অনুরাগ কাশ্যপ মানেই সোজাসাপটা, কাটা-কাটা কথাবার্তা। শিল্পীর আপোষহীন মেজাজ বারবার উঠে এসেছে খবরের শিরোনামে। ‘গ্যাংস অফ ওয়াসেপুর’-এর পরিচালক রাখঢাক না রেখে জানিয়েছেন, বলিউডের উপর বীতশ্রদ্ধ হয়ে হিন্দি ছবির ইন্ডাস্ট্রি ছাড়ছেন তিনি! পাশাপাশি এও জানালেন এবার থেকে তাঁকে দেখা যাবে দক্ষিণী ছবির জগতে। বলিপাড়ার ছবি তৈরির মানসিকতাকে তীব্র নিন্দা করেছিলেন তিনি। এবার আদিত্য চোপড়া-করণ জোহরদের মতো প্রথম সারির প্রযোজকদের একহাত নিলেন অনুরাগ!

 

‘বোম্বে ভেলভেট’-এর ব্যর্থতা যেন আজও নাড়া দেয় অনুরাগ কাশ্যপকে। ২০১৫ সালে রণবীর কাপুর ও অনুষ্কা শর্মাকে নিয়ে বানানো সেই উচ্চাভিলাষী ছবিটি ছিল অনুরাগের কেরিয়ারের সবচেয়ে বড় প্রজেক্টগুলির একটি। কিন্তু বক্স অফিসে ফল ছিল ভয়াবহ হতাশাজনক।

সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে অনুরাগ খুলে বললেন সেই সময়কার গল্প। জানালেন, এই ছবিতে তিনি প্রথমে চেয়েছিলেন রণবীর সিংকে নায়ক হিসেবে। রণবীর তখন বলিউডে একেবারেই নতুন মুখ।

অনুরাগের কথায়,“আমি তখন ইন্ডাস্ট্রির প্রায় সবার সঙ্গে কথা বলেছিলাম। করণ জোহর, আদিত্য চোপড়া, সবাই। সবাই বলেছিল, আমি নাকি পাগল! বলেছিল, ‘বড় অভিনেতা নাও এই ছবিতে, সেটাই সঠিক রাস্তা।’”

তারপরই অনুরাগ যোগ করেন, “আমার কাছে তখন একজন ছোট, নতুন অভিনেতা ছিল, নাম রণবীর সিং। কিন্তু কারও তাঁর ওপর বিশ্বাস ছিল না। বড় পরিচালকরা ওঁকে ‘ট্রেডমিল’ বলতেন…কারণ ওর মধ্যে এত এনার্জি ছিল! রণবীর সিং থেকে রণবীর কাপুরে পৌঁছোতে আমার প্রায় এক বছর লেগে গিয়েছিল। মানসিকভাবে, আবেগের দিক থেকেও। আমি ভাবতে শুরু করেছিলাম, হয়তো আমি-ই ভুলই ছিলাম। কারণ পুরো ইন্ডাস্ট্রি বলছিল, এটাই সঠিক সিদ্ধান্ত।”

এরপর ইতিহাস যা বলল, তা সবাই জানে। যে রণবীর সিংকে একসময় কেউ বিশ্বাস করত না, সেই রণবীরই পরে সঞ্জয় লীলা বনশালির তিন-তিনটি ছবিতে (‘রামলীলা’, ‘বাজিরাও মস্তানি’, ‘পদ্মাবত’) নিজেকে বলিউডের শীর্ষ নায়কদের তালিকায় একেবারে উপরের দিকে নিয়ে যান।

বর্তমানে রণবীরকে শেষ দেখা গিয়েছে ‘সিংহম এগেইন’-এ, আর বছর শেষে আসছে তাঁর পরবর্তী ছবি ‘ধুরন্ধর’।

 

এর আগে বলি-তারকাদের একহাত বিয়েছিলেন অনুরাগ। জানিয়েছিলেন, তারকাদের বাড়তি চাহিদা কীভাবে ছবির বাজেট ফুলিয়ে দেয়। এক সাক্ষাৎকারে হাসতে হাসতে অনুরাগ বলেছিলেন, “ আমারএকজন অভিনেতার জন্য রাঁধুনি এসেছিল, দিনে দু’লাখ টাকা চার্জ! খাবারটা এত ছোট ছিল যে মনে হচ্ছিল পাখির খাবার!” তাঁর মতে, সমস্যা টাকায় নয়, মানসিকতায়- “আগে সবাই একসঙ্গে কাজ করত, এখন সবাই আলাদা ভ্যানে বসে। সিনেমা এখন আর শিল্প নয়, এক লজিস্টিক প্রজেক্ট।”

 

কাশ্যপের সোজাসাপটা বক্তব্য যেন এক আয়না যেখানে আজকের বলিউড নিজেরই প্রতিচ্ছবি দেখে। বিলাসিতার চকচকে মোড়কে হারিয়ে যাচ্ছে সেই সহজ, দলবদ্ধ, নিখাদ সিনেমা, যেখান থেকে একদিন উঠে এসেছিল ' গ্যাংস অফ ওয়াসেপুর', 'দেব ডি', 'আগলি'-র মতো সব বাস্তবধর্মী মনকেমন করা ছবি আর এক খাঁটি গল্প বলিয়ে অনুরাগ কাশ্যপ।