মুদ্রাস্ফীতি যে কোনও দেশের অর্থনীতির জন্য অশনি সঙ্কেত। চড়া মুদ্রাস্ফীতি হারের জন্য বৃদ্ধি পায় দ্রব্যমূল্যের দাম। হ্রাস পায় টাকার মূল্য। এর সর্বশ্রেষ্ঠ উদাহরণ জিম্বাবোয়ে।
2
13
১৯৫০ সাল থেকে চড়া মুদ্রাস্ফীতি হারের কারণে অর্থনৈতিক দিক থেকে ভুগছিল ফুটবলের দেশ ব্রাজিল। সেই সময় দেশের সরকার নতুন রাজধানী তৈরি করতে অতিরিক্ত পরিমাণে টাকা ছেপেছিল। ফল হয়েছিল উল্টো।
3
13
১৯৮০ সালে মধ্যে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে যায়। নতুন প্রেসিডেন্ট ক্ষমতায় আসেন। নতুন পরিকল্পনা তৈরি করেন। দ্রব্যমূল্য এবং বিভিন্ন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে দেওয়া হয়। কিন্তু সেই পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়। প্রেসিডেন্টকে ইমপিচ করা হয়। এই প্রক্রিয়া চলতে থাকে।
4
13
৩১ বছর আগে চড়া মুদ্রাস্ফীতিতে ডুবে গিয়েছিল ব্রাজিল। প্রতি মাসে ৮০ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছিল জিনিসপত্রের দাম। অর্থাৎ, আজ একটি ডিমের দাম এক ডলার হলে আগামীকাল তা হয়ে যাবে দুই ডলার। এভাবে এক বছর পরে ওই একটি ডিমের দাম গিয়ে দাঁড়াতো এক হাজার ডলার। মুদিখানায় দ্রব্যের মূল্য বদলে যেত রোজ। দাম বৃদ্ধি হওয়ার আগেই প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার হিড়িক পড়ে যেত।
5
13
১৯৯২ সালে নতুন মোড়। এক নতুন অর্থমন্ত্রীকে নিয়োগ করা হয়। তাঁর অর্থনীতি সম্পর্কে সম্যক কোনও ধারণাই ছিল না। নতুন অর্থমন্ত্রী কোনও উপায় দেখতে না পেয়ে অর্থনীতিবিদ এডমার বাচা-কে ডেকে পাঠান এবং তাঁর সাহায্য চান।
6
13
এডমার এবং তাঁর তিন বন্ধু সেই সময় ব্রাজিলের মুদ্রাস্ফীতি নিয়ে গবেষণা করছিলেন। রিও-র ক্যাথলিক ইউনিভার্সিটিতে বসে তাঁরা এর সমাধান খুঁজে বার করার চেষ্টা করছিলেন। তাঁদের সামনে সুযোগ চলে আসে নিজেদের তত্ত্বকে প্রতিষ্ঠা করার।
7
13
দেশের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করে তাঁর সাক্ষাৎকার চেয়েছিলেন এডমার নিজের সন্তানদের জন্য। সেখানে প্রেসিডেন্ট লিখেছিলেন, ''দয়া করে তোমাদের বাবাকে বলো দেশের স্বার্থে দ্রুত কিছু করতে।''
8
13
এডমার এবং তাঁর বন্ধুরা একটি অভিনব উপায় বার করলেন। যাঁর দু'টি মূল উদ্দেশ্য ছিল। এক, টাকা তৈরি করা কমিয়ে দেওয়া। দুই, মুদ্রার প্রতি জনগণের বিশ্বাস ফিরিয়ে আনা। কিন্তু কীভাবে? তাঁদের ব্যাখ্যা, মানুষকে বিশ্বাস করাতে হবে যে টাকার দাম পড়বে না।
9
13
এরপরে পদক্ষেপ অর্থনীতিবিদরা মিলিত ভাবে তৈরি করলেন 'ভার্চুয়াল মুদ্রা' ইউনিট অফ রিয়াল ভ্যালু (ইউআরভি)। সেই মুদ্রার দাম হবে সম পরিমাণ টাকার মতোই। কিন্তু, কোনও টাকা বা কয়েনের মাধ্যমে অস্তিত্ব থাকবে না।
10
13
জিনিসপত্রের মূল্য, বেতন এবং করব্যবস্থাকে ইউআরভি-র অংশ করা হল। এর ফলে ক্রুজেরিও দামে পরিবর্তন ঘটলেও ইউআরভি-র দাম একই জায়গায় থাকল। দেশের জনগণও ভাবতে লাগল ইউআরভি-কে নিয়ে।
11
13
ইউআরভি-র আত্মপ্রকাশের দিন সাংবাদিকরা এডমারকে প্রশ্ন করেছিলেন, ''প্রফেসর, আপনার কি মনে হয় কাল থেকে দেশে মুদ্রাস্ফীতি শেষ হয়ে যাবে।'' উত্তরে তিনি বলেন, ''হ্যাঁ, আমি প্রতিজ্ঞা করে বলছি।''
12
13
এর কয়েক বছরের মধ্যেই মুদ্রাস্ফীতি উধাও হয়ে যায় ব্রাজিলের অর্থনীতি থেকে। স্থিততা আসে অর্থনীতিতে। বিশ্বের অন্যতম রপ্তানিকারী দেশ হিসেবে সামনে এগিয়ে আসে ব্রাজিল। প্রায় ২০ কোটি মানুষকে দারিদ্রসীমার বাইরে আনতে সক্ষম হয় এই পরিকল্পনা।
13
13
বেশ কয়েকমাস ইউআরভি-র ব্যবহারের পর একটি ঐতিহাসিক ঘোষণা করে ব্রাজিল সরকার। ভার্চুয়াল মুদ্রা ইউআরভি-কে আসল টাকায় পরিণত করা কথা ঘোষণা করা হয়। জন্ম হয় 'রিয়াল'-এর। সমস্ত লেনদেন শুরু হয় 'রিয়াল'-এ। পরে এক সাক্ষাৎকারে এডমার জানিয়েছিলেন, এটিই ছিল তাঁদের পরিকল্পনা।