আজকাল ওয়েবডেস্ক: স্কুল শিশুদের কাছে শিক্ষার মন্দির। কিন্তু হিমাচলের সিমলায় এক দলিত শিশুর কাছে সেই মন্দিরই হয়ে উঠল সাক্ষাৎ নরক। হাড়হিম অভিযোগ তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এক বছর ধরে চলেছে লাগাতার অত্যাচার। যৌন নির্যাতন। অভিযোগ, কেবল তথাকথিত ‘নিচু জাত’ হওয়ার কারণেই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক-সহ তিন শিক্ষক মিলে অকথ্য নির্যাতন চালিয়েছেন মাত্র আট বছরের ওই ছাত্রের উপর। সম্প্রতি এই ভয়াবহ অত্যাচারের ঘটনায় শিউরে উঠেছে গোটা দেশ। 

সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনাটি সিমলার রোহরু মহকুমার একটি সরকারি স্কুলের। প্রথম শ্রেণির ওই দলিত ছাত্রের বাবা পুলিশে অভিযোগ করেছেন, স্কুলের প্রধান শিক্ষক দেবেন্দ্র এবং আরও দুই শিক্ষক (বাবু রাম ও কৃতিকা ঠাকুর) মিলে দীর্ঘ দিন ধরে তাঁর ছেলেকে মারধর করতেন। ক্রমাগত মারের ফলে শিশুটির কানের পর্দা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কান থেকে রক্তপাত শুরু হয় শিশুর। ব্যক্তি বলেন, "আমার ছেলে এখন স্কুলে যেতে ভয় পাচ্ছে।" 

এখানেই শেষ নয়৷ অভিযোগের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দিকটি এরপরই ছিল। ব্যক্তি জানান তাঁর ছেলের উপর কেবল যৌন নির্যাতন নয়, অমানবিক অত্যাচারও চালানো হয়৷ ছাত্রটির বাবার দাবি, ওই শিক্ষকেরা একদিন তাঁর ছেলেকে জোর করে স্কুলের শৌচাগারে নিয়ে যান। সেখানে তাঁরা ভয় দেখিয়ে শিশুটির প্যান্টের ভিতরে একটি বিষাক্ত কাঁকড়াবিছে ঢুকিয়ে দেন! "একটি নিষ্পাপ শিশুর ওপর এমন পাশবিক অত্যাচার কীভাবে শিক্ষকেরা করতে পারলেন", এই প্রশ্নই এখন ছুড়েছেন অনেকে।

এহেন ভয়াবহ ঘটনার জেরে ছাত্রের বাবা স্থানীয় পুলিশের কাছে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। খবর অনুযায়ী, প্রধান শিক্ষক-সহ অভিযুক্ত তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধেই কঠোর ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। শুধু মারধরের জন্য নয়, জাতিগত বিদ্বেষ ও অমানবিক আচরণের অভিযোগে তাঁদের বিরুদ্ধে তফসিলি জাতি ও তফসিলি উপজাতি (অত্যাচার প্রতিরোধ) আইনে মামলা করা হয়েছে।

শিক্ষাঙ্গনে জাতপাতের এই নোংরা রাজনীতি এবং তার জেরে একটি শিশুর ওপর হওয়া এই নৃশংস অত্যাচারের ঘটনায় স্তব্ধ গোটা দেশ। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রশাসন দ্রুত কী ব্যবস্থা নেয়, এখন সেদিকেই তাকিয়ে আছে হিমাচল।

অন্যদিকে, মন্দিরের অদূরে কাশতে কাশতে ভুলবশত প্রস্রাব করে ফেলেছিলেন এক দলিত বৃদ্ধ। কিন্তু স্থানীয় যুবকের সন্দেহ হয়, তিনি ইচ্ছাকৃতভাবেই প্রস্রাব করেছেন।‌ এর জেরেই চরম শাস্তি দেওয়া হল তাঁকে। জোর করে মন্দির চত্বরে জিভ দিয়ে চেটে দিতে বাধ্য করা হল বৃদ্ধকে। 

সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাটি ঘটেছে উত্তরপ্রদেশের লখনউয়ে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার দীপাবলিতেই নির্যাতনের শিকার হন ৬০ বছরের ওই বৃদ্ধ। মন্দির সংলগ্ন এলাকায় প্রস্রাব করার অভিযোগ মন্দিরের সামনেই রাস্তা জিভ দিয়ে চেটে দিতে জোর করা হয়েছিল তাঁকে। 

দলিত বৃদ্ধের নাতি পুলিশকে জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরেই বয়সজনিত কারণে অসুস্থতায় ভুগছেন ওই বৃদ্ধ। মন্দিরের পাশে কাশতে কাশতে ভুলবশত প্রস্রাব করে ফেলেন। কিন্তু অভিযুক্তের দাবি ছিল, ইচ্ছাকৃতভাবেই তিনি মন্দির চত্বরে প্রস্রাব করেছেন। এর জেরেই কড়া শাস্তি দেওয়া হয় তাঁকে। মন্দিরের সামনের রাস্তা জিভ দিয়ে চেটে দিতে জোর করা হয়। এর জেরেই আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন বৃদ্ধ। শ্বাসকষ্টের সমস্যায় বর্তমানে শয্যাশায়ী তিনি। 

 রামপাল রাওয়াত নামের ওই বৃদ্ধ জানিয়েছেন, 'সেদিন সন্ধ্যায় কাকোরি এলাকায় শীতলা মাতা মন্দিরের অদূরেই দাঁড়িয়ে আমি জল খাচ্ছিলাম। কিন্তু স্বামী কান্তের অভিযোগ, আমি সেখানে ইচ্ছাকৃতভাবে প্রস্রাব করেছি। আমি যে জায়গায় ছিলাম, সেখান থেকে ৪০ মিটার দূরে ছিল ওই মন্দির। তা সত্ত্বেও আমাকে হেনস্থা করা হয়।' 

 পুলিশ আধিকারিক জানিয়েছেন, ঘটনার পরেরদিন বৃদ্ধ থানায় অভিযোগ জানিয়েছেন। অভিযুক্ত স্বামী কান্তকে সেদিন গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার একাধিক ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ। এই ঘটনাটি ঘিরে বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে দলিতদের উপর অত্যাচার ঘিরে সরব হয়েছেন রাজনীতিকরা।