‘গজিনি’ ছবির গল্প পছন্দ হয়নি! রীতিমতো ফিরিয়ে দিয়েছিলেন আর মাধবন। সঙ্গে এও বললেন— “পরে অবশ্য সুরিয়ার ঘাম-রক্ত ঝরানো ওই কাজ দেখে নিজেকে নিয়ে প্রশ্ন জেগেছিল।” একটা সময় ছিল, যখন ‘গজিনি’র মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করার প্রস্তাব এসেছিল আর মাধবনের কাছে। কিন্তু জানেন, সেই ছবির প্রস্তাব পেয়ে তিনি সোজা না বলে দিয়েছিলেন! কারণ? "গল্পটা ভাল লাগেনি।" সম্প্রতি এক ইনস্টাগ্রাম লাইভ সেশনে এই চমকপ্রদ তথ্য নিজেই ফাঁস করলেন মাধবন, যেখানে সঙ্গী ছিলেন দক্ষিণী সুপারস্টার সুরিয়া।
মাধবন অকপটে বলেন, “আমি ‘গজিনি’ ছবিতে কাজের প্রস্তাব পেয়েছিলাম, কিন্তু ছবির গল্পটা মন ছোঁয়নি। পরিচালক মুরুগাদোস স্যারকে তখন বলেও দিয়েছিলাম, ছবির দ্বিতীয়ার্ধের সঙ্গে কোনও একাত্ম বোধ করিনি। পরে জানলাম ছবিটা সুরিয়ার কাছে গিয়েছে। আর আমি তখনই খুশি হয়ে গেছিলাম, কারণ 'কাক্কা কাক্কা'-তে ওকে দেখেই বুঝেছিলাম, এই চরিত্রটা ওর জন্য একেবারে সঠিক।”
‘গজিনি’র জন্য সুরিয়ার একাগ্রতা দেখে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলেন মাধবন। তিনি বলেন, “সুরিয়া প্রায় এক সপ্তাহ নুন পর্যন্ত খায়নি, শুধুমাত্র শরীরচর্চার জন্য। ওর ওই পরিশ্রম দেখে আমি নিজের কাজকেই প্রশ্ন করতে শুরু করি। ভাবছিলাম— আমি কি যথেষ্ট দিচ্ছি আমার কেরিয়ারের জন্য? ওকে দেখে মনে হয়েছিল, আমি বোধহয় ঠিকঠাক চেষ্টা করছি না।” গজিনির পর সুরিয়ার কেরিয়ার যে ইতিহাস হয়ে উঠেছিল, তা আলাদা করে বলার নয়। কিন্তু মাধবনের এই স্বীকারোক্তি, এক বন্ধুর আর এক বন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা ও স্বচিন্তন জার্নির এক নিদর্শন।
২০০৫ সালের তামিল অ্যাকশন থ্রিলার 'গজিনি' পরিচালনা করেছিলেন এ.আর. মুরুগাদোস, প্রযোজক সেলম চন্দ্রশেখরন। ছবিতে ছিলেন সুরিয়া, আসিন, নয়নতারা সহ আরও অনেকে। পরে হিন্দিতে এই ছবি আবার রিমেক করেন মুরুগাদোস, আমির খান, আসিন ও জিয়া খানকে নিয়ে, যা ২০০৮ সালে মুক্তি পায়।
অন্যদিকে, মাধবন সম্প্রতি পরিচালক হিসেবে ডেবিউ করেছেন ‘রকেট্রি: দ্য নাম্বি ইফেক্ট’ দিয়ে। দেশের গর্ব, প্রাক্তন ইসরো বিজ্ঞানী নাম্বি নারায়ণনের জীবনের উপর ভিত্তি করে তৈরি সেই ছবি দর্শকদের কাছ থেকে দারুণ প্রশংসা কুড়িয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০০১ সালে ‘রহনা হ্যায় তেরে দিল মে’ দিয়ে বলিউডের চিরসবুজ প্রেমিক-নায়কের তকমা পেয়েছিলেন আর মাধবন। কিন্তু ২০২৫-এ এসে নিজেই জানিয়ে দিলেন— ‘আপ জ্যায়সা কোই’-ই হতে চলেছে তাঁর শেষ রোম্যান্টিক ছবি! নেটফ্লিক্সে সদ্য মুক্তি পাওয়া এই রোম্যান্টিক-ফ্যামিলি ড্রামা ইতিমধ্যেই দর্শকের মন জয় করেছে। এক সাক্ষাৎকারে মাধবন বললেন,“আমি এমন একটা গল্প খুঁজছিলাম, যেখানে নিজের বয়স অনুযায়ী রোম্যান্স দেখানো যায়। এটা হয়তো এরকম ছবিতে অভিনয় করার আমার শেষ সুযোগ, তাই না বলার কোনও কারণ ছিল না।”
অন্যদিকে, রোম্যান্স থেকে রকেট সায়েন্স, খলনায়ক থেকে থ্রিলার—মাধবন মানেই যেন বিস্ময়। ‘রেহনা হ্যায় তেরি দিল ম্যাঁয়’-এর পর মাধবনকে দর্শক ধীরে ধীরে খুঁজে পেয়েছেন নানা ঘরানার ছবিতে—‘রকেট্রি: দ্য নাম্বি ইফেক্ট’, ‘বিক্রম বেদা’, এবং সাম্প্রতিক সুপারন্যাচারাল থ্রিলার ‘শয়তান’-এ তাঁর নেগেটিভ রোলও দর্শকদের মুগ্ধ করেছে। ধার্মাটিক এন্টারটেইনমেন্ট-এর ব্যানারে করণ জোহর, আদার পুনাওয়ালা, অপূর্ব মেহতা ও সোমেন মিশ্র প্রযোজিত এই সিনেমাটি জুলাই ১১-এ নেটফ্লিক্সে মুক্তি পেয়েছে। অভিনেতা হিসাবে তো বটেই, মানুষ হিসাবেও আর মাধবনের বিষয়ে সাধারণত প্রশংসাই ভেসে আসে দর্শক ও তাঁর অনুরাগীদের তরফে। মাঝে মাঝেই তাঁর ছবি ঘিরে ডানা মেলে বিতর্ক, কিন্তু সেসব তিনি নিজের হাতেই সামলান। এবং অত্যন্ত নিপুণভাবে।
