বাংলা সিনেমার জন্য বরাবরই এগিয়ে এসেছেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর নিজের প্রযোজনা সংস্থাও রয়েছে। আর এবার তিনি বাংলায় সিনেমা হলও বানাতে চলেছেন! বৃহস্পতিবার ‘মহানায়ক সম্মান’ দেওয়ার অনুষ্ঠানে তেমনই ইঙ্গিত দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
২০১২ সাল থেকে প্রতিবছরই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে আয়োজিত হয় ‘মহানায়ক সম্মান’। এবছর সেই অনুষ্ঠানে প্রসেনজিতের সিনেমা হলের মডেলের কথা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “প্রসেনজিৎ একটা ভাল মডেল করেছে। অফিসাররা দেখে এসে আমাকে বলেছে। প্রায় একশটা জায়গায় ৪০ -৫০ জনের বসার মতো একটা সিনেমা ঘর বানাচ্ছে প্রসেনজিৎ। ওই হলটা দেখে আমরা খুশি হয়েছি।”
মুখ্যমন্ত্রীর আরও সংযোজন, “ও যেভাবে সিনেমা ঘর বানাচ্ছে তাতে সিনেমাটা আরও বেশি ছড়িয়ে পড়বে। এটা যদি হয় তাহলে প্রত্যন্ত এলাকার আরও বেশি মানুষ সিনেমা দেখতে পাবে। আর ওরা যে ছবিগুলো বানাচ্ছে সেগুলো মার্কেটও পাবে। কর্মসংস্থানেরও সুযোগ তৈরি হবে”। এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মঞ্চে একথা বলার সময়ে হাজির ছিলেন খোদ প্রসেনজিৎও। তবে মুখ্যমন্ত্রী বিষয়টি যে এভাবে সামনে আনবেন, তা যে নায়ক আন্দাজ করতে পারেননি তা তাঁর অভিব্যক্তিতে বেশ প্রকাশ পেয়েছে!
আরও পড়ুনঃ বাংলা ছবির জগতে 'মহানায়ক' সম্মান পেলেন গার্গী-গৌতম-ইমন-রূপঙ্কর, তালিকায় রয়েছেন আর কারা?
বর্তমানে কলকাতা সহ গোটা বাংলায় সিঙ্গল স্ক্রিনগুলোর আর্থিক অবস্থা মোটেও ভাল নয়। বিগত কয়েক বছরে বেশ কিছু সিঙ্গল স্ক্রিনের সিনেমা হল কোনওটা বন্ধ হয়ে গিয়েছে, কোনওটা আবার বদলে গিয়েছে শপিং মলে। এই পরিস্থিতিতে বেশ কয়েক বছর আগে প্রযোজনা সংস্থা এসভিএফ শহরতলি ও মফস্বলের সিঙ্গল স্ক্রিনগুলোকে নিয়ে এসভিএফ সিনেমা শুরু করেছিল। কিন্ত প্রসেনজিৎ ঠিক তেমনটা চাইছেন না বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর কথা থেকে যেটুকু আভাস পাওয়া গিয়েছে তা হল টলিউডের বুম্বা দা আরও ‘মাইক্রো ফরম্যাট’-এ বিষয়টি করতে চাইছেন। তবে গোটা কর্মকাণ্ডের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা কবে হবে, সেবিষয়ে স্পষ্ট জানা যায়নি।
প্রসঙ্গত, এবছর মহানায়ক শ্রেষ্ঠ সম্মান পেয়েছেন বাংলা সিনেমার অন্যতম পরিচালক গৌতম ঘোষ। মহানায়ক সম্মান পেয়েছেন সঙ্গীতশিল্পী রূপঙ্কর বাগচী, ইমন চক্রবর্তী, অভিনেত্রী গার্গী রায়চৌধুরী। তবে শুধুই অভিনেতা বা সঙ্গীতশিল্পী নয়, মহানায়ক সম্মান পেয়েছেন রূপটান শিল্পী সোমনাথ কুণ্ডু এবং শিল্প নির্দেশক আনন্দ আঢ্য। এদিন পুরস্কার প্রদান মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, নচিকেতা চক্রবর্তী, অম্বরীশ ভট্টাচার্য, ইন্দ্রনীল সেন, ববি হাকিম, অরূপ বিশ্বাস, স্বরূপ বিশ্বাস, সৌমিতৃষা কুণ্ডুর মতো ব্যক্তিত্বরা।

শ্রেষ্ঠ পরিচালক হিসেবে এই সম্মান উঠল গৌতম ঘোষের হাতে। সেরা অভিনেত্রীর সম্মান পেলেন গার্গী রায়চৌধুরী, সেরা গায়িকা হিসেবে এই পুরস্কার পেলেন ইমন চক্রবর্তী। সেরা গায়ক হিসেবে রূপঙ্কর বাগচীর কাছে গেল এই সম্মান। শ্রেষ্ঠ রূপটান শিল্পীর সম্মান পেলেন সোমনাথ কুণ্ডু। সেরা প্রোডাকশন ডিজাইনের জন্য এই পুরস্কার উঠল আনন্দ আঢ্যের হাতে।
বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্তম স্মরণেও সেই একই কথা যেন উঠে এল। এদিন আক্ষেপ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "আমার জীবনের আপসোস সুচিত্রা সেনের মৃত্যুর কয়েকদিন আগেও দেখা হয়েছে ওঁর সঙ্গে। সুপ্রিয়াদির সঙ্গেও আমার দীর্ঘদিনের যোগাযোগ ছিল। উত্তম কুমারের সঙ্গে যাঁরা কাজ করেছেন তাঁদের সকলের সঙ্গে দেখা হয়েছে আমার। কিন্তু উত্তম কুমারের সঙ্গেই দেখা হল না। ছোটবেলায় মায়ের সঙ্গে হাত ধরে ভবানীপুরের বহু সিনেমা হলে মহানায়কের ছবি দেখেছি। আমি হয়তো ঘুমিয়ে পড়তাম। কিন্তু ওঁর ছবির গানগুলো মনে রয়ে যেত। কী শ্রুতিমধুর।"
