বলিউডের কিংবদন্তি চিত্রনাট্যকার তিনি। ‘শোলে’, ‘দিওয়ার’-এর মতো কালজয়ী ছবির অন্যতম গল্পকার ও চিত্রনাট্যকার তিনি, সেলিম খান। বর্তমানে বয়সের ভারে হয়তো আজ কিছুটা নুব্জ হয়েছেন, কিন্তু চিন্তাভাবনা আর স্পষ্টভাষী চরিত্র আজও আগের মতোই অটুট। সম্প্রতি, এক সাক্ষাৎকারে তিনি নিজের ব্যক্তিজীবন, বিশেষ করে ধর্ম, পরিবার আর দাম্পত্য জীবনের নানা অজানা কথা অকপটে তুলে ধরলেন।

 

আরও পড়ুন: গায়িকার জামার ফাঁকে উপচে পড়ছে অনাবৃত ওই অংশটা, নিজেকে সামলাতে না পেরে প্রকাশ্যেই এ কী করলেন ভোজপুরি অভিনেতা!

সেলিম খানের সঙ্গে সলমা খানের (বিয়ের আগে সুশীলা চরক) দাম্পত্যের বয়স আজ প্রায় ৬০ বছর। দুই ভিন্ন ধর্ম, ভিন্ন সংস্কৃতি—তবু মিলেমিশে দাঁড়িয়ে আছে এই সম্পর্ক। কিন্তু এই মিলন সহজ ছিল না। সলিম খান নিজেই জানিয়েছেন, প্রথমে সালমার পরিবার এই বিয়েতে সায় দেয়নি। শ্বশুরকে তিনি তখনই আশ্বস্ত করেছিলেন—“ধর্ম নিয়ে ঝগড়া হবে না, সংসার চলবে ভালবাসায়।” কথার দাম রেখেছেন তিনি, কারণ এত বছর পরেও তাঁদের সংসার অটুট রয়েছে।

 

সেলিম খান জানালেন, ছোটবেলা থেকেই তিনি হিন্দু সমাজ ও সংস্কৃতির ভেতরে বড় হয়েছেন। গণেশ চতুর্থী বা দীপাবলির মতো উৎসবে তিনি ভীষণভাবে মেতে উঠতেন। একসময় সেই অভ্যাসই তাঁর জীবনের অংশ হয়ে গিয়েছিল। তাই বিয়ের পরেও সেই ধর্মীয় বৈচিত্র্যের প্রতি সম্মান কখনও ফিকে হয়নি। এবং তাই সলমার সঙ্গে বিয়ের অনেক আগে থেকেই তাঁদের বাড়িতে গণেশ চতুর্থী পালন করা হত। 

 

তবে সবচেয়ে আলোচনায় এসেছে তাঁর গরু নিয়ে মন্তব্য। সলিম খান স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন,তাঁদের ধর্ম অনুযায়ী গোরুর দুধ মাতৃদুগ্ধের পরিপূরক। তাঁর কথায়, “গরু আমাদের জন্য অত্যন্ত পবিত্র। গরুর দুধ হল মাতৃদুগ্ধের বিকল্প। তাই গরু হত্যা সম্পূর্ণ হারাম। আমার পরিবারে আজও গরুর মাংস খাওয়া হয় না।” তাঁর এই অকপট মন্তব্য শুধু বলিউডে নয়, সমাজের বৃহত্তর পরিসরেও আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

 

 

সেলিম খানের এই বক্তব্যে আবারও প্রতিফলিত হল তাঁর ধর্মনিরপেক্ষ ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি। বলিউডে তিনি যেমন কালজয়ী সব ছবির চিত্রনাট্যের জন্ম দিয়েছেন, তেমনই বাস্তব জীবনে রেখে গেছেন সহিষ্ণুতার এক দৃষ্টান্ত। শুধু ধর্ম বা রীতি নয়, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি ধর্মনিরপেক্ষতার পথ বেছে নিয়েছেন।

 

আজ যখন দেশজুড়ে ধর্মীয় বিভাজন আর বিতর্ক প্রায় নিত্যদিনের বিষয়, তখন সেলিম খানের এই সরল অথচ গভীর কথাগুলো যেন নতুন দিশা দেখায়। তাঁর জীবনগাথা প্রমাণ করে—ভালোবাসা আর সম্মানই পারে দুই ভিন্ন বিশ্বাসকে এক সূত্রে গাঁথতে।

 

সেলিম-সলমার সংসার তাই শুধু একটি তারকা পরিবারের কাহিনি নয়, এটি আসলে ভারতীয় সমাজের সহাবস্থানের প্রতিচ্ছবি। গানের বা ছবির সংলাপের মতোই তাঁদের বাস্তব জীবনের এই কাহিনি অমলিন এবং নিঃসন্দেহে অনুপ্রেরণাদায়ক।