আজকাল ওয়েবডেস্ক: দেশজুড়ে ইন্ডিগোর বিমান পরিষেবা ভেঙে পড়ায় ক্ষোভে ফেটে পড়েছে সিপিআই(এম)। রবিবার দলের সাধারণ সম্পাদক এম.এ. বেবি অভিযোগ করেন, ইন্ডিগো ইচ্ছাকৃতভাবে পরিষেবা বিঘ্নিত করেছে এবং এই ঘটনার পেছনে বেসরকারি বিমান সংস্থা ও ডিজিসিএ-র (DGCA) মধ্যে “সম্ভাব্য যোগসাজশ” থাকতে পারে।
এক্স-এ দেওয়া পোস্টে তিনি লেখেন—“ঘটনার ধারা দেখে স্পষ্ট, নিরাপত্তা সংক্রান্ত সংশোধিত নিয়ম কার্যকর করা আটকে রাখতে এবং যাত্রী অসুবিধাকে হাতিয়ার করে মুনাফা বাড়ানোর জন্য এই কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিক্রিয়া দেরিতে এসেছে এবং তা অত্যন্ত দুর্বল।”
বেবির দাবি, যাত্রীদের পুরো টিকিট মূল্য ফেরত দিতে হবে এবং ক্ষতিপূরণও দেওয়া উচিত। একইসঙ্গে তিনি বলেন, বিমান শ্রমিকদের অধিকারও এই পরিস্থিতিতে লঙ্ঘিত হয়েছে। তিনি চান, সমগ্র ঘটনার তদন্ত করতে যৌথ সংসদীয় কমিটি বা বিচার কমিশন গঠন করা হোক।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, এয়ার ইন্ডিয়া বেসরকারিকরণের পর দেশের বিমান পরিবহণ কার্যত দু’টি বেসরকারি সংস্থার নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে—এভাবে “সরকার কর্পোরেট স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে যাত্রী ও শ্রমিকদের স্বার্থ ত্যাগ করেছে।”
ইন্ডিগোর বিমান বাতিলের জেরে গত তিন দিন ধরে দেশের বিভিন্ন বিমানবন্দরে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে। শুক্রবার একদিনেই বাতিল হয়েছিল ১,০০০-র বেশি ফ্লাইট। রবিবারও পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। নির্ধারিত ২,৩০০টি ফ্লাইটের মধ্যে ইন্ডিগো চালাতে পেরেছে মাত্র ১,৬৫০টি; বাকিগুলি বাতিল।
সরকার জানিয়েছে, এতদিনে যাত্রীদের প্রায় ৬১০ কোটি টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে এবং যাত্রীদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া প্রায় ৩,০০০ ব্যাগ পুনরায় পাঠানো হয়েছে। কেন্দ্রের নির্দেশ, বাতিল টিকিটের সমস্ত রিফান্ড রবিবার রাতের মধ্যেই শেষ করতে হবে এবং আগামী দু’দিনের মধ্যে হারানো লাগেজ ফিরিয়ে দিতে হবে।
অপরদিকে বিরোধীরা বলছে, এই বিপর্যয় শুধু বেসরকারি সংস্থার ব্যর্থতা নয়—এটি নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার উদাসীনতা এবং সরকারের কর্পোরেট-অনুকূল নীতির ফল। রাষ্ট্রীয় নীতির ব্যর্থতা না কি ইচ্ছাকৃত কর্পোরেট খেলা—এখন নজর থাকবে তদন্ত আদৌ হয় কি না।
এদিকে, দেশের বিমান পরিবহনে নজিরবিহীন বিশৃঙ্খলা চলার সপ্তম দিনেও ইন্ডিগোর পরিষেবা স্বাভাবিক হয়নি। সোমবারও দেশের বিভিন্ন বিমানবন্দরে ফ্লাইট বিলম্ব ও বাতিল হচ্ছে। দিল্লি বিমানবন্দর যাত্রীদের সতর্ক করে জানিয়েছে, সংস্থার পরিষেবা আরও কিছুদিন ব্যাহত থাকতে পারে।
রবিবার ইন্ডিগো ৬৫০টিরও বেশি বিমান বাতিল করেছে, যদিও দু’দিন আগের তুলনায় এ সংখ্যা কিছুটা কম। সংস্থা জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত যাত্রীদের ৬১০ কোটি টাকার বেশি ফেরত দেওয়া হয়েছে। কোম্পানির দাবি, পাইলটদের বিশ্রাম সংক্রান্ত নতুন সরকারি নিয়ম (FDTL) কার্যকর হওয়ায় পাইলট সংকট তৈরি হয়, যার জেরেই ফ্লাইট বাতিলের মাত্রা বেড়ে যায়। সংকট নিয়ন্ত্রণে না আসায় সরকার শেষ পর্যন্ত নিয়ম স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়।
ফ্লাইট বাতিলের জন্য দায় নির্ধারণ করতে DGCA ইন্ডিগোর সিইও পিটার এলবার্স এবং অ্যাকাউন্টেবল ম্যানেজার ইসিদ্রো পোরকেরাসকে শো-কজ নোটিশ দিয়েছে। তাঁদের সোমবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত অতিরিক্ত সময় দেওয়া হয়েছে জবাব দেওয়ার জন্য। নাগরিক বিমান চলাচলমন্ত্রী রাম মোহন নাইডু জানিয়েছেন, এই পরিস্থিতির দায় ইন্ডিগোকেই নিতে হবে, কারণ নিয়ম পরিবর্তনের ঘোষণা এক বছর আগেই করা হয়েছিল।
সরকার ইতিমধ্যে ভাড়া নিয়ন্ত্রণে নির্দেশ দিয়েছে, দ্রুত রিফান্ড নিশ্চিত করতে বলেছে এবং পুরো ঘটনার তদন্তে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করেছে। শনিবার পর্যন্ত যাত্রীদের হারানো ৩,০০০-এর বেশি লাগেজ ফেরত দেওয়া হয়েছে বলে সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। ইন্ডিগো জানিয়েছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চলছে এবং ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে পরিষেবা স্বাভাবিক হতে পারে।
