আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারতে মোবাইল ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁসের নতুন একটি ভয়াবহ ঘটনা সামনে এসেছে। অনলাইনে লিক হয়ে গেছে প্রত্যেক ভারতীয়র আধার নম্বর থেকে শুরু করে বাড়ির ঠিকানা পর্যন্ত। বিকল্প নম্বরও দেখা যাবে সবার! কিন্তু সরকার ব্যস্ত সংসদে "বন্দে মাতরম" নিয়ে আলোচনা করতে। নিউজ চ্যানেলে আলোচনা হচ্ছে, হিন্দু-মুসলিম, মন্দির মসজিদ নিয়ে। গুগলে গিয়ে টাইপ করতে "প্রক্সিআর্থ"।

লিক ডেটা ডট ওআরজি নামক একটা ওয়েবসাইট আসবে। সেই ওয়েবসাইটে গিয়ে শুধু নিজের ফোন নম্বরটা দিতে হবে। তাহলেই দেখিয়ে দেবে আপনার আধার কার্ড, বাড়ির ঠিকানা, লাইভ লোকেশন এবং বিকল্প নম্বর পর্যন্ত! যে আধার নাম্বারের সাথে আপনার প্যান, ভোটার, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সবকিছু লিংক করা।

হ্যাঁ এটাই ইন্ডিয়ার সব থেকে বড় ডেটা লিক, যেটা নিয়ে কেন্দ্র সরকার চুপ করে বসে আছে। ‘ProxyEarth’ নামে একটি ওয়েবসাইটে কেবলমাত্র কোনও মোবাইল নম্বর দিলেই ব্যক্তির নাম, বাবার নাম, ঠিকানা, বিকল্প নম্বর, ইমেল আইডি–সহ নানান অত্যন্ত ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ হয়ে যাচ্ছে। আরও চাঞ্চল্যজনক বিষয় হল—অনেক ক্ষেত্রে ওই ওয়েবসাইট ব্যবহারকারীর মোবাইল টাওয়ারের ট্রায়াঙ্গুলেশন ব্যবহার করে বর্তমান অবস্থান বা লাইভ লোকেশন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে।

ওয়েবসাইটটি যেভাবে তথ্য সংগ্রহ করেছে তা নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। অভিযোগ, এরা টেলিকম সংস্থাগুলির কাছে সিম রেজিস্ট্রেশনের সময় জমা দেওয়া সরকারি নথি ও ডেটাবেস থেকে ফাঁস হওয়া তথ্য ব্যবহার করছে। ভারতের তিন প্রধান মোবাইল পরিষেবা প্রদানকারী—Airtel, Jio এবং Vodafone Idea–র রেকর্ড থেকেই এই তথ্য ওপেন ওয়েবে চলে এসেছে বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও কিছু তথ্য পুরনো হতে পারে, তবুও সাধারণ নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য এভাবে প্রকাশ্যে চলে আসা সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থার বড়সড় ফাঁক  স্পষ্ট করে দিচ্ছে।

ওয়েবসাইটটির নির্মাতা রাকেশ নামে এক ব্যক্তি, যিনি নিজেকে প্রোগ্রামার এবং ভিডিও এডিটর হিসেবে পরিচয় দেন, ইন্ডিয়া  টুডেকে জানিয়েছেন যে তাঁর কাজ “অবৈধ নয়”। তাঁর দাবি- ওয়েবসাইটটি কোনও নতুন ডেটা চুরি করেনি, বরং আগে থেকেই অনলাইনে ফাঁস হয়ে থাকা নানা  তথ্যকে এক জায়গায় এনে দেখিয়েছে। পাশাপাশি এটি তাঁর অন্যান্য বাণিজ্যিক ওয়েবসাইটে ভিউয়ার্স টানার একটি উপায় হিসেবেও কাজ করে। রাকেশের আরও কয়েকটি ওয়েবসাইট রয়েছে, তাতে  কিছু পাইরেটেড কনটেন্টও পাওয়া যায় বলে জানা গেছে।

সাইবার সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, সাধারণ নাগরিকের ঠিকানা, বাবা মায়ের  নাম, ইমেল আইডি বা বিকল্প নম্বর ফাঁস  হয়ে গেলে পরিচয় ভাঁড়িয়ে  আর্থিক প্রতারণা, সামাজিক স্ক্যাম, এমনকি শারীরিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত ঝুঁকিও অনেক বেড়ে যেতে পারে। বিশেষত লাইভ লোকেশন ফাঁস তা হয়ে গেলে তা অত্যন্ত বিপজ্জনক- স্টকিং, হয়রানি বা অপরাধমূলক উদ্দেশ্যে কাজের  সুযোগ তৈরি হতে পারে।

ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা নিয়ে কাজ করা কর্মীরা বলেছেন, এই ঘটনা টেলিকম সার্ভিস প্রোভাইডারদের ডেটা সংরক্ষণ ব্যবস্থার দুর্বলতা আবারও সামনে এনে দিয়েছে। সিম রেজিস্ট্রেশনের সময় নাগরিকদের থেকে নেওয়া নথি ও তথ্য যদি এরকমভাবে বাজারে ফাঁস হয়ে যায়, তা হলে সরকারের ডেটা প্রটেকশন নীতির বাস্তব প্রয়োগ নিয়েও প্রশ্ন উঠবে।

সবচেয়ে বিস্ময়কর ব্যাপার হল, ‘ProxyEarth’ গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে সক্রিয় রয়েছে এবং এখনও যে কেউ ভারতীয় মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে এই তথ্য দেখতে পাচ্ছেন। এখনও  পর্যন্ত সরকারি সংস্থার তরফে কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। ওয়েবসাইটটির নির্মাতা বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম ও ওয়েব প্ল্যাটফর্মে সক্রিয় রয়েছেন এবং সাইটটি অনায়াসে খুলছে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত।

ঘটনাটি ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা, টেলিকম ডেটার নিরাপত্তা এবং ডিজিটাল ভারত উদ্যোগে নাগরিকদের আস্থার ওপর নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। সাইবার বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ- ব্যক্তিগত তথ্যের ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে, কোথাও ফোন নম্বর বা পরিচয় সংক্রান্ত তথ্য শেয়ার করার আগে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, এবং কোনও সন্দেহজনক কার্যকলাপ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।