আজকাল ওয়েবডেস্ক: মঙ্গলবার সংসদে অপারেশন সিঁদুর নিয়ে আলোচনায় বড় ঘোষণা করলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তিনি জানিয়েছেন, এপ্রিল মাসে পহেলগাঁও হামলায় ২৬ জন পর্যটককে হত্যাকারী তিন পাকিস্তানি জঙ্গিকেকে ২৮ জুলাই ‘অপারেশন মহাদেব’-এ নিকেশ করা হয়েছে। তিনি সুলেমানকে মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং অন্য দু’জনের নাম আফগান ও জিবরান বলে জানিয়েছেন। এরা সবাই পাকিস্তানের নিষিদ্ধ গোষ্ঠী লস্কর-ই-তইবার শীর্ষ জঙ্গি ছিল বলেও জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি আরও জানিয়েছেন, সোমবার সামরিক অভিযানে নিহত জঙ্গিদের কাছ থেকে পহেলগাঁওয়ে নিরীহ বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা করার জন্য জঙ্গিরা যে অস্ত্র ব্যবহার করেছিল তাও উদ্ধার করা হয়েছে।

অমিত বলেন, “গতকালের অভিযানে পহেলগাঁও হামলায় জড়িত তিন জঙ্গি- সুলেমান, আফগান এবং জিবরান নিহত হয়েছে। যারা তাঁদের খাবার সরবরাহ করতেন তাঁদের আগেই আটক করা হয়েছিল। জঙ্গিদের মৃতদেহ শ্রীনগরে নিয়ে আসার পর আটক হওয়া ব্যক্তিরা ওই তিন জনকে শনাক্ত করেছেন।”

আরও পড়ুন: কোটি টাকার হিরে পেপারওয়েট হিসেবে ব্যবহার করেতেন এই ভারতীয় ব্যক্তি, কোথায় এখন সেই অমূল্য রতন?

তিনি সংসদে বলেন, “শুধু এটুকুতেই আমরা নিশ্চিত হতে পারিনি। আমরা ইতিমধ্যেই হামলাস্থলে পাওয়া বুলেটের খোলের ফরেন্সিক পরীক্ষা করেছি। ‘অপারেশন মহাদেব’-এ নিহত জঙ্গিদের কাছ থেকে বাজেয়াপ্ত করা বন্দুকগুলি আমরা রাতারাতি চণ্ডীগড়ের ল্যাবে নিয়ে গিয়েছিলাম। সেই খোলের সঙ্গে বন্দুকের গুলির মিল পাওয়া গিয়েছে। এর পরেই জঙ্গিদের পরিচয় নিয়ে আরও নিশ্চিত হয়েছি আমরা।”

শাহ জানিয়েছেন, জঙ্গিদের পাকিস্তানি পরিচয়ের প্রমাণ হিসেবে পাকিস্তানের ভোটার কার্ড এবং পাকিস্তানে তৈরি চকোলেট উদ্ধার হয়েছে তাঁদের কাছ থেকে। তিনি আরও জানান, তাঁদের কাছ থেকে পাওয়া বিদেশী অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে দু’টি একে-৪৭ ভেরিয়েন্ট এবং একটি আমেরিকান এম৪ কার্বাইন।

সূত্রের খবর, উদ্ধারগুলিতে অস্ত্রগুলিতে বেশ কয়েকটি দেশের ছাপ ছিল, যা স্পষ্টতই এই জঙ্গি নেটওয়ার্কের নেপথ্যে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত দেয়। আরও বিশদ বিবরণে জানানো হয়েছে, ফরেন্সিক পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে উদ্ধার হওয়া অস্ত্রগুলির একটি রোমানিয়ান মডেল ৯০ (একেএমএস) ৭.৬২ মিমি, একটি হাইব্রিড রাশিয়ান একম ৭.৬২ অ্যাসল্ট রাইফেল এবং একটি আমেরিকান এম৪ কমান্ডো।

রোমানিয়ান মডেল ৯০ হল একেএম রাইফেল বিশ্বের অনেক জঙ্গি সংগটন দ্বারা ব্যবহৃত হয়। হাইব্রিড রাশিয়ান একেএম ৭.৬২ অ্যাসল্ট রাইফেলটি কোনও অভিযানের সময় সুবিধা প্রদানের জন্য কাস্টমাইজ করা হয়েছে। জঙ্গিদের কাছ থেকে বাজেয়াপ্ত করা আমেরিকান এম৪ কমান্ডো (কোল্ট মডেল ৯৩৩, ৫.৫৬ মিমি, ১৯৯৫ ভ্যারিয়েন্ট) হল একটি ছোট ব্যারেলযুক্ত কার্বাইন যা সাধারণত ন্যাটো বাহিনী দ্বারা ব্যবহৃত হয়। সূত্র জানিয়েছে, এটি পূর্বে ভারতে সুপ্রশিক্ষিত জঙ্গিরা ব্যবহার করত।

আরও পড়ুন: অলীক স্বপ্ন দেখছে না কি! বছরে পাঁচ হাজার কেজি সোনা তৈরির দাবি করল মার্কিন সংস্থা, কিন্তু কীভাবে?

সূত্র জানিয়েছে, এই অস্ত্রগুলি দেখেই বোঝা যায় যে জঙ্গিরা একটি সংগঠিত গোষ্ঠীর অংশ ছিল এবং সীমান্তের ওপার থেকে তাঁদের কৌশলগত সমর্থন জোগানো হত। বিশেষ করে, জঙ্গিদের দ্বারা আমেরিকান এম৪ কমান্ডোর ব্যবহার এই সন্দেহকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে যে একটি সুসংগঠিত আন্তঃসীমান্ত সরবরাহ শৃঙ্খল সক্রিয়ভাবে জঙ্গি গোষ্ঠীগুলিকে অস্ত্র সরবরাহ করছে। এই অস্ত্রগুলি ভারতে কীভাবে প্রবেশ করল এবং কোন বিদেশী নেটওয়ার্কগুলি এই চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত ছিল তা নিয়ে এখন নিরাপত্তা সংস্থাগুলি পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করছে।

সোমবার, সকাল ১১টা নাগাদ সেনাবাহিনী, আধাসামরিক বাহিনী এবং পুলিশের একটি যৌথ দল হারওয়ানের মুলনার এলাকায় জঙ্গি কার্যকলাপ শনাক্ত করার পর জঙ্গিদের সঙ্গে যৌথ বাহিনীর সংঘর্ষ শুরু হয়। জম্মু ও কাশ্মীরের শ্রীনগরের উপকণ্ঠে হারওয়ানের কাছে জঙ্গলে লিদওয়াস এলাকায় জঙ্গিদের সঙ্গে তীব্র গুলি বিনিময়ের পরে তিনজন সশস্ত্র জঙ্গিকে নিকেশ করতে সক্ষম হয় বাহিনী।