মৃত্যু কেবল শরীর কেড়ে নিতে পারে, কিন্তু কিংবদন্তি মানুষকে নয়। আজও তিনি প্রাণের পুরুষ, স্বপ্নের নায়ক— মহানায়ক উত্তম কুমার। ১০০তম জন্মবার্ষিকীর শুরুতে বাঙালি তাঁকে নতুন করে আবিষ্কার করে, আবারও মনে করিয়ে দেয়— উত্তমকুমার ছিলেন না কোনও সাধারণ তারকা।

 

এই বিশেষ দিনে এক অনন্য আক্ষেপের কথা প্রথমবার ভাগ করে নিলেন অভিনেতা-পরিচালক চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তী। প্রকাশ্যে আনলেন এমন এক অজানা অধ্যায়, যা হলে হয়তৈ বাংলার সিনেমার ইতিহাসই অন্যভাবে লেখা থাকত।

 

 

চিরঞ্জিতের মুখেই শোনা গেল সেই কাহিনি। বহু বছর আগে তিনি নিজের লেখা এক চিত্রনাট্য শুনিয়েছিলেন উত্তম কুমারকে। 'মহানায়ক: মন দিয়ে শুনেছিলেন গল্প, পছন্দও করেছিলেন। চিরঞ্জিতের কথায়,

“আমার পিঠ চাপড়ে বলেছিলেন— তুমি লিখেছ, আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। কিন্তু ভীষণ ভাল লেগেছে।”

 

কিন্তু তখনকার উত্তম কুমার ব্যস্ত ছিলেন প্রায় ন’টি অসমাপ্ত ছবির কাজে। তাই চিরঞ্জিতের সেই ছবিটা আর হয়ে ওঠেনি। এখানেই জমে রইল তাঁর আজীবনের আক্ষেপ— “যদি হত, তাহলে আমার জীবনটাই বদলে যেত।”

 

 

এরপর আসে গল্পের আরও হৃদয়বিদারক অংশ। মৃত্যুর আগের দিনই টেকনিশিয়ান স্টুডিওতে দেখা হয়েছিল দু’জনের। প্রবল বৃষ্টির দিনে অটোয় করে স্টুডিওতে পৌঁছেছিলেন চিরঞ্জিত। সেখানে চলছিল ‘ওগো বধূ সুন্দরী’ ছবির একটি দৃশ্যের শুটিং। উত্তম কুমার সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে সেই বিশেষ দৃশ্যের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।

সেই সময়ই শেষবারের মতো আলাপ। উত্তম কুমার খোঁজ নিয়েছিলেন, “সব ভাল তো?” তারপর চলে গিয়েছিলেন তাঁর মেকআপ রুমে। সেখান থেকেই এক পার্টিতে, তারপর সোজা বেলভিউ নার্সিংহোম। আর সেখানেই শেষ অধ্যায়।

 

চিরঞ্জিত স্মৃতিচারণ করে বললেন—

“ভাবতেই পারিনি সেটাই শেষ দেখা। পরদিন খবর এল— মহানায়ক আর নেই। মনে হল, আমার ভাগ্যটাও যেন তাঁর সঙ্গে চলে গেল।”

 

 

চিত্রনাট্যটির পরিণতি অবশ্য একেবারে থেমে যায়নি। পরবর্তীতে চিরঞ্জিত সেটি নিয়ে পৌঁছেছিলেন অমিতাভ বচ্চনের কাছে। কী ঘটেছিল তারপর? চিরঞ্জিত বলেন, “সেটা অনেক বড় গল্প। তবে গোটা ব্যাপারটাই ছিল সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক।”

 

উত্তমকুমারের জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন চিরঞ্জিত চক্রবর্তী ও তাঁর স্ত্রী রত্নাবলী। সেখানে প্রদর্শিত হচ্ছিল মহানায়কের ব্যক্তিগত বহু স্মৃতিচিহ্ন— তাঁর ব্যবহৃত কাপ-সসার, বিখ্যাত পোশাক, এমনকী ‘চিড়িয়াখানা’ ছবির টেলিফোনটিও। সেদিন উপস্থিত ছিলেন সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়-সহ আরও বহু তারকা। সকলের মধ্যেই একটাই সুর— উত্তম কুমার শুধু একজন অভিনেতা নন, তিনি এক অনুভূতি, যিনি মৃত্যু পেরিয়েও বেঁচে থাকেন প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে।