আজকাল ওয়েবডেস্ক: উত্তরাখণ্ডের চামোলি জেলায় শুক্রবার গভীর রাতে মেঘভাঙা বৃষ্টির জেরে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। থারালি বাজার, কোটদীপ ও থারালি তহসিল কমপ্লেক্সে জল ও কাদামাটির স্রোতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে খবর স্থানীয় সূত্রে। বহু বাড়িঘর, এসডিএমের বাসভবন এবং অন্যান্য সরকারি ভবনও ক্ষতির মুখে পড়েছে। অন্যান্য জায়গার ধ্বংসাবশেষ ঢুকে গিয়েছে সরকারি ভবনগুলিতে। তহসিল কমপ্লেক্সে পার্ক করা একাধিক গাড়ি কাদামাটির নিচে চাপা পড়ে গিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। শহরের রাস্তাগুলি মুহূর্তের মধ্যেই পরিণত হয়েছে পুকুরে। সংলগ্ন সাগওয়ারা গ্রামে এক কিশোরী কাদামাটির নিচে চাপা পড়ে নিখোঁজ বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ব্যাপক বৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গেই এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, স্থানীয় বাসিন্দারা বাড়িঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসেন। ইতিমধ্যেই উদ্ধার ও ত্রাণকাজ শুরু করেছে পুলিশ ও প্রশাসন।
চেপডাউন বাজারের বেশ কিছু দোকানও ধ্বংসস্তূপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একজন নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানা গেছে। পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামী। তিনি এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, ‘গতরাতে চামোলির থারালি এলাকায় মেঘভাঙার দুঃখজনক খবর পাওয়া গিয়েছে। জেলা প্রশাসন, এসডিআরএফ ও পুলিশ ইতিমধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধারকাজে নেমেছে। আমি নিয়মিত স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি এবং পরিস্থিতি নিজে পর্যবেক্ষণ করছি। সবার নিরাপত্তার জন্য ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি’। থারালি-গোয়ালডাম সড়ক মিংগেডেরা অঞ্চলে ধ্বংসস্তূপ ও প্রবল বৃষ্টিতে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। পাশাপাশি থারালি-সাগওয়ারা রুটও অবরুদ্ধ হওয়ায় স্থানীয় যাতায়াত ব্যাহত। এদিকে, বহু গাড়ি জল ও কাদামাটির স্রোতে ভেসে গিয়েছে।
চামোলি থেকে পাওয়া এক ভিডিওতে এক ব্যক্তি আতঙ্কিত কণ্ঠে বলতে শোনা যায়, ‘আমার গাড়ি ডুবে গিয়েছে’। চামোলির জেলা শাসক ড. সন্দীপ তিওয়ারি জানিয়েছেন, পুলিশ ও প্রশাসনের দল সক্রিয়ভাবে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে। গৌচার থেকে এসডিআরএফের বিশেষ দল ঘটনাস্থলে রওনা হয়েছে। পাশাপাশি, বর্ডার রোডস অর্গানাইজেশন (বিআরও) মিং খেদেরে এলাকায় সড়ক পরিষ্কারের কাজ শুরু করেছে, যাতে ত্রাণ ও যান চলাচল সহজ হয়। ঘটনার পর জেলা প্রশাসনের তরফে ঘোষণা করা হয়েছে, থারালি তহসিল এলাকার সমস্ত স্কুল ও আঙনওয়াড়ি কেন্দ্র শনিবার বন্ধ রাখা হবে। ত্তরকাশীতে সম্প্রতি পরপর মেঘ ভাঙা বৃষ্টি। একের পর এক ভয়াবহ দুর্যোগ। সোমবার ভোরে রাজ্যজুড়ে ভারী বৃষ্টিপাত। বৃষ্টিপাত চলাকালীন উদ্ধারকাজে ভয়াবহ বিঘ্ন ঘটে৷ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধারালি গ্রামে পাহাড়ি বন্যা ও কাদামাটির ধসের কারণে প্রায় অর্ধেক গ্রাম মাটিচাপা পড়ে যায়। ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তর (IMD) পুরো উত্তরাখণ্ড রাজ্যের জন্য ইতিমধ্যেই ‘ইয়েলো’ সতর্কতা জারি করে।
প্রশাসন জানিয়েছে, গঙ্গনানি এলাকায় একটি গুরুত্বপূর্ণ বেইলি সেতু নির্মাণ করে ভাগে ভাগে উদ্ধারকাজ চালু করা হয়েছে। সূত্র মারফত এটি ধারালি ও তার আশপাশের বন্যাকবলিত এলাকার সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে। তবে গঙ্গোত্রী জাতীয় সড়ক (National Highway) এখনও বিভিন্ন স্থানে আটকে আছে এবং একইসঙ্গে বিভিন্ন অংশে ধ্বংসপ্রাপ্ত। মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি জানান, সড়ক পরিষ্কার ও মেরামতের কাজ যুদ্ধকালীন ভিত্তিতে চলছে। খবর অনুযায়ী, মঙ্গলবার বা বুধবার নাগাদ পুরোপুরি চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সড়কটি সোনগাড়, ডবরানি এবং হর্ষিল এলাকায় এখনও অবরুদ্ধ। হর্ষিল অঞ্চলে বন্যার পর একটি বিশাল হ্রদ সৃষ্টি হয়েছে। এই হ্রদের জলস্তর হ্রাসের প্রচেষ্টা চলছে৷ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে উত্তরকাশীর জেলা ম্যাজিস্ট্রেট প্রশান্ত আর্য পরিদর্শন করেছেন। এই বন্যা হর্ষিলে অবস্থিত একটি সেনা শিবিরেও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সূত্রে জানা গিয়েছে, এই শিবির থেকে এক জন জুনিয়র কমিশন্ড অফিসারসহ নয়জন সেনা জওয়ান নিখোঁজ রয়েছেন।
