল রেকর্ড এখন ফরেনসিক বিশ্লেষণের আওতায় আনা হয়েছে।


পাকিস্তানি সংযোগে জেম হ্যান্ডলারদের ভূমিকা স্পষ্ট
সূত্র বলছে, টেলিগ্রাম গ্রুপ “উমর বিন খত্তাব”-এর মাধ্যমে JeM-এর পাকিস্তানভিত্তিক হ্যান্ডলাররা ভারতে সক্রিয় সমর্থক ও শিক্ষিত তরুণদের প্রভাবিত করছিলেন। তাদের লক্ষ্য ছিল—‘বুদ্ধিজীবী ও পেশাজীবী সমাজের’ মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদের নতুন মুখ গড়ে তোলা।


তদন্ত সংস্থাগুলোর মতে, এই ডাক্তারদের মডিউল JeM-এর “হোয়াইট-কলার জিহাদ”-এর অংশ, যেখানে অস্ত্রের চেয়ে আদর্শ ও সংগঠনের নেটওয়ার্ক ব্যবহারের ওপর বেশি জোর দেওয়া হয়।
এনআইএ ইতিমধ্যেই তদন্তের দায়িত্ব হাতে নিয়েছে। তদন্তকারীরা এখন দেশের বিভিন্ন শহরে এই মডিউলের ছায়া খুঁজছে, বিশেষ করে ফারিদাবাদ, সাহারানপুর, লখনউ ও সোপিয়ানে।