আজকাল ওয়েবডেস্ক: করোনা পরবর্তী সময়ে একাধিক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানের চল দেখা গেলেও বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার কারণে এমন দৃশ্য খুব একটা চোখে পড়ে না।
তবুও ঠিক এমনই এক অভিনব ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়াল কর্ণাটকের হুব্বলীতে। ইন্ডিগো-র পরপর ফ্লাইট বাতিলের জেরে বিয়ের পর ভার্চুয়ালি নিজেদের রিসেপশনে যোগ দিতে হল নবদম্পতিকে।
নিজেরাই নিজেদের বিয়ের রিসেপশনে পৌঁছতে না পেরে অনলাইনে অতিথিদের সামনে হাজির হন তাঁরা। জানা গিয়েছে, বেঙ্গালুরুতে কর্মরত দুই সফ্টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হুব্বলীর বাসিন্দা মেধা ক্ষীরসাগর এবং ভুবনেশ্বরের বাসিন্দা সঙ্গমা দাস ২৩ নভেম্বর ভুবনেশ্বরে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।
বুধবার হুব্বলীর গুজরাট ভবনে তাঁদের আনুষ্ঠানিক রিসেপশনের আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে ইন্ডিগো-র পরপর ফ্লাইট বাতিলের জেরে পরিকল্পনায় বড় ধরনের বাধা পড়ে।
নবদম্পতি ২ ডিসেম্বর ভুবনেশ্বর থেকে বেঙ্গালুরু হয়ে হুব্বলীতে পৌঁছনোর জন্য টিকিট বুক করেছিলেন। মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে টানা বিমানের সময় পিছোতে থাকার পর অবশেষে ৩ ডিসেম্বর ভোরে তাঁদের ফ্লাইট বাতিল হয়ে যায়।
একই সমস্যার মুখে পড়েন ভুবনেশ্বর-মুম্বই-হুব্বলী রুটে যাত্রা করা আরও কয়েকজন আত্মীয়ও। এমন পরিস্থিতিতে অতিথিরা যখন ইতিমধ্যেই রিসেপশন অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে পড়েন আর সমস্ত প্রস্তুতিও সেরে রাখা তখন অনুষ্ঠান বাতিল করা ছিল অসম্ভব।
ফলে বর–কনের আসনে বসে সমস্ত আচার-অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেন কনের বাবা-মা। আর দূর প্রান্তে ভুবনেশ্বরে সাজসজ্জা সেরে প্রস্তুত নবদম্পতি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে অংশ নেন। বড় পর্দায় তাঁদের উপস্থিতি দেখানো হয় অতিথিদের জন্য।
কনের মা জানান, ‘২৩ নভেম্বর বিয়ে হয়েছিল। ৩ ডিসেম্বর রিসেপশনের জন্য তারিখ ঠিক করা হয়েছিল। কিন্তু ভোর ৪টের সময় ফ্লাইট বাতিলের খবর পাই। শেষ পর্যন্ত ওরা পৌঁছতে পারল না। খুবই খারাপ লাগছে। এত আত্মীয়কে নিমন্ত্রণ করা, সব প্রস্তুতি… শেষ মুহূর্তে কিছুই বদলানো সম্ভব ছিল না। তাই পারিবারিক আলোচনার পর আমরা ঠিক করি, অনলাইনেই ওদের অনুষ্ঠানে যোগ করানো হবে।’
উল্লেখ্য, গত কয়েকদিনে ইন্ডিগোর একাধিক বিমান বাতিলের জেরে দেশজুড়ে যাত্রীদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। টানা চতুর্থ দিন অপারেশনাল সমস্যায় জর্জরিত ভারতের অন্যতম বৃহৎ বিমান সংস্থা ইন্ডিগো।
এর জেরে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ৬০০টিরও বেশি বিমান বাতিল হয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে দিল্লি, মুম্বই, বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ, গোয়া, কলকাতা সহ দেশের প্রায় সব বড় বিমানবন্দরে।
দিল্লি বিমানবন্দরের চিত্র আরও ভয়াবহ। মুম্বইয়ে ১১৮টি, বেঙ্গালুরুতে ১০০টি, হায়দরাবাদে ৭৫টি, কলকাতায় ৩৫টি, চেন্নাইয়ে ২৬টি এবং গোয়ায় ১১টি ফ্লাইট বাতিল হয় বলে জানিয়েছে পিটিআই।
অন্যান্য বিমানবন্দরও রেহাই পায়নি। ইন্ডিগো জানিয়েছে, নতুন নিয়মে রাতের ডিউটির সময়সীমা বদলের কারণে ক্রু নিয়োগ করার হিসেবে ভুল হয়েছিল।
ফলে অপারেশন ম্যানেজমেন্টের ক্ষেত্রে বড় ফাঁক থেকে যায়। সেই সঙ্গে শীতকালীন কুয়াশা এবং বিমানবন্দরগুলির ভিড় পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে।
জানা গিয়েছে, ইন্ডিগোর তরফে গোটা ঘটনাটি কেন্দ্রীয় বিমানমন্ত্রী এবং ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ সিভিল অ্যাভিয়েশনকে জানানো হয়েছে।
তবে এর পাশাপাশি সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে আগামী কয়েকদিনে এই সমস্যা অব্যাহত থাকবে। আগামী দু-তিন দিন ফ্লাইট বাতিল অব্যাহত থাকতে পারে।
৮ ডিসেম্বর থেকে ইন্ডিগো ফ্লাইটের সংখ্যা কমিয়ে অপারেশন স্থিতিশীল করার পরিকল্পনা নিয়েছে। সংস্থার সিইও পিটার এলবার্স কর্মীদের উদ্দেশে বার্তায় জানিয়েছেন, স্বাভাবিক পরিষেবা ফিরিয়ে আনা ‘সহজ লক্ষ্য নয়’।
বৃহস্পতিবার রাতে সংস্থাটি আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চেয়ে জানিয়েছে, গত দু’দিনে ব্যাপক বিঘ্ন ঘটেছে নেটওয়ার্ক ও পরিষেবায়। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত। মন্ত্রক, ডি জি সি এ, বিসিএএস, এএআই এবং বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে আমাদের দল সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে।’
