আজকাল ওয়েবডেস্ক: গত ১২ জুন আহমেদাবাদ থেকে উড়ে যাওয়ার কিছু সেকেন্ডের মধ্যেই ভয়াবহভাবে ভেঙে পড়ে এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট AI 171। বিমানটি ছিল বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার। আজ, ভারতীয় বিমান দুর্ঘটনা তদন্ত ব্যুরো (Aircraft Accident Investigation Bureau বা AAIB) প্রকাশিত এক প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে—টেক-অফের মুহূর্তে বিমানের দুইটি ইঞ্জিনই হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। দুর্ঘটনায় ২৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে ২৪১ জন ছিলেন যাত্রী। শুধু এক ব্রিটিশ নাগরিক আশ্চর্যজনকভাবে বেঁচে গিয়েছেন।
আরও পড়ুন: মুখে ময়দা মেখে ফর্সা মহিলা সেজে দুবাই প্রবেশের চেষ্টা ৩ নাইজেরিয়ান যুবকের! আলজেরিয়ায় গ্রেপ্তার
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতীয় সময় সকাল ৮টা ৮ মিনিট ৪২ সেকেন্ডে বিমানটি সর্বোচ্চ গতিবেগ—১৮০ নটস IAS—অর্জন করতেই উভয় ইঞ্জিনের ফুয়েল কাট-অফ সুইচ ‘RUN’ থেকে ‘CUTOFF’ অবস্থানে চলে যায়, মাত্র এক সেকেন্ডের ব্যবধানে। ইঞ্জিনের শক্তি প্রদর্শক মান (N1 ও N2) দ্রুত কমতে শুরু করে, কারণ ফুয়েল প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। সকাল ৮টা ৯ মিনিট ৫ সেকেন্ডে ককপিট থেকে ‘Mayday’ সংকেত পাঠানো হয়।

ককপিট ভয়েস রেকর্ডার থেকে জানা গেছে, এক পাইলট বিস্ময় প্রকাশ করে অপর পাইলটকে জিজ্ঞেস করেন, কেন তিনি ফুয়েল বন্ধ করলেন। উত্তরে অপর পাইলট বলেন, তিনি কিছু করেননি। বিমানবন্দরের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, উড়ানের ঠিক পরপরই বিমানের Ram Air Turbine (RAT) নিজে থেকে খসে পড়ে বা অ্যাক্টিভেট হয়, যা সাধারণত ইমার্জেন্সি পাওয়ার সাপ্লাইয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়।
প্রাথমিক তদন্তে আরও জানানো হয়েছে, ফ্ল্যাপ অবস্থান ছিল ৫ ডিগ্রি—যা উড়ানের জন্য স্বাভাবিক। বিমানটির ওজনও অনুমোদিত সীমার মধ্যে ছিল। কোনো খারাপ আবহাওয়া বা বার্ড হিট ঘটনারও প্রমাণ মেলেনি। বিমানটি বিমানবন্দরের পরিধি পার হওয়ার আগেই উচ্চতা হারাতে শুরু করে। দুর্ঘটনার ফলে পাঁচটি বিল্ডিংয়ে আগুন ও বিশাল ধ্বংসের ঘটনা ঘটে। বিমানটি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে যায়।
আরও পড়ুন: পোল্যান্ডে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ট্যাঙ্ক 'চুরি' করে রাতভর মদের খোঁজ একদল মদ্যপের!
তদন্ত সংস্থা জানিয়েছে, দুর্ঘটনাস্থলের ড্রোন ফটোগ্রাফি ও ভিডিওগ্রাফি সম্পন্ন হয়েছে। ধ্বংসাবশেষ স্থানান্তর করে বিমানবন্দরের কাছে একটি সুরক্ষিত স্থানে রাখা হয়েছে। উভয় ইঞ্জিন উদ্ধার করে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। EAFR (Enhanced Airborne Flight Recorder) থেকে তথ্য ডাউনলোড করা হয়েছে এবং তা বিশ্লেষণাধীন। যাত্রী ও ক্রুদের ময়নাতদন্ত রিপোর্টও প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত সংস্থা জানিয়েছে, প্রাথমিক পর্যায়ে বোয়িং ৭৮৭-৮ বা GE GEnx-1B ইঞ্জিন নির্মাতা GE Aerospace-এর প্রতি কোনও সুপারিশ নেই।
বোয়িং ও এয়ার ইন্ডিয়ার প্রতিক্রিয়া
ঘটনার পর বোয়িং প্রেসিডেন্ট ও সিইও কেলি ওর্টবার্গ একটি বিবৃতিতে বলেন, “আমাদের গভীর সমবেদনা রইল AI 171 দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবার ও ক্ষতিগ্রস্ত সকলের প্রতি। আমরা তদন্তে ভারতের AAIB-কে পূর্ণ সহযোগিতা করছি।” এয়ার ইন্ডিয়া জানিয়েছে, “আমরা এই মর্মান্তিক ঘটনার শোক পালন করছি এবং প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও অংশীদারদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের পাশে আমরা আছি।”
