নতুন বছর শুরু হতে আর এক মাসেরও কম সময় বাকি, আর তার আগেই ঋণগ্রহীতাদের জন্য বড় সুখবর নিয়ে আসছে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক। ২০২৫ সালের ১ এপ্রিল থেকে সারা দেশে স্বর্ণ-ঋণের ক্ষেত্রে একক, মানসম্মত নিয়ন্ত্রক কাঠামো কার্যকর হতে চলেছে। শুধু তাই নয়, প্রথমবারের মতো ভারতের আর্থিক ব্যবস্থায় আনুষ্ঠানিকভাবে প্রবেশ করতে চলেছে সিলভার বা রূপা-ঋণ।
2
9
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই) চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ‘রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া ডিরেকশন্স, ২০২৫’ জারি করে। এই নির্দেশনার লক্ষ্য— ধারদাতা ও ধারগ্রহীতা উভয়ের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে মূল্যায়ন, জামানত ব্যবস্থা, দলিলপত্র, ঋণ অনুমোদন ও এলটিভি অনুপাতের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়াগুলিকে মানসম্মত করা। ক্রমবর্ধমান স্বর্ণ-রূপার দামের প্রেক্ষিতে এই নতুন নিয়ম ভারতজুড়ে সোনা ও রূপা বন্ধক রেখে নেওয়া ঋণের ক্ষেত্রে এক বড় পরিবর্তন আনবে বলে মনে করা হচ্ছে।
3
9
১ ডিসেম্বর লোকসভায় দেওয়া লিখিত উত্তরে অর্থ প্রতিমন্ত্রী পঙ্কজ চৌধুরী জানান, “আরবিআই ৯ এপ্রিল ২০২৫-এ গোল্ড কল্যাটারাল–সংক্রান্ত খসড়া নির্দেশিকা জনমত গ্রহণের জন্য প্রকাশ করেছিল।” তিনি আরও জানান, খসড়া নির্দেশিকা প্রকাশের পর বিভিন্ন স্টেকহোল্ডার আরবিআইকে অনুরোধ জানায় যেন ছোট ঋণগ্রহীতা—বিশেষত কৃষকদের—কিছু কঠোর নিয়ম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
4
9
মূলত, আরবিআই প্রস্তাব করেছিল যে ঋণ অনুমোদনকে ধারগ্রহীতার পরিশোধ ক্ষমতার সঙ্গে যুক্ত করা হবে। কিন্তু ক্ষুদ্র ঋণগ্রহীতাদের জন্য এই ধরনের প্রমাণ জমা দেওয়া অনেক সময় কঠিন হয়ে ওঠে। তাই তাদের ক্ষেত্রে এই শর্ত শিথিল করার অনুরোধ ওঠে। একইভাবে, আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব ছিল— সোনা এনে ঋণ নিতে হলে তার মালিকানার প্রমাণ দেখাতে হবে। স্টেকহোল্ডারদের যুক্তি, দেশের বেশিরভাগ সোনা উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া বা বহু বছর আগে কেনা, যার মালিকানার কোনও নথি সাধারণত থাকে না। ফলে মালিকানার বাধ্যতামূলক প্রমাণ ছোট ঋণগ্রহীতাদের জন্য সমস্যা তৈরি করতে পারে।
5
9
এই সব মতামত বিশ্লেষণ করে আরবিআই ৬ জুন ২০২৫-এ সংশোধিত ও চূড়ান্ত নির্দেশিকা জারি করে। নতুন নির্দেশনা এক নীতিভিত্তিক, সমন্বিত ও হার্মোনাইজড ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করেছে, যা ব্যাঙ্ক, এনবিএফসি-সহ সব নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানের ওপর সমানভাবে প্রযোজ্য হবে। এতে গোল্ড ও সিলভার–কল্যাটারাল ঋণের ক্ষেত্রে তদারকি ঘাটতি ও গ্রাহক-সুরক্ষার সমস্যাগুলিও সমাধান হবে।
6
9
ভারতে স্বর্ণঋণের প্রচলন বহু শতাব্দী ধরে থাকলেও, রূপা বন্ধক রেখে ঋণ নেওয়া এতদিন কেবলমাত্র কিছু সমবায় ব্যাংক, ছোট এনবিএফসি ও স্থানীয় ঋণদাতাদের মাধ্যমে অনানুষ্ঠানিকভাবে হয়ে আসছিল। এবার তা আনুষ্ঠানিকভাবে নিয়ন্ত্রিত কাঠামোর আওতায় আসছে ২০২৬ সালের এপ্রিল থেকে।
7
9
এলটিভি অনুপাত: সোনা বা রূপা বন্ধক রেখে ভোগ্যঋণের ক্ষেত্রে ২.৫ লাখ টাকার নিচে ঋণের সর্বোচ্চ এলটিভি ৮৫%, আর ৫ লাখ টাকার বেশি ঋণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ অনুমোদনযোগ্য অনুপাত ৭৫%। আগে সাধারণত গোল্ড লোনের এলটিভি ৭৫% পর্যন্ত ছিল এবং তা বজায় রাখার বাধ্যবাধকতা ছিল না।
8
9
মানসম্মত মূল্যায়ন ও অ্যাসেয়িং: স্বর্ণ/রূপার বিশুদ্ধতা ও ওজন নির্ণয়ের জন্য বাধ্যতামূলকভাবে একক ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়া ব্যবহার করতে হবে। গ্রাহককে অ্যাসেয়িংয়ের সময় উপস্থিত থাকতে দেওয়া হবে, আর যেকোনও কাটছাঁট লিখিতভাবে জানাতে হবে। আগে এক্ষেত্রে কোনও一 নিয়ম ছিল না, যার ফলে মূল্যায়নে ব্যাপক ভিন্নতা দেখা যেত।
9
9
নতুন নিয়মগুলি কার্যকর হলে দেশের স্বর্ণ ও রূপা–ঋণ বাজার আরও সুসংগঠিত, স্বচ্ছ ও গ্রাহকবান্ধব হবে বলে মনে করা হচ্ছে।