আজকাল ওয়েবডেস্ক: উত্তরপ্রদেশের একটি আবাসিক বিদ্যালয়ের হোস্টেলে সম্প্রতি এক মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। ঘুমানোর জায়গা নিয়ে সহপাঠীর সঙ্গে তুচ্ছ একটি বিবাদের জেরে প্রাণ হারাতে হলো মাত্র ১৩ বছরের এক ছাত্রকে। হোস্টেলের মধ্যে ঘটে যাওয়া এই নির্মম হত্যাকাণ্ডে গোটা দেশ চমকে উঠেছে। 

সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, নিহত ছাত্র অনুরাগ। ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল ওই তরুণ৷ গুরুকুল নামে একটি বেসরকারি স্কুলের হোস্টেলে থাকত। খবর মারফত গত সোমবার রাতে হোস্টেলের ঘরে তার সঙ্গে ঝগড়ায় জড়িয়ে পড়ে রাম লক্ষন নামে এক ছাত্র। তার বয়স ১৮ বছর এবং সে দশম শ্রেণিতে পড়ে। রাম লক্ষন সম্প্রতি এই হোস্টেলে ভর্তি হয়েছিল।

জানা গিয়েছে, ঘুমানোর জায়গা নিয়ে দু’জনের মধ্যে প্রথমে কথা কাটাকাটি হয়। এরপর হঠাৎ করেই রাম লক্ষন রেগে গিয়ে অনুরাগের মাথায় ঘুষি ও লাথি মারতে শুরু করে। সে এতটাই আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে যে, এক পর্যায়ে অনুরাগ মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। তার নাক ও কান দিয়ে রক্ত ঝরতে থাকে। হোস্টেলের অন্যান্য ছাত্র এবং কর্তৃপক্ষ তখনই বিষয়টি টের পেয়ে অনুরাগকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। মঙ্গলবার সকালে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। 

 

মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই শোকের ছায়া নেমে আসে অনুরাগের পরিবার, সহপাঠী ও এলাকায়। পুলিশ সুপার রাজেশ দ্বিবেদী জানিয়েছেন, অনুরাগের মাথায় অত্যন্ত বাজেভাবে আঘাত লেগেছিল, যার ফলে খুলিতে ফাটল ধরে। মূলত এটাই তার মৃত্যুর কারণ বলে অনুমান করা হয়েছে। ঘটনার পর অভিযুক্ত রাম লক্ষনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়, যেখানে সে নিজের দোষ স্বীকার করেছে। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে রবিবার আদালতে হাজির করে। অভিযুক্ত রাম লক্ষণকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

ঘটনার জেরে হোস্টেল কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। কীসের ভিত্তিতে একজন ১৮ বছরের ছাত্রকে ১৩ বছরের ছাত্রের সঙ্গে এক কক্ষে রাখা হয়েছিল, তা নিয়ে একাধিক প্রশ্ন ছুড়ছে বাকি অভিভাবকেরা। উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অনেকেই। পুলিশ সূত্রে খবর, এই ঘটনার আগে কোনো নজরদারি বা ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

স্থানীয় অভিভাবক ও বাসিন্দারা হোস্টেল ব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের একাংশের দাবি, এমন আবাসিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য যথাযথ পর্যবেক্ষণ থাকা উচিত। দায়িত্বে অবহেলার কারণেই এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে।

পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার তদন্ত জারি রয়েছে। অন্যদিকে হোস্টেল কর্তৃপক্ষের ভূমিকাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তে যদি গাফিলতির প্রমাণ মেলে, তাহলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধেও কঠোর থেকে কঠোরতম আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

একটি তুচ্ছ বিবাদ কীভাবে প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে, এই ঘটনা তারই এক নির্মম উদাহরণ। ঘটনা কেন্দ্রিক অনুরাগের পরিবারের শোক আর প্রশ্ন, উপযুক্ত সতর্কতা থাকলে হয়তো আজ তাঁদের ছেলেটি বেঁচে থাকত।