বহুদিন পর এসভিএফের প্রযোজিত ছবিতে পরিচালনা করলেন রাজ চক্রবর্তী। আগেই খবর ছিল, এবার বাবা-ছেলের সম্পর্কের টানাপোড়েনই রাজ ফুটিয়ে তুলবেন বড়পর্দায়। তবে এই ছবির আসল চমক হল কোর্টরুম ড্রামা। গল্পে দেখা যাবে, বয়স্ক মা-বাবার দেখভাল করে না ছেলে। তাই নিজের সন্তানের নামেই মামলা করেছেন বৃদ্ধ বাবা।
'শরদিন্দু বোস'-এর চরিত্রে দেখা যাবে মিঠুন চক্রবর্তীকে। আর তাঁর হয়ে মমলা লড়বেন শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায় ওরফে 'ইন্দ্রানী সেন'। বিচার সভায় ইন্দ্রানীকে বলতে শোনা যায়, "আমাদের দেশে ১৫ কোটিরও বেশি মানুষ ষাটোর্দ্ধ। আর বেশিরভাগ বয়স্ক মাতা-পিতা পরিত্যক্ত।"
শরদিন্দুবাবুর ছেলে ওরফে ঋত্বিক চক্রবর্তী বড় মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে বেশ উচ্চপদে রয়েছে। সে নিজের মতো দিনযাপন করে। স্বচ্ছলতার কোনও ফাঁক নেই তার সংসারে। কিন্তু মায়ের চিকিৎসার জন্য সে টাকা দিতে অপারগ। টাকা চাইতে এলে বাবাকে সে অপমান করে তাড়িয়ে দেয়। যে ছেলের জন্য নিজের সর্বস্ব বিলিন করে দিয়েছে শরদিন্দুবাবু, তার এমন পরিণতি! রাগে, দুঃখে ছেলের বিরুদ্ধে মামলা করে সে। এদিকে স্ত্রী তার বিরুদ্ধে যায়। মায়ের মন আর স্ত্রীর ধর্ম যেন গুলিয়ে যায় তার কাছে। আরও একবার নিজের চেনা ছক ভাঙলেন শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়। সঙ্গে পাল্লা দিলেন ঋত্বিক চক্রবর্তী। অন্যদিকে, বরাবরের মতোই দর্শক পর্দায় দেখবেন 'মিঠুন ম্যাজিক'।
ছবিতে মিঠুনের স্ত্রী'র চরিত্রে দেখা যাবে অনসূয়া মজুমদারকে। আর ঋত্বিকের স্ত্রী অর্থাৎ মিঠুনের বউমা হিসাবে অহনা দত্ত। কোর্ট কেসে ঋত্বিকের আইনজীবীর চরিত্রে খরাজ মুখোপাধ্যায়। বাড়ির পরিচারিকা 'লতা' চরিত্রে দেখা যায় সোহিনী সেনগুপ্তকে।
এ যেন চক্রবর্তী ভার্সেস চক্রবর্তীর লড়াই। ছবির প্রতিটি অংশ জুড়ে মিঠুন ও ঋত্বিকের অভিনয় ছাপিয়ে গিয়েছে একে অপরকে। মধ্যবিত্ত, অসহায় বাবার স্বার্থ ত্যাগ কখনও চোখ ভিজিয়েছে। কখনও আবার দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলা ছেলের আচরণ ক্ষুব্ধ করেছে। মাতৃস্নেহে অন্ধ অনসূয়া যেন প্রতিটা মায়ের উদাহরণ হয়ে উঠেছেন। 'কুসন্তান যদিও হয়, কুমাতা কদাপি নয়'। এই প্রবাদ আরও একবার সত্যি প্রমাণিত করছেন তিনি।
শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়ের সুদৃঢ় চরিত্র এবং চাঁচাছোলা ডায়লগ কোর্ট রুমকে মাতিয়ে রেখেছে। বাঙালি কোর্ট কেসের আসল স্বাদ ধরে রেখেছেন 'ইন্দ্রানী'। 'লতা'র চরিত্রে বরাবরের মতোই নজর কেড়েছেন সোহিনী সেনগুপ্ত। দায়িত্ববোধের উদাহরণ হিসাবে আরও একবার মন কাড়লেন। অন্যদিকে খরাজ মুখোপাধ্যায়ের চরিত্রের জোরালো ভাব চোখে পড়েনি। চরিত্রের খাতিরে আরও একটু দৃঢ়তা থাকলে পরিপূর্ণ হত। ছবিতে আরও কিছুটা সময় খরাজ মুখোপাধ্যায়ের চরিত্রের থাকা উচিৎ ছিল। এদিকে, 'রিয়া'র চরিত্রে নজরকাড়া অহনা দত্ত। বড়পর্দায় প্রথম কাজ হলেও পাল্লা দিয়ে নিজের চরিত্রের সবটুকু উজাড় করে দিয়েছেন।
বাবা-ছেলের এক অসম লড়াইয়ে মনের মণিকোঠার দ্বন্দেই পাশ রাজের 'সন্তান'। প্রত্যেক বাবা-মা এবং সন্তানকে নতুন করে ভাবাবে এই ছবি, তা হলফ করে বলাই যায়।
