আজকাল ওয়েবডেস্ক: উত্তরপ্রদেশের সুলতানপুর জেলার সম্রাটপুরে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ওমপ্রকাশকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। অভিযোগ, তিনি কানওয়ার যাত্রা নিয়ে ‘আপত্তিকর মন্তব্য’ করেছেন। অভিযুক্ত শিক্ষক একজন দলিত। সম্প্রতি ছাত্রছাত্রী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের বিক্ষোভে এই ঘটনা চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। জানা গিয়েছে, ১৭ জুলাই, এক ছাত্রী তাঁকে জানায় যে সে কিছু আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করতে চায়, যারা কানওয়ার যাত্রায় অংশ নিচ্ছেন। শিক্ষক সেই অনুরোধে সাড়া না দিয়ে, অভিযোগ অনুযায়ী, যাত্রা এবং কানওয়ারিয়াদের নিয়ে কিছু ‘আপত্তিকর’ মন্তব্য করেন। পরে, ছাত্রীর কথায় উত্তেজিত হয়ে স্থানীয় মানুষজন ২২ জুলাই বিদ্যালয়ে জমায়েত হন এবং প্রতিবাদে ফেটে পড়েন। শিক্ষক ওমপ্রকাশ স্কুল ভবন থেকে বেরিয়ে এসে জনসমক্ষে নিজের ‘ভুল’ স্বীকার করেন বলে স্থানীয়রা দাবি করেছেন।

জেলা শিক্ষা দপ্তরের তরফে জানানো হয়েছে, প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে শিক্ষককে বরখাস্ত করা হয়েছে এবং পুরো ঘটনা নিয়ে বিস্তারিত তদন্ত চলছে। জেলা শিক্ষা কর্তৃপক্ষের মতে, বিদ্যালয়ে শৃঙ্খলা রক্ষা এবং শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখার জন্যই এই পদক্ষেপ।এই ঘটনাকে ঘিরে রাজ্যের রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলে বিতর্ক শুরু হয়েছে। একাধিক সংগঠন ও বিশিষ্টজনেরা প্রশ্ন তুলেছেন, একজন দলিত শিক্ষককে এইভাবে জনচাপে বরখাস্ত করার ঘটনা আদৌ যুক্তিসংগত কি না। শিক্ষকদের একটি অংশ বলছেন, বিষয়টি ‘তত গুরুতর নয়’, বরং এটি ‘সামাজিক ও রাজনৈতিক চাপে নেওয়া সিদ্ধান্ত’। এই ঘটনাটি এমন এক সময়ে ঘটল, যখন উত্তরপ্রদেশ জুড়ে কানওয়ার যাত্রাকে কেন্দ্র করে একাধিক হিংসাত্মক ঘটনা ঘটেছে। কিছুদিন আগেই মেরঠে এক কনস্টেবলকে

আরও পড়ুন: মজা করতে গিয়ে কেলেঙ্কারি! বান্ধবীর প্রেগন্যান্সি কিট ব্যবহার করতে গিয়ে ক্যান্সার ধরা পড়ল প্রেমিকের!

মারধর করেন একদল কানওয়ারিয়া, কারণ তিনি ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে বাধা দেন। গাজিয়াবাদ, বরেলি ও সহারানপুরেও কানওয়ার যাত্রীদের সঙ্গে পুলিশের ধাক্কাধাক্কি ও রাস্তায় ভাঙচুরের ঘটনা সামনে এসেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ধর্মীয় আবেগকে অজুহাত করে আইনশৃঙ্খলা ভাঙার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। সমালোচকরা বলছেন, প্রশাসন যেভাবে এই ধরনের ধর্মীয় উত্তেজনার সামনে নতিস্বীকার করছে, তা একপ্রকার নীরব সমর্থন দিচ্ছে একটি গোষ্ঠীর বাড়বাড়ন্তকে। এই পরিস্থিতিতে একজন দলিত শিক্ষকের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হলেও, হিংসাত্মক কানওয়ারিয়া গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কার্যকর কোনও পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। সামগ্রিকভাবে এই ঘটনা উত্তরপ্রদেশে ধর্মীয় জনতা রাজনীতি এবং দলিত শিক্ষক সমাজের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলছে। শিক্ষক ওমপ্রকাশের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত বরখাস্ত থাকা অব্যাহত থাকবে বলে জানা গিয়েছে। তবে প্রাথমিক শিক্ষা পরিসরে জাতপাত ও ধর্মীয় উত্তেজনার এই প্রবেশ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছেন বিশ্লেষকরা।