বলিউডে বর্তমানে যে ছবিটি নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা, সেটি নিঃসন্দেহে আদিত্য ধরের পরিচালিত ‘ধুরন্ধর’। পাকিস্তানের করাচির লিয়ারি অঞ্চলের পটভূমিকায় তৈরি করা এই স্পাই-থ্রিলারে আছেন রণবীর সিং, অক্ষয় খান্না, সঞ্জয় দত্ত থেকে শুরু করে অর্জুন রামপাল, আর. মাধবন-তালিকাটি লম্বা। মুক্তির পর থেকেই বক্স অফিসে রীতিমতো সুনামি তৈরি করেছে এই ছবি। ইতিমধ্যেই ৬০০ কোটি টাকার বেশি আয় করে এটি ভারতীয় ছবির তালিকায় দশম সর্বোচ্চ আয়কারী ছবির জায়গা দখল করেছে। কিন্তু এর মাঝেই উঠে এসেছে নতুন প্রশ্ন, এ ছবির ‘বিরাট সাফল্য’ কি ইন্ডাস্ট্রিকে অস্বস্তিতে ফেলছে?

 

এই প্রশ্নটাই উস্কে দিলেন বিতর্কিত ও জনপ্রিয় পরিচালক রাম গোপাল বর্মা। সমাজমাধ্যমে করা এক দীর্ঘ পোস্টে তিনি দাবি করেন, ‘ধুরন্ধর’-এর মতো ছকভাঙা ও “দানবীয়” সাফল্য পাওয়া কোনও ছবি যখন আসে, তখন ইন্ডাস্ট্রির একটা বড় অংশ সেটিকে এড়িয়ে যেতে চায়। তাঁর কথায়, “এ ধরনের ছবিকে তারা উপেক্ষা করতে চায়, কারণ এর মানদণ্ডের সমান কাজ করার সাহস বা ক্ষমতা তাদের নেই। তাই এটাকে তারা এক দুঃস্বপ্ন ভাবতে চায়, যা নাকি সময়ের সঙ্গে মিলিয়ে যাবে।”

 

এতেই থামেননি ‘সত্য’, ‘সরকার’-এর মতো কাল্ট ছবির পরিচালক। গোটা ‘প্যান-ইন্ডিয়া’ ধাঁচের বৃহৎ প্রজেক্টগুলির প্রতিও কড়া ভাষায় সমালোচনা শোনা গেল তাঁর মুখে। তাঁর দাবি, এই বড় বাজেটের অনেক ছবিই তৈরি হয়েছে পুরনো ছক মেনে - ভিএফএক্স ঠাসা, বিশাল সেট, আইটেম গান আর তারকাখচিত হিরো-উপাসনার গল্প। কিন্তু ‘ধুরন্ধর’ প্রমাণ করেছে, সেই পুরনো ফর্মুলা আর আজকের দর্শকের কাছে যথেষ্ট নয়। বরং বিষয়বস্তু, নির্মাণ ও গল্প বলার শক্তিই এখন সবচেয়ে বড় চাবিকাঠি।

 

'রামু'র আরও দাবি, “আজকের পরিস্থিতিতে যে সব নির্মাতা এখনও পুরনো ফর্মুলা আঁকড়ে ধরে থাকতে চান, তাঁরা আসলে নিজেদের বানানো ‘মশলা দুনিয়ার’ মধ্যেই বন্দি হয়ে পড়বেন।” তাঁর মতে, ‘ধুরন্ধর’ শুধু বক্স অফিসে বড় হিট নয়, গত ৫০ বছরের মধ্যে অন্যতম আলোচিত ছবিও। আর সেই আলোচনার চাপই বাড়িয়ে তুলেছে ইন্ডাস্ট্রির অন্দরের অস্বস্তি।

 

যদিও এই বিতর্কের মাঝেই বাস্তবতা বলছে, দর্শক কিন্তু ছবিটির পাশে দাঁড়িয়েছেন নিঃসংকোচে। হল ভর্তি দর্শক, সোশ্যাল মিডিয়ায় তুমুল আলোচনা আর সমালোচনামহলের প্রশংসা...সব মিলিয়ে ‘ধুরন্ধর’ আজ এক বিশেষ ঘটনায় পরিণত। এও সত্য, ভারতীয় সিনেমা এখন এমন এক মোড়ে দাঁড়িয়ে, যেখানে নতুন চিন্তা ও নতুন ভাষার দাবি জোরালো। ফলে রাম গোপাল বর্মার বক্তব্য যতই বিতর্ক সৃষ্টি করুক, তাঁর তোলা প্রশ্নগুলো কিন্তু ইন্ডাস্ট্রির ভেতরেই নতুন আলোচনার জন্ম দিচ্ছে।

 

 

শেষ কথা, ‘ধুরন্ধর’ কেবল একটি সফল ছবি নয়, এটি সম্ভবত বলিউডের সামনে রাখা এমন এক আয়না যেখানে নিজেদের ভবিষ্যৎ পথ, শক্তি ও দুর্বলতা নতুন করে দেখার সুযোগ মিলছে। সেই আয়নায়তে কে কতটা সাহস নিয়ে তাকাতে পারে, সময়ই তার উত্তর দেবে।