আজকাল ওয়েবডেস্ক: ধর্মীয় কার্যকলাপের আড়ালে চলত অনৈতিক কাজকর্ম। তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে ধর্মান্তরিত করার অভিযোগ জমা পড়েছিল পুলিশের কাছে। এরপরই সক্রিয় হয় উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। ‘ছাঙ্গুর বাবা’ ওরফে ‘পীর বাবার’ প্রাসাদোপম বাড়িটি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। তদন্ত এগোতেই জানা গিয়েছে, ‘ছাঙ্গুর বাবা’ জোর করে এবং প্রলোভনের মাধ্যমে ১,৫০০ জনেরও বেশি হিন্দু মহিলা এবং হাজার হাজার অমুসলিমকে ইসলামে ধর্মান্তরিত করেছিলেন। পুলিশ সূত্রে এই তথ্য জানতে পেরেছে সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে।
পুলিশের মতে, 'ছাঙ্গুর বাবা' মূলত উত্তরপ্রদেশের বলরামপুর জেলার মাধপুরের বাসিন্দা। তিনি পরিকল্পিতভাবে দরিদ্র, বিধবা এবং অসহায় মহিলাদের নিশানা করতেন। নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের জন্য তিনি বিভিন্ন প্রলোভন এবং হুমকি দিতেন বলেও অভিযোগ। শুধু ভারতের বিঙিন্ন রাজ্য়েই নয়, আন্তর্জাতিকভাবেও গভীর যোগাযোগ ছিল তাঁর। দুবাইতে এই 'বাবা'র উপস্থিতি ছিল।
বিশ্বাসযোগ্য গোয়েন্দা তথ্য অনুসারে, বড় ধর্মান্তরিতকরণ চক্রের ইঙ্গিত পাওয়ার পর স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ) প্রথমে 'ছাঙ্গুর বাবা'র কার্যকলাপের তদন্ত শুরু করে। তদন্তের পর, মামলাটি এটিএস-এর কাছে হস্তান্তর করা হয়, যারা এখন অভিযুক্ত সিন্ডিকেটের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হওয়া ব্যক্তিদের সনাক্ত করছে। পুলিশ আধিকারিকরা জানিয়েছেন যে, অনেক ব্যক্তি এখনও স্বঘোষিত এই ধর্মগুরুর বিরুদ্ধে সামনে আসতে বা সাক্ষ্য দিতে অনিচ্ছুক, বেশিরভাগই ভয় পাচ্ছেন।
এটিএসের সূত্র দাবি করেছে যে, 'ছাঙ্গুর বাবা' মহারাষ্ট্রে একটি বিস্তৃত নেটওয়ার্ক তৈরি করেছিলেন, মুম্বইয়ের দরগাহগুলির চারপাশে কাজ করতেন। সেখানে তিনি তার প্রচারের জন্য আংটি বিক্রি করতেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, তিনি উপসাগরীয় বিভিন্ন সংস্থা সহায়তায় আন্তর্জাতিক সিন্ডিকেটের অংশ হয়ে ওঠেন। তদন্তকারীরা এমন অভিযোগও খতিয়ে দেখছেন যে, তাঁর কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এনআরই-এনআরও অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে বিদেশ থেকে কোটি কোটি টাকা পাচার করা হয়েছিল।
চাঁদ আউলিয়া দরগায় বার্ষিক ওরস অনুষ্ঠানের সময়, 'ছাঙ্গুর বাবাট বিদেশি অতিথিদের আপ্য়ায়ণ করতেন বলে জানা গিয়েছে। আরও বেশি লোককে ধর্মান্তরিত করার জন্য প্রলুব্ধ করা হয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় জনসংখ্যার বিন্যাসকে বদলে দিতে তিনি বলরামপুর এবং নিকটবর্তী জেলাগুলিতে ইসলামিক দাওয়াহ কেন্দ্র এবং মাদ্রাসা স্থাপনের পরিকল্পনা করেছিলেন বলেও খবর।
পুলিশ কর্তারা দেখেছেন যে, 'ছাঙ্গুর বাবা'র প্রভাব স্থানীয় প্রশাসন এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার উপর বিস্তৃত ছিল। এসটিএফের একটি রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে যে, তিনি পুলিশ এবং স্থানীয় গোয়েন্দাদের ঘুষ দিয়েছিলেন। অন্যায়ের দেখে চুপ থাকার জন্য মিথ্যা মামলা সাজাতেন।
'ছাঙ্গুর বাবা'র সঙ্গে তাঁর সহযোগী নীতু ওরফে নাসরিনকেও গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁকে সাত দিনের এটিএস হেফাজতে পাঠানো হয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, গোয়েন্দা ব্যুরো (আইবি) এবং জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ) বিদেশি তহবিলের হদিশ খুঁজে বের করতে এবং আরও যোগসূত্র খুঁজেতে এই দু'জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য প্রস্তুত। নবীন ওরফে জামালউদ্দিন এবং 'ছাঙ্গুর বাবা'র ছেলে মেহবুবকে ইতিমধ্যেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তারা লখনউ জেলা কারাগারে রয়েছেন।
তদন্তকারীরা আরও জানতে পেরেছেন যে নবীন দুবাই থেকে প্রাপ্ত তহবিল দিয়ে বলরামপুরে জমি কিনেছিলেন। সুইস ব্যাঙ্কে নবীনের অ্যাকাউন্ট রয়েছে। এটিএস এখন ধর্মান্তর কার্যকলাপ, আন্তর্জাতিক লেনদেন এবং 'ছাঙ্গুর বাবা'র বিস্তৃত নেটওয়ার্কের বিবরণের সঙ্গে সম্পর্কিত রেকর্ড উদ্ধারে 'ছাঙ্গুর বাবা'র মোবাইল ফোন এবং ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলি স্ক্যান করছে।
এদিকে, উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ 'ছাঙ্গুর বাবা'র কার্যকলাপকে কেবল "অসামাজিক" নয় বরং "দেশবিরোধী" বলে অভিহিত করেছেন। উত্তর প্রদেশ সরকার বুলডোজার ব্যবহার করে বলরামপুরে তাঁর বাড়ি ভেঙে ফেলেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, 'ছাঙ্গুর বাবা' দুবাইতে তার সহযোগী নবীন এবং নীতুর কন্যা - এক নাবালিকা মেয়ের ধর্মান্তরের ব্যবস্থাও করেছিলেন, তবুও সরকারি নথিতে হিন্দু পরিচয় ফুটে উঠছে। আইনি তদন্ত এড়াতেই সম্ভবত এই পদক্ষেপ।
