'বিবাহবিচ্ছেদ' শব্দটা শুনলে বরাবর সমাজের ভুরু কুঁচকে যায়৷ অনেকেই অনেকরকম প্রশ্ন তোলেন। প্রথমেই অভিযোগের তির আসে মহিলার দিকে৷ ফলে অনেকেই স্বামী বা শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারেন না। দিনের পর দিন নির্যাতন সয়ে যান৷ আইনি পথ তো দূর, সমাজ-সংসারের ভয়ে প্রতিবাদটুকুও করে উঠতে পারেননা৷
2
8
একজন নারী ছিলেন, যিনি এসবকিছুর ঊর্ধ্বে নিজের সম্মান অধিকার বুঝে নিতে পিছপা হননি। তিনি হয়ে উঠেছিলেন পথপ্রদর্শক। তিনি রুখমাবাঈ রাউত। প্রথম হিন্দু মহিলা যিনি বিবাহবিচ্ছেদের পথ বেছে নিয়েছিলেন। রুখমাবাঈ রাউত - একটি নাম, যা আজও ভারতের নারীমুক্তির ইতিহাসে এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে।
3
8
উনিশ শতকে যখন বিবাহবিচ্ছেদ ছিল কল্পনারও অতীত, তখন রুখমাবাঈ ছিলেন প্রথম হিন্দু মহিলা যিনি আদালতের দ্বারস্থ হয়ে আইনসম্মতভাবে বিবাহ ভেঙেছিলেন। এই সাহসই সমাজের বহু অন্ধকার নিয়মকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিল।
4
8
শুধু লড়াই নয়, তিনি নিজেকে তৈরি করেছিলেন আধুনিক শিক্ষায়। বিলেত থেকে ডাক্তারি ডিগ্রি নিয়ে দেশে ফিরে আসেন। প্রায় ৩৫ বছর ধরে তিনি সুরাট এবং রাজকোটের হাসপাতালে সাধারণ মানুষের চিকিৎসা করেছেন। সেই সময়ে এই দৃশ্য এক বিরল দৃষ্টান্ত ছিল।
5
8
মাত্র ১১ বছর বয়সে তাঁর বিয়ে হয় দাদাভাই ভিকাজির সঙ্গে। কিন্তু সাবালিকা হওয়ার পর তিনি স্বামীর সঙ্গে থাকতে অস্বীকার করেন। এই কারণে তাঁর স্বামী 'বিবাহ অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা' চেয়ে মামলা করেন। রুখমাবাঈ স্পষ্ট জানিয়ে দেন, তিনি স্বামীর কাছে ফিরবেন না, বরং জেল খাটবেন।
6
8
রুখমাবাঈয়ের এই লড়াই শুধু তাঁর একার ছিল না। এই ঘটনা ভারত ও ব্রিটেনে এতটাই সাড়া ফেলেছিল যে, এর সরাসরি প্রভাবে ১৮৯১ সালে 'এজ অফ কন্সেন্ট অ্যাক্ট' তৈরি হয়। এই আইন বালিকা বিবাহের বিরুদ্ধে একটি বড় পদক্ষেপ ছিল।
7
8
যখন আদালত তাঁকে স্বামীর কাছে ফিরে যেতে অথবা জেলে যেতে বাধ্য করার পথে, তখন রুখমাবাঈয়ের সাহসের প্রশংসা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। জানা গিয়েছে, স্বয়ং রানি ভিক্টোরিয়া এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেন। শেষ পর্যন্ত তাঁকে বিবাহবিচ্ছেদের অনুমতি দেওয়া হয়।
8
8
রুখমাবাঈ মনে করতেন, নারীর সার্বিক উন্নতি লুকিয়ে আছে শিক্ষায়। তিনি কঠোরভাবে 'পর্দা' প্রথার সমালোচনা করতেন। এমনকী সব মেয়েদের জন্য শিক্ষার দরজা খুলে দেওয়ার দাবি জানাতেন। তিনি নারী-অধিকারের এক সত্যিকারের মশালবাহী ছিলেন৷