আজকাল ওয়েবডেস্ক: ছত্তীসগঢ়ে পুলিশ ও ব্যবসায়ী মহলে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি করেছে রাইপুরের নামজাদা হোটেল ব্যবসায়ী দীপক টান্ডন ও দান্তেওয়াড়ার ডিএসপি কল্পনা ভার্মার মধ্যে। উভয় পক্ষের ভিযোগ এবং পাল্টা অভিযোগ- ঘুষ, ব্ল্যাকমেল, প্রতারণা, মানসিক প্রতারণা ও আর্থিক লেনদেন ঘিরে শুরু হওয়া এই বিতর্ক ক্রমশ এক জটিল কেলেঙ্কারির রূপ নিয়েছে।

দীপক টান্ডনের অভিযোগ, ২০২১ সালে ডিএসপি কল্পনা ভার্মার সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয় এবং ধীরে ধীরে তারা ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। টান্ডনের দাবি, বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিগত চার বছর ধরে তাঁকে মানসিকভাবে জড়িয়ে রেখে কল্পনা ভার্মা তাঁর কাছ থেকে নগদ প্রায় ২ কোটি টাকা, ১২ লক্ষ টাকার একটি হীরের আংটি, ৫ লক্ষ টাকারও বেশি মূল্যের সোনার গয়না, ১ লক্ষ টাকার ব্রেসলেট এবং একটি ইনোভা ক্রিস্টা গাড়ি আদায় করেন।

 টান্ডনের আরও বিস্ফোরক অভিযোগ রয়েছে এছাড়াও। রাইপুরের ভিআইপি রোডে অবস্থিত তাঁর একটি হোটেল কল্পনা ভার্মার ভাইয়ের নামে লিখে দিতে তাঁকে চাপ দেওয়া হয় বলে অভিযোগ তার। পরবর্তীতে ওই সম্পত্তি প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা খরচ করে ডিএসপি কল্পনা ভার্মার নামেই লিখিয়ে নেওয়া হয় বলে তাঁর দাবি।

দীপক টান্ডনের অভিযোগ অনুযায়ী, তিনি আর্থিক দাবি অনুযায়ী টাকা দিয়ে যেতে  অস্বীকার করলে ডিএসপি তাঁকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। এই সংক্রান্ত প্রমাণ হিসেবে তিনি হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট, সিসিটিভি ফুটেজ ও অন্যান্য ডিজিটাল নথি পুলিশের কাছে জমা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। যদিও পুলিশ জানিয়েছে, উভয় পক্ষের বক্তব্য শোনা হলেও এখনও পর্যন্ত কোনও এফআইআর দায়ের হয়নি। পুলিশের বক্তব্য, বিষয়টি বর্তমানে “আর্থিক বিরোধ সংক্রান্ত তদন্তাধীন মামলা” হিসেবে দেখা হচ্ছে।

এই ঘটনার জট আরও বাড়ে যখন জানা যায়, দুই মাস আগে ডিএসপি কল্পনা ভার্মার বাবা হেমন্ত ভার্মা পাণ্ডরি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে বলা হয়, আগের একটি ব্যবসায়িক লেনদেন সংক্রান্ত বকেয়া টাকার বিষয়ে দীপক টান্ডনের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে এবং অগ্রিম  হিসেবে দেওয়া একটি চেক, যা কিনা টান্ডনের স্ত্রী বরখা টান্ডনের নামে, তা বাউন্স করেছে। ওই চেক বাউন্স মামলাটি বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন এবং বরখা টান্ডনকে নিয়মিত হাজিরা দিতে হচ্ছে।

দীপক টান্ডনের অভিযোগ ভাইরাল হওয়ার পর মুখ খোলেন ডিএসপি কল্পনা ভার্মা। একটি জাতীয় সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি সমস্ত অভিযোগ সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করেন। তাঁর দাবি, এগুলি “মিথ্যা, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও মানহানিকর।” কল্পনা ভার্মার বক্তব্য, তাঁর বাবার সঙ্গে দীপক টান্ডনের ব্যবসায়িক বিবাদের সঙ্গে তাঁকে জড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।

ডিএসপি আরও দাবি করেন, সোশ্যাল মিডিয়া থেকে তাঁর ছবি নিয়ে ভুয়ো চ্যাট তৈরি করে তা ভাইরাল করা হয়েছে, যা সরাসরি ফৌজদারি অপরাধের শামিল। গাড়ি সংক্রান্ত অভিযোগ প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ইনোভা ক্রিস্টা গাড়িটি তিনি আইন মেনেই দীপক টান্ডনের স্ত্রী বরখা টান্ডনের কাছ থেকে কিনেছেন এবং সমস্ত নথি ও হস্তান্তর প্রক্রিয়া  বৈধভাবেই করা হয়েছে। তিনি টান্ডনকে তাঁর অভিযোগের পক্ষে উপযুক্ত নথি দেখাবার চ্যালেঞ্জও ছুড়ে দেন।

অভিযোগের সময় নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কল্পনা ভার্মা। তাঁর বক্তব্য, চার বছর ধরে যদি এমন কিছু ঘটে থাকে, তবে এতদিন কোনও অভিযোগ করা হয়নি কেন? এমনকি চেক বাউন্স মামলায় জড়িত থাকার পরেও দীপক টান্ডনের স্ত্রী কেন আগে কোনও অভিযোগ জানাননি সেই প্রশ্নও তুলেছেন তিনি। তাঁর দাবি, আইনি দায় এড়াতেই এই পুরো গল্প সাজানো হয়েছে।

একটি কড়া বিবৃতিতে ডিএসপি কল্পনা ভার্মা বলেন, “একটি আর্থিক বিরোধের সঙ্গে আমার নাম জুড়ে দেওয়ার অর্থ আমার ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা। একজন মহিলা পুলিশ অফিসারের চরিত্র হনন কোনওভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।” তিনি মানহানির মামলা দায়ের করার কথা বলেন এবং দীপক ও বরখা টান্ডনের সমস্ত আর্থিক হিসাব পূর্ণাঙ্গ অডিট করার দাবিও তুলেছেন।

অন্যদিকে, দীপক টান্ডন তাঁর অবস্থানে অনড়। তাঁর দাবি, তিনি মানসিকভাবে প্রতারিত, আর্থিকভাবে শোষিত এবং পরে হুমকির শিকার হয়েছেন। এই মুহূর্তে ছত্তীসগঢ় পুলিশ ডিজিটাল প্রমাণ, ব্যাঙ্ক লেনদেন ও আগের  অভিযোগ খতিয়ে দেখছে। এখনও পর্যন্ত কোনও পক্ষের বিরুদ্ধেই এফআইআর দায়ের হয়নি। তদন্ত কোন দিকে মোড় নেয়, সেদিকেই তাকিয়ে রাজ্যের পুলিশ প্রশাসন ও সাধারণ মানুষ।