আজকাল ওয়েবডেস্ক: উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশীর ধরালীর মতো বিপর্যয় জম্মু-কাশ্মীরেও। উপত্যকার কিশ্তওয়াড় জেলায় মেঘভাঙা বৃষ্টির ফলে হড়পা বানের জেরে অনেক মৃত্যুর আশঙ্কা। বৃহস্পতিবার দুপুরে চিসোতি জেলার মচৈল মাতা মন্দিরের যাত্রাপথে হড়পা বান নেমে আসে। এই বিপর্যয়ে এখনও পর্যন্ত ৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে আশঙ্কা করছে প্রশাসন। মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহ কিশ্তওয়াড়ের ডেপুটি কমিশনার পঙ্কজ শর্মার সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়েছেন। পঙ্কজ জানিয়েছেন, চাসোতি গ্রামে হড়পা বান নেমে এসেছে। এই গ্রাম থেকে ‘মচৈল মাতা যাত্রা’ শুরু হয়। ঘটনার পর পরই উদ্ধারকারী দল ওই গ্রামে পৌঁছেছে। উদ্ধারকাজ শুরু হয়েছে। 

জিতেন্দ্র এক্স হ্যান্ডলে লিখেছেন,“চাসোতি এলাকায় বিশাল মেঘ ফেটে পড়ার ঘটনা ঘটেছে, যার ফলে যথেষ্ট হতাহতের সম্ভাবনা রয়েছে। প্রশাসন তাৎক্ষণিকভাবে তৎপর হয়েছে, উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে রওনা হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি মূল্যায়ন এবং প্রয়োজনীয় উদ্ধার ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আমার অফিস নিয়মিত আপডেট পাচ্ছে, সম্ভাব্য সকল সহায়তা প্রদান করা হবে।”

জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ বলেছেন যে তিনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সাথে কথা বলেছেন এবং পরিস্থিতি সম্পর্কে তাকে অবহিত করেছেন। এক্স-এ ওমর লিখেছেন, “আমি জম্মুর কিশ্তওয়াড় অঞ্চলের পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করার জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। খবরটি ভয়াবহ এবং নির্ভুল, মেঘভাঙা বৃষ্টির কবলে পড়া এলাকা থেকে খবর পেতে দেরি হচ্ছে। উদ্ধারকাজ পরিচালনার জন্য জম্মু ও কাশ্মীরের ভিতর এবং বাইরে থেকে সম্ভাব্য সকল সম্পদ সংগ্রহ করা হচ্ছে। আমি কোনও চ্যানেল বা সংবাদ সংস্থার সঙ্গে কথা বলব না।”

আরও পড়ুন: ফের বিপর্যয় হিমাচলে! আচমকা মেঘ ভাঙা বৃষ্টি, বন্যায় বন্ধ তিনশো'র বেশি রাস্তা, দু্র্যোগে স্থির জনজীবন

এই ঘটনার প্রতিক্রিয়া জানিয়ে জম্মু ও কাশ্মীরের লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিনহা বলেছেন যে তিনি উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম জোরদার করার জন্য বেসামরিক, পুলিশ, সেনাবাহিনী, এনডিআরএফ এবং এসডিআরএফ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন।

দেশে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই। যার ফলে পাহাড়ি এলাকাগুলি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, বিশেষ করে উত্তরাখণ্ড। মেঘভাঙা বৃষ্টি, হড়পা বান, বন্যা এবং ভূমিধসের ফলে প্রাণহানি ও সম্পদের উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়েছে।

?ref_src=twsrc%5Etfw">August 14, 2025

৫ আগস্ট হারসিলের কাছে খীর গাদ এলাকার ধরলী গ্রামে একটি বিশাল কাদা ধসের ফলে জনবসতিগুলির মধ্য দিয়ে হঠাৎ ধ্বংসস্তূপ এবং জলের স্রোত বয়ে যায়। বেশ কয়েকটি বাড়ি ভেসে যাওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে। মৃত্যুও হয়েছে বেশ কয়েকজনের। উত্তরকাশী জেলার ধরলী এবং হর্ষিলে মেঘভাঙা বৃষ্টি এবং হড়পা বানের ফলে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের পর যন্ত্রপাতি এবং ত্রাণ সামগ্রী সহজে পরিবহনের সুবিধার্থে উত্তরকাশী থেকে হর্ষিলের সংযোগকারী সেতুটি পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে।

ফের হিমাচল প্রদেশে ভারী বর্ষণে বিপর্যয় নেমে এসেছে। বুধবার থেকে শুরু হয়েছে বৃষ্টিপাত। প্রবল বৃষ্টিপাত ও মেঘভাঙা বৃষ্টির কারণে সিমলা এবং লাহৌল ও স্পিতি জেলার একাধিক রাস্তা বন্ধ ইতিমধ্যেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। পাশপাশি বেশ কয়েকটি সেতু ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরো রাজ্য জুড়ে অন্তত ৩২৫টি রাস্তা, যার মধ্যে দু’টি জাতীয় সড়ক রয়েছে, তা বন্ধ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে মান্ডি জেলায় ১৭৯টি এবং কুল্লু জেলায় ৭১টি রাস্তা অচল হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে, লাহৌল ও স্পিতি জেলার মায়াদ উপত্যকায় মেঘভাঙা বৃষ্টির ফলে হঠাৎ করে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। কারপাত, চাংগুট এবং উদগোস নালার মতো এলাকায় দু’টি সেতু ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। ঘটনার জেরে কারপাত গ্রামে পরিস্থিতি সংকটজনক হয়ে উঠেছে। হিমাচল প্রদেশের এই বিপর্যয়ে কোনও প্রাণহানি ঘটেনি।

বুধবার রাত থেকে কান্দাঘাটে ১০০ মিমি, জাটন ব্যারেজে ৮৭ মিমি, উনা ৮৫.৪ মিমি, সোলান ৮১.৪ মিমি, ওলিন্দা ৭৬ মিমি, শিলারু ৭৩ মিমি, সিমলা ৬৯ মিমি, কুফরি ৬৬ মিমি, জুব্বারহাট্টি ৬৫.২ মিমি, কাসৌলিতে ৬২ মিমি, কোঠীতে ৬১.২ মিমি, মুরাই দেবী ৫১.৮ মিমি এবং ধরমপুর ৫০.২ মিমি বৃষ্টিপাত হয়েছে। স্থানীয় আবহাওয়া অফিস 'হলুদ' সতর্কতা জারি করেছে, ২০ আগস্ট পর্যন্ত রাজ্যের বিচ্ছিন্ন স্থানে ভারী বৃষ্টিপাতের সতর্কতা জারি করেছে। বুধবার সন্ধ্যায় সিমলা, কুল্লু, কিন্নৌর এবং লাহুল ও স্পিতি জেলার বেশ কয়েকটি জায়গায় মেঘভাঙা বৃষ্টি এবং হড়পা বান দেখা দিয়েছে।