শীতকাল এলেই অনেকের মধ্যে অদ্ভুত এক মনখারাপ ভাব তৈরি হয়। সকালে ঘুম থেকে উঠতে কষ্ট, সারাদিন ক্লান্তি, কাজে আগ্রহ কমে যাওয়া-সবকিছু মিলিয়ে যেন মনটা ভারী হয়ে থাকে। অনেকেই এসবকে সাধারণ শীতকালীন অলসতা বলে ধরেন, কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, এই লক্ষণগুলো সিজনাল অ্যাফেকটিভ ডিসঅর্ডার (স্যাড) নামের এক ধরনের মরশুমি বিষণ্ণতার ইঙ্গিত হতে পারে।
স্যাড মূলত শীতপ্রধান দেশগুলোতে বেশি দেখা গেলেও বর্তমানে বিশ্বের নানা প্রান্তে এই সমস্যা বাড়ছে। শীতকালে দিনের আলো কম থাকার কারণে শরীরের স্বাভাবিক জৈবঘড়ি বা বায়োলজিক্যাল ক্লক বিঘ্নিত হয়। সূর্যের আলো কমে গেলে শরীরে দুই গুরুত্বপূর্ণ হরমোন অর্থাৎ সেরোটোনিন ও মেলাটোনিনের মাত্রায় পরিবর্তন ঘটে। সেরোটোনিন কমে গেলে মন-মেজাজ খারাপ হয় আর মেলাটোনিন বেড়ে গেলে অতিরিক্ত ঘুম, ক্লান্তি ও অবসাদ তৈরি হয়। ফলে ধীরে ধীরে মানসিক চাপ ও দুঃখবোধ বাড়তে থাকে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, স্যাড-এর কিছু সাধারণ লক্ষণ হল-সারাদিন দুঃখ বা খালি খালি লাগা, আগের মতো কোনও কাজে আনন্দ অনুভব না করা, শক্তি ও উদ্যম কমে যাওয়া, অতিরিক্ত ঘুম বা সারাদিন তন্দ্রাভাব, মনোযোগ ধরে রাখতে অসুবিধা, ওজন বেড়ে যাওয়া, বিশেষ করে মিষ্টি বা কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবারের প্রতি ঝোঁক, সামাজিক যোগাযোগ কমে যাওয়া, একা থাকতে ইচ্ছে করা। এসব লক্ষণ যদি পরপর কয়েক সপ্তাহ ধরে থাকে, তবে তা অবহেলা করা উচিত নয়। কারণ সময়মতো ব্যবস্থা না নিলে এই মরশুমি অবসাদ দীর্ঘমেয়াদি অবসাদে পরিণত হতে পারে।
কেন শীতে এর প্রকোপ বেশি? দিন ছোট হওয়া, রোদ কম দেখা, শীতের কারণে ঘরে বেশি সময় কাটানো-এই তিনটি প্রধান কারণ স্যাড-এর ঝুঁকি বাড়ায়। শরীর পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি না পেলে মুড রেগুলেশনেও প্রভাব পড়ে। আবার শীতে সক্রিয়তা কমে যাওয়ায় মনও ভারী হয়ে ওঠে।
কীভাবে সামাল দেবেন? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিছু সহজ অভ্যাস স্যাড মোকাবিলায় কার্যকর হতে পারে। যেমন রোদ উঠলে অন্তত ২০–৩০ মিনিট বাইরে হাঁটা, ঘরের জানালা খোলা রাখা এবং আলো উজ্জ্বল রাখা, নিয়মিত ব্যায়াম করা, ভিটামিন ডি-সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া, পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো, প্রয়োজন হলে মনোবিদ বা চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া। একইসঙ্গে নিজের শরীর ও মনের পরিবর্তনগুলিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়াই সবচেয়ে জরুরি।
