নিজস্ব সংবাদদাতা: মনোজ মিত্রের প্রয়াণের খবরে মন ভাল নেই বর্ষীয়ান অভিনেতা রঞ্জিত মল্লিকের। একসঙ্গে বহু ছবিতে কাজ করার পাশাপাশি মঞ্চেও অভিনয় করেছেন তাঁরা। একসঙ্গে হাজির হয়েছিলেন বিদেশের মঞ্চেও। মনোজ মিত্র-রঞ্জিত মল্লিকের কথা উঠতেই বাঙালি ছবিপ্রেমী দর্শকের স্মৃতিপটে ভেসে ওঠে একটিই নাম, ‘শত্রু’। অঞ্জন চৌধুরী পরিচালিত ১৯৮৪-র এই ছবিতে মনোজ মিত্র অভিনীত খলনায়ক নিশিকান্ত সাহা বাংলা চলচ্চিত্রে সিরিও-কমিক ভিলেনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উদাহরণ হয়ে থাকবে। এবং তাঁর পাশাপাশি সেই ছবিতেই রঞ্জিত মল্লিক অভিনীত চরিত্র শুভঙ্কর সান্যাল বাংলা ছবির শ্রেষ্ঠ উদাহরণ হয়ে থাকবে একজন সৎ, রাফ অ্যান্ড টাফ পুলিশ অফিসারের।
প্রয়াত হলেন নাট্যকার মনোজ মিত্র। বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর। মঙ্গলবার সকাল ৮টা ৫০ মিনিটে কলকাতার একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। বেশ কয়েক বছর ধরেই বার্ধ্যক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন মনোজ। মঙ্গলবার সকাল ৮.৫০ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। গত সেপ্টেম্বর মাসে গুরুতর অসুস্থ হয়েছিলেন শিল্পী। বেশ সঙ্কটজনক ছিল তাঁর অবস্থা। তারপরই এদিন এল দুঃসংবাদ। দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন বর্ষীয়ান এই নাট্য ব্যক্তিত্ব। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতেও অসুস্থ বোধ করার পর অভিনেতাকে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেবারই তাঁর বুকে পেসমেকার বসেছিল।
তপন সিংহ, তরুণ মজুমদার, বাসু চট্টোপাধ্যায়ের একাধিক ছবিতে অভিনয় করেছিলেন মনোজ। সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় ‘গণশত্রু’ এবং ‘ঘরে বাইরে’-তেও অভিনয় করেন তিনি। তা ছাড়াও মূলধারার একাধিক সিনেমায় পরিচিত মুখ ছিলেন মনোজ। তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া বাংলা থিয়েটারের জগতের পাশাপাশি টলিপাড়াতেও। মনোজ মিত্রের প্রয়াণের খবরে মন ভাল নেই বর্ষীয়ান অভিনেতা রঞ্জিত মল্লিকের। একসঙ্গে বহু ছবিতে কাজ করার পাশাপাশি মঞ্চেও অভিনয় করেছেন তাঁরা। একসঙ্গে হাজির হয়েছিলেন বিদেশের মঞ্চেও। মনোজ মিত্র-রঞ্জিত মল্লিকের কথা উঠতেই বাঙালি ছবিপ্রেমী দর্শকের স্মৃতিপটে ভেসে ওঠে একটিই নাম, 'শত্রু'। অঞ্জন চৌধুরী পরিচালিত ১৯৮৪-র এই ছবিতে মনোজ মিত্র অভিনীত খলনায়ক নিশিকান্ত সাহা বাংলা চলচ্চিত্রে সিরিও-কমিক ভিলেনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উদাহরণ হয়ে থাকবে। এবং তাঁর পাশাপাশি সেই ছবিতেই রঞ্জিত মল্লিক অভিনীত চরিত্র শুভঙ্কর সান্যাল বাংলা ছবির শ্রেষ্ঠ উদাহরণ হয়ে থাকবে একজন সৎ, রাফ অ্যান্ড টাফ পুলিশ অফিসারের।
আজকাল ডট ইন রঞ্জিত মল্লিকের কাছে পৌঁছতেই, চেনা ভঙ্গিতে ‘শত্রু’র নায়ক বলে ওঠেন, “খুব ভুগছিলেন অনেকদিন ধরেই। খবর রাখতাম। মনোজবাবুর চলে যাওয়ার কথাটা শুনে খুব মনখারাপ হয়ে গিয়েছে। ওঁর সঙ্গে পরিচয় তো আজকের নয়, দীর্ঘ বছরের। প্রায় পঞ্চাশ বছরের!
অত্যন্ত মেধাবী, জ্ঞানী এবং গুণী একজন মানুষ ছিলেন মনোজবাবু। একই ভাবে অত্যন্ত রসিক। এত মজার-মজার কথা বলতে পারতেন যে শুনে না হেসে থাকা যেত না। ‘শত্রু’ ছবির আউটডোর শুটিং হয়েছিল বোলপুর, শান্তিনিকেতনের বিভিন্ন জায়গা জুড়ে। মনোজবাবুর সঙ্গে অনেক সময় কাটানোর সুযোগ পেয়েছিলাম। ক্যামেরা চললেই আমরা পরস্পরের ‘শত্রু’ এবং পরিচালকের মুখে ‘কাট’ শোনামাত্রই একগাল হেসে পাশে এসে বসে শুরু করতেন আড্ডা। কোপাইয়ের ধারে বসে কত আড্ডা মেরেছি আমরা। আমিও ওঁর কথা শোনার জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকতাম। আন্তর্জাতিক ছবি নিয়ে যেমন আলোচনা হতো, তেমনই বাংলা তথা দেশের নাটক নিয়ে বহু তথ্য ওঁর থেকে পেতাম। বিদেশেও একসঙ্গে নাটকে অভিনয় করেছি আমরা। ”
“ ‘শত্রু’ ছবিতে 'নিশিকান্ত সাহা' চরিত্রটিকে মনোজ মিত্র যেভাবে ফুটিয়ে তুলেছিলেন, এককথায় অসাধারণ। মজার অথচ নিষ্ঠুর। ঠান্ডা মাথার বদমাইশ কেমন হয়, তা দেখিয়ে দিয়েছিলেন উনি। শিখেছিলাম সেই অভিনয়। সত্যি বলছি, শিখেছিলাম। আর ‘বাঞ্ছারামের বাগান’। মঞ্চে ও বড়পর্দায়-দু'জায়গাতেই মনোজবাবুর অভিনয় দেখেছিলাম। দুটোই অসাধারণ! আমি তো মনে করি, বাংলা ছবির মহামূল্য সম্পদ এই ছবি। অভিনয় হিসাবে ওঁর দক্ষতা কোন পর্যায়ের, এই এক ছবিতেই তা বোঝা যায়। একটা উদাহরণ দেওয়ার লোভ সামলাতে পারছি না। এই ছবিতে তাঁর অভিনীত চরিত্রের বিভিন্ন বয়স অনুযায়ী স্বরক্ষেপণ করা থেকে শুরু করে হাত-পা চালনা যেভাবে করেছিলেন, এককথায় সুপার্ব...বহু বছর পর মনোজবাবুর সঙ্গে পরে আরও একটি ছবিতে কাজ করেছিলাম। নাম ‘তিনমূর্তি’। দীপঙ্কর দে-ও ছিলেন। তপন সিন্হার লেখা চিত্রনাট্য। সে অভিজ্ঞতাও ভারি সুন্দর।”
কথার একেবারে শেষে ‘শত্রু’র কথা বলতে গিয়ে বেশ খানিকটা আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন ‘পুলিশ অফিসার শুভঙ্কর সান্যাল’। কেঁপে ওঠে গলা। সামান্য থেমে থেমে বললেন, “এই কথাগুলো বলছি আর বারবার মনে পড়ছে মনোজবাবু আর নেই। পুরনো স্মৃতিগুলো মাথায় ভিড় করে আসছে। কত আড্ডা, হাসি, ভাললাগা। এর থেকে বেশি আর কি বলি... খুব খারাপ লাগছে।”
