আজকাল ওয়েবডেস্ক: বয়স বাড়লেই দেখা দেয় হাঁটু কিংবা নিতম্বে ব্যথা। কারণ বয়সের সঙ্গে সঙ্গে ধীরে ধীরে ক্ষয়ে যায় অস্থিসন্ধির কার্টিলেজ। চিকিৎসকের কাছে গেলে তাঁর হাতেও বিশেষ কোনও উপায় থাকে না। সমস্যা আরও বিগড়ে গেলে জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট সার্জারি বা অস্থিসন্ধির প্রতিস্থাপন করতে হয়। এতদিন কার্টিলেজ ক্ষয়ের চিকিৎসায় এটাই ছিল ভবিতব্য। কিন্তু জার্মান বিজ্ঞানীদের এক যুগান্তকারী আবিষ্কার ভেঙে ফেলতে চলেছে সেই ধারণা। বিজ্ঞানীরা তৈরি করেছেন এক বিশেষ জেলির মতো পদার্থ। যেটি ইনজেকশনের মাধ্যমে অস্থিসন্ধিতে ঢুকিয়ে দিলে ক্ষয়ে যাওয়া অংশ আবার গঠিত হবে।
বিজ্ঞানের ভাষায় এই অর্ধতরল পদার্থটির নাম ইনজেক্টেবল বায়োঅ্যাকটিভ হাইড্রোজেল, যা শরীরে প্রবেশ করলেই ক্ষতিগ্রস্ত সন্ধিকে (জয়েন্ট) ভেতর থেকে পুনর্গঠন শুরু করে। ফলে হাঁটু বা নিতম্ব প্রতিস্থাপনের মতো জটিল অস্ত্রোপচারের প্রয়োজনই হয় না।
কীভাবে কাজ করে এই জেল?
গবেষকদের দাবি, এই জেলে রয়েছে বিশেষ কিছু গ্রোথ ফ্যাক্টর, কোলাজেন ফাইবার এবং বিশেষ স্টেম সেল গঠনকারী উপাদান। ইনজেকশনের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত জয়েন্টে জেল প্রবেশ করার পর এটি সেখানে এক নমনীয় আস্তরণ বা স্ক্যাফোল্ড তৈরি করে। এই আস্তরণ প্রাকৃতিক কার্টিলেজের মতো আচরণ করে। এর পর এই কৃত্রিম কার্টিলেজ ঘিরেই শরীরের নিজস্ব স্টেম সেল সেই ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় জমা হতে শুরু করে। সেই স্টেম সেল ধাপে ধাপে নতুন কার্টিলেজ গড়ে তোলে।
এভাবে ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত সন্ধিতে আবারও গড়ে ওঠে প্রাকৃতিক কার্টিলেজ। এতে কার্টিলেজ শক্তি ফিরে পায় এবং নড়াচড়া করার ক্ষমতা বাড়ে। এতদিন যে ধরনের ইমপ্ল্যান্ট ব্যবহৃত হত তার তুলনায় এই জেল একেবারে আলাদা। ব্যবহার যত বাড়ে, এই জেল তত শক্তিশালী হয়।
রোগীদের জন্য আশার আলো
বিশেষজ্ঞদের মতে, হাঁটু ও নিতম্বের সমস্যা এখন বিশ্বজুড়ে এক বড় চ্যালেঞ্জ। অস্টিওআর্থ্রাইটিস, ক্রীড়াজনিত আঘাত কিংবা বার্ধক্যজনিত কারণে লাখো মানুষ ভুগছেন জয়েন্টের ক্ষয়ে। বহু ক্ষেত্রেই এই ধরনের সমস্যায় একমাত্র সমাধান হয়ে দাঁড়ায় জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট সার্জারি। কিন্তু এই অস্ত্রোপচার ব্যয়বহুল, জটিল এবং সময়সাপেক্ষ। অনেক সময় অস্ত্রোপচারের পরও রোগীরা স্বাভাবিক জীবনে পুরোপুরি ফিরতে পারেন না। এই নতুন হাইড্রোজেল প্রযুক্তি তাঁদের জন্য উপকারী বিকল্প হয়ে উঠতে পারে। কারণ এটি অস্ত্রোপচার ছাড়া, কেবল ইনজেকশনের মাধ্যমেই প্রয়োগ করা যায়। পাশাপাশি শরীর নিজেই নিজেকে মেরামত করতে শুরু করে।
দ্রুত ফল মিলছে
পরীক্ষামূলক প্রয়োগের ফলে দেখা গিয়েছে, এই জেল প্রয়োগের মাত্র ৬০ দিনের মধ্যেই কার্টিলেজ পুনর্গঠন শুরু হয়ে গিয়েছে। রোগীরা হাঁটাচলায় আগের তুলনায় বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেছেন। প্রযুক্তিটি জনসাধারণের ব্যবহারযোগ্য হয়ে উঠলে এটি হাড়ের চিকিৎসার এক নতুন যুগের সূচনা করবে বলেই মনে করছেন চিকিৎসকেরা।
আরও পড়ুন: নিজেই জানতেন না তিনি অন্তঃসত্ত্বা! মলত্যাগ করতে গিয়ে সন্তানের জন্ম দিলেন মহিলা
আরও পড়ুন: রোগীদের উপুড় করে নিম্নাঙ্গের অন্তর্বাস খুলে নিতেন! তারপর…? বিস্ফোরক অভিযোগ নামী চিকিৎসকের বিরুদ্ধে
ঐতিহাসিক গুরুত্ব
এই আবিষ্কার চিকিৎসাশাস্ত্রে এক ঐতিহাসিক মাইলফলক। এই প্রযুক্তি যদি বাণিজ্যিকভাবে প্রয়োগ করা যায়, তবে তা অস্টিওআর্থ্রাইটিস বা কার্টিলেজ ক্ষয়ে ভোগা লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন বদলে যেতে পারে। হাঁটুর ব্যথা নিয়ে হাঁটাচলায় কষ্ট হলেও কিংবা নিতম্বের যন্ত্রণায় কষ্ট পেলেও বহুমানুষ অস্ত্রোপচারে ভয় পান। তাঁরাও এবার স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবেন।।
কবে আসবে বাজারে?
প্রযুক্তিটি এখনও পরীক্ষামূলক হলেও সাফল্যের হার আশাব্যঞ্জক। চিকিৎসাশাস্ত্র বলছে, একে যদি বড় পরিসরে কাজে লাগানো যায়, তবে ভবিষ্যতে জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট সার্জারি হয়তো অতীত হয়ে যাবে। আর এই জেলই হয়ে উঠবে হাঁটু ও নিতম্ব সমস্যার সহজ, নিরাপদ এবং কার্যকর সমাধান। নির্মাতাদের আশা ২০২৬ সালেই বাজারে আসবে এই জেল।
