আজকাল ওয়েবডেস্ক: বড়দিনের আবহে ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা কর্ণাটকে। ফের যাত্রীবাহী বাসে বিধ্বংসী আগুন। ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষের পরেই দাউদাউ আগুন ছড়িয়েছে গোটা বাসে। আগুনে ঝলসে এ পর্যন্ত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন অনেকেই।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, দুর্ঘটনাটি ঘটেছে বলে কর্ণাটকে। পুলিশ জানিয়েছে, গতকাল রাত আড়াইটে নাগাদ কর্ণাটকের চিত্রদূর্গ জেলার ৪৮ নম্বর জাতীয় সড়কে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে বেসরকারি স্লিপার বাসটি। ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় সেটির। বাসটি বেঙ্গালুরু থেকে শিবামোগ্গার দিকে যাচ্ছিল।
পুলিশ আরও জানিয়েছে, ট্রাকটি উল্টোদিক থেকে আসছিল। ডিভাইডার টপকেই বাসের মুখোমুখি ধাক্কা দেয় ট্রাকটি। এক পুলিশ আধিকারিক প্রাথমিক তদন্তের পর জানিয়েছেন, ট্রাকটি বাসের তেলের ট্যাঙ্কে ধাক্কা দিয়েছিল। যা থেকেই নিমেষের মধ্যে আগুন গোটা বাসে ছড়িয়ে পড়ে। কয়েকজন যাত্রী পালাতে পারলেও, কয়েকজন বাসে আটকে পড়েন। এখনও পর্যন্ত ৯ জন যাত্রী ও ট্রাক চালকের মৃত্যু হয়েছে।
বাসে চালক, কন্ডাক্টর-সহ ৩২ জন ছিলেন। আহতদের উদ্ধার করে তড়িঘড়ি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। দুর্ঘটনার খবর পেয়েই শোকপ্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এক্স হ্যান্ডেলে প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, 'কর্ণাটকের চিত্রদূর্গ জেলায় ভয়াবহ দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনায় অত্যন্ত মর্মাহত। যাঁরা প্রিয়জনদের হারালেন, তাঁদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।' এর পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের তরফে মৃতদের পরিবার পিছু ২ লক্ষ টাকা এবং আহতদের জন্য ৫০ হাজার টাকা আর্থিক ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, গত অক্টোবরেই রাজস্থানে চলন্ত বাসে অগ্নিকাণ্ডের জেরে বহু প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছিল। সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাটি ঘটেছিল রাজস্থানে। মঙ্গলবার বিকেলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, দুর্ঘটনাটি ঘটেছিল বিকেলে জয়সালমের - যোধপুর হাইওয়েতে। বাসটি জয়সালমের থেকে যোধপুরের দিকে যাচ্ছিল। মাঝ পথেই চলন্ত বাসে দাউদাউ করে আগুন জ্বলে ওঠে। পালানোর সুযোগ পাননি বহু যাত্রী। বাসের মধ্যেই অগ্নিদগ্ধ হয়ে ১৯ জন যাত্রী প্রাণ হারিয়েছেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বাসটি জয়সালমের থেকে দুপুর তিনটে নাগাদ যোধপুরের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল। বাসে মোট ৫৭ জন যাত্রী ছিলেন। জয়সালমের - যোধপুর হাইওয়েতে চলন্ত বাসের পিছনের দিকে কালো ধোঁয়া দেখা গিয়েছিল প্রথমে। কালো ধোঁয়া নজরে পড়তেই বাসটি হাইওয়ের একপাশে থামান চালক। নিমেষের মধ্যে গোটা বাসে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।
https://m.
&pp=0gcJCR4Bo7VqN5tDবাসটি দাউদাউ করে জ্বলতে দেখেই স্থানীয়রা ও পথচলতি মানুষ উদ্ধারকাজে ছুটে আসেন। খবর পেয়ে তড়িঘড়ি ঘটনাস্থলে পৌঁছয় দমকলের একাধিক ইঞ্জিন ও বিশাল পুলিশ বাহিনী। দ্রুত আগুন নেভানোর কাজ শুরু হয়। কিন্তু ততক্ষণে বাসের মধ্যেই আটকে পড়েন বহু যাত্রী। জীবন্ত দগ্ধ হন ২১ জন যাত্রী। আহতদের তড়িঘড়ি করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
পুলিশ ও দমকলের প্রাথমিক অনুমান, শর্ট সার্কিট থেকেই বাসটিতে আগুন ধরে যায়। এমনকী জানা গেছে, বাসটি মাত্র পাঁচদিন আগেই কেনা হয়েছিল। মঙ্গলবার রাতেই জয়সালমেরে দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছন রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী ভজন লাল শর্মা। পুড়ে খাক হয়ে যাওয়া বাসটি ও দুর্ঘটনাস্থল তিনি পরিদর্শন করেছেন।
প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক সময়ে বাসে অগ্নিকাণ্ডের জেরে রাজ্যে রাজ্যে বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটেছে। বহু যাত্রীর প্রাণহানিতে মৃত্যুমিছিল। অক্টোবর মাসেই হায়দরাবাদ থেকে বেঙ্গালুরুগামী একটি প্রাইভেট স্লিপার বাসে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ইতিমধ্যে মৃত্যু হয়েছে ২০ জনের, যার মধ্যে ১৯ জন যাত্রী ও এক মোটরসাইকেল আরোহী রয়েছেন। শুক্রবার গভীর রাতে এই দুর্ঘটনাটি ঘটে, যখন বাসটি একটি বাইকে ধাক্কা মেরে আগুনে পুড়ে যায়।
অন্ধ্রপ্রদেশ পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, দুর্ঘটনার পর বাসের নিচে আটকে পড়া দুই-চাকার গাড়িটির পেট্রোল ট্যাংক বিস্ফোরিত হয়, যা থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে পুরো গাড়িতে। পরবর্তীতে বাসে থাকা দুটি ১২ কেভি ব্যাটারি ও প্রচুর পরিমাণে স্মার্টফোনের লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি আগুনের তীব্রতা বাড়িয়ে দেয়।
ফরেনসিক ও অগ্নি নির্বাপক দপ্তরের প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, বাসটিতে প্রায় ২৩৪টি স্মার্টফোন ছিল, যার বাজারমূল্য প্রায় ৪৬ লক্ষ টাকা। হায়দরাবাদের এক ব্যবসায়ী এই ফোনগুলো লজিস্টিক সার্ভিসের মাধ্যমে বেঙ্গালুরু পাঠাচ্ছিলেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, আগুন লাগার পর ফোনগুলির লিথিয়াম ব্যাটারি একে একে বিস্ফোরিত হতে থাকে, ফলে আগুন মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে পুরো কেবিন জুড়ে।
ডেপুটি ইনস্পেক্টর জেনারেল কোয়া প্রভীন বলেছেন, আগুনের প্রধান উৎস ছিল বাসের দুটি ১২ কেভি ব্যাটারি। তিনি জানান, “বাইকের ফুয়েল ট্যাংকটি প্রথমে বিস্ফোরিত হলেও সেটি আগুনের মূল কারণ নয়। আগুনের কেন্দ্রবিন্দু ছিল বাসের মূল দরজার পাশে থাকা দুটি ব্যাটারি, যেগুলো বিস্ফোরিত হয়ে অগ্নিকাণ্ডকে মারাত্মক করে তোলে।”
