জুবিন গর্গের মৃত্যু মামলায় নয়া মোড়। প্রয়াত গায়কের তুতো ভাই এবং অসম পুলিশের ডিএসপি সন্দীপন গর্গকে বুধবার, ৮ অক্টোবর সিঙ্গাপুরে জুবিনের মৃত্যুর ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে এক সিনিয়র কর্মকর্তা জানিয়েছেন। এটি এই মামলার পঞ্চম গ্রেপ্তার।

গ্রেপ্তার হওয়া ব্যান্ড সদস্যদের একজন অভিযোগ করেছেন যে, জুবিনকে সিঙ্গাপুরে বিষ প্রয়োগ করে হত্যা করা হয়েছিল। এর আগে নর্থ ইস্ট ইন্ডিয়া ফেস্টিভ্যালের প্রধান আয়োজক শ্যামকানু মহন্ত, গায়কের ম্যানেজার সিদ্ধার্থ শর্মা এবং তাঁর দুই ব্যান্ড সদস্য— শেখর জ্যোতি গোস্বামী এবং অমৃত প্রভা মহন্তকে পুলিশ আটক করেছিল।

বুধবার বিশেষ তদন্ত দল (এসআইটি) প্রয়াত গায়কের তুতো ভাই এবং ডিএসপি সন্দীপনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পেশ করে। আদালত তাঁকে সাত দিনের পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে।

সিআইডির বিশেষ ডিআইজি মুন্না প্রসাদ গুপ্ত পিটিআইকে জানান, “আমরা সন্দীপন গর্গকে গ্রেপ্তার করেছি। এখন প্রয়োজনীয় আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হচ্ছে।”

তিনি নিশ্চিত করেছেন যে বিশেষ তদন্ত দল (এসআইটি) শিঘ্রই সিঙ্গাপুরের সেই অসমীয়া দলের অন্যান্য সদস্যদেরও তলব করবে, যাঁরা ঘটনার সময় জুবিনের সঙ্গে ছিলেন। তিনি বলেন, “রূপকমল কালিটা নামের একজন ব্যক্তি এসআইটির সামনে হাজির হয়েছেন এবং তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। সিঙ্গাপুরে তদন্ত পরিচালনার জন্য একটি বিশেষ প্রক্রিয়া রয়েছে, এবং আমরা সব ধরনের আইনি নিয়ম মেনে সেই প্রক্রিয়াই অনুসরণ করছি।”

গত কয়েকদিন ধরে সিঙ্গাপুরে গায়কের মৃত্যুর ঘটনাকে ঘিরে ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে একাধিকবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। সন্দীপন গর্গ, যিনি ডেপুটি এসপি এবং জুবিন গার্গের তুতো ভাই, সিঙ্গাপুরে গায়কের ডুবে যাওয়ার ঘটনার সময় তাঁর সঙ্গেই উপস্থিত ছিলেন।
আরেক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, “আমাদের টিম তাঁকে আদালতে নিয়ে গিয়েছে। আমরা পুলিশ হেফাজতের আবেদন করব।” মামলায় আগে গ্রেপ্তার হওয়া চারজন বর্তমানে পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন।

জুবিন গর্গ ১৯ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুরে স্কুবা ডাইভিংয়ের সময় মারা যান। তিনি নর্থ ইস্ট ইন্ডিয়া ফেস্টিভ্যালের চতুর্থ সংস্করণে অংশ নিতে সেই দেশে গিয়েছিলেন, যা আয়োজন করেছিলেন শ্যামকানু মহন্ত এবং তাঁর সংস্থা।

এখানেই শেষ নয়। জুবিনের রহস্যজনক মৃত্যু নিয়ে তদন্তে আরও এক গুরুত্বপূর্ণ মোড় এসেছে। জুবিন গর্গের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কর্মী এবং এক সহযোগীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে প্রায় এক কোটি টাকা আর্থিক লেনদেন খুঁজে পেয়েছে স্পেশ্যাল ইনভেস্টিগেশন টিম (এসআইটি)। এই বিপুল পরিমাণ অর্থের লেনদেন, যা গত চার-পাঁচ বছরে হয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জুবিনের মৃত্যুর সঙ্গে এর কোনও যোগসূত্র আছে কি না, তা-ও তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তকারীরা এটিকে মামলার একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্রেক-থ্রু হিসাবে দেখছেন।

জুবিনের মৃত্যুতে অসম তথা গোটা দেশে শোকের ছায়া। শুধু গান দিয়েই নয়, জীবনের নানা ক্ষেত্রেই একের পর এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করে মানুষের মন জয় করেছিলেন গায়ক। আপাতত তাঁর মৃত্যুরহস্যের জট কবে খুলবে, সেই অপেক্ষাতেই রয়েছেন সকলে।