আজকাল ওয়েবডেস্ক: সম্প্রতি বেঙ্গালুরুর এক যুবকের পোস্ট ঘিরে চরম বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। যুবক সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর এক অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন, যা অনেককেই হতবাক করে দিয়েছে। ২৬ বছর বয়সী ওই যুবক জানান, ১৬ আগস্ট রাত ১০টা ৩০ মিনিটে ইন্দিরানগরে পুলিশের একটি 'রুটিন ড্রাগ চেক'-এর সময় তাঁর ফোনের কিছু ব্যক্তিগত ছবি পুলিশ কর্মকর্তারা দেখে ফেলেন।
তিনি তাঁর অভিজ্ঞতা একটি জনপ্রিয় অনলাইন ফোরাম, রেডিট-এ 'কপস্ স্টপ্ড মি ফর এ 'ড্রাগ চেক' অ্যান্ড ওয়েন্ট থ্রূ প্রাইভেট ফটোস অফ মাই গার্লফ্রেন্ড' (“Cops stopped me for a ‘drug check’ and went through private photos of my girlfriend”) শিরোনামে পোস্ট করেন। সেখানে যুবক লেখেন, তিনি একজন বন্ধুর বাড়ি থেকে নিজের স্কুটারে করে বাড়ি ফিরছিলেন। তখন আচমকা একটি পুলিশ বাইক তাঁকে থামায় এবং তাঁদের দিকে লাইট ফ্ল্যাশ করে। পুলিশ জানায়, এলাকায় গাঁজার (weed) বিষয়ে কিছু রিপোর্ট রয়েছে, তাই তারা তদন্ত করছে।
যুবক তাঁর পোস্টে লেখেন, 'আমি সন্দেহজনক এমন কিছুই করিনি। একদম সাধারণভাবে ফিরছিলাম। পুলিশ কয়েকটা প্রশ্ন করায় আমি শান্তভাবে তাদের উত্তর দি।' এরপর পুলিশ তাঁর ফোন দেখতে চায়। তিনি জানান, 'আমি ঝামেলায় পড়তে চাইনি, তাই ফোন আনলক করে দিয়ে দিলাম।'
এরপর যা ঘটে, তা তাঁকে গভীরভাবে নাড়া দেয়। তিনি বলেন, প্রথমে পুলিশ তাঁর কন্ট্যাক্টস ঘাঁটল, তারপর গ্যালারি খুলতে বলল। 'এরপরই ব্যাপারটা খুব অস্বস্তিকর হয়ে ওঠে,' তিনি লিখেছেন।
যুবক জানান, তাঁর গ্যালারিতে তাঁর প্রেমিকার অনেক ব্যক্তিগত, অত্যন্ত একান্ত কিছু ছবি ছিল, যা তাঁদের প্রেমের সম্পর্কের জন্য সংরক্ষিত ছিল। তিনি লেখেন, 'এগুলো কোনও অবৈধ ছবি নয়, তবে একান্ত এবং ব্যক্তিগত। পুলিশ কর্মকর্তারা একের পর এক ছবি খুব মনোযোগ দিয়ে দেখতে লাগলেন।'
তিনি আরও উল্লেখ করেন, এক পুলিশ অপর পুলিশকে কনুই দিয়ে দেখিয়ে কিছু বলছিলেন এবং অশ্লীলভাবে হাসছিলেন। 'আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলাম, যেন কিছুই বুঝতে পারছি না। মনে হচ্ছিল কেউ আমার গোপনীয়তা ছিঁড়ে ফেলছে আর আমি দাঁড়িয়ে কিছু করতে পারছি না।'
কয়েক মিনিট পরে পুলিশ তাঁর ফোন ফেরত দেয়। এরপর অভিযুক্ত কর্মীরা একটি মন্তব্য করে যা পরিস্থিতি আরও অস্বস্তিকর করে তোলে। পুলিশ বলে, 'এই জিনিসগুলো নিজের মধ্যেই রাখো ভাই, এগুলো পাবলিক দেখার জন্য না,' এবং একরকম হাসতে হাসতেই বলে, 'গাঁজা থেকে দূরে থাকো।'
ওই যুবক তাঁর পোস্টে লেখেন, 'আমি জানি আমি ফোন দিয়েছিলাম, কিন্তু মনে হচ্ছিল ,ফোন দেওয়া ছাড়া অন্য কোনও বিকল্প ছিল না। পুরো ঘটনা চরম হেনস্থার মতো মনে হচ্ছিল, আইন রক্ষা নয়। এটা কি আদৌ আইনসঙ্গত? পুলিশ কি এমন করতে পারে?' নেটিজেনদের উদ্দেশে প্রশ্ন ছুঁড়ে তাঁর পোস্ট শেষ করেন।
পোস্টটি ইতিমধ্যেই নানা প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে সোশ্যাল মিডিয়াজুড়ে। কেউ কেউ বলেন, 'এমন ব্যক্তিগত ছবি গ্যালারিতে না রেখে প্রাইভেট ফোল্ডারে রাখা উচিৎ ছিল।' আবার কেউ বলেন, 'তুমি হয়তো পুলিশকে ফোন দিয়েছ, কিন্তু তোমার তাঁদের ব্যক্তিগত গ্যালারি দেখতে বারণ করা উচিৎ ছিল'।
আরও কিছু মন্তব্যে বলা হয়, ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতিতে কীভাবে পুলিশের পরিচয় জানতে চাওয়া যায় বা ১১২ নম্বরে কল করার অধিকার রয়েছে কিনা, প্রশ্ন ওঠে এসব নিয়েও। কেউ কেউ আবার বলেন, 'এই ঘটনার কথা প্রেমিকাকে না বলাই ভালো, তাঁর জন্য মানসিকভাবে কষ্টদায়ক হবে।' সম্প্রতি ঘটে যাওয়া এই মর্মান্তিক ঘটনার বর্ণনা ভারতের নাগরিকদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও পুলিশের আচরণ নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।
