নিজস্ব সংবাদদাতা: 

-দাদা, আমি বাঙালা বু-উ-উ-ঝতে পারি...বোলতে পারি না খুব। 

-বাজেট কোনও সমস্যাই নয়। চিত্রনাট্য পছন্দ হলেই যে কোনও পরিচালকের সঙ্গে কাজ করতে রাজি!

- শিবুদাদার পরিচালনায় আবার ছবি করব!  

 

ফেলুদা, শঙ্কুর পরে যে চরিত্রটিকে নিয়ে আস্ত একটি সিরিজ লিখেছিলেন সত্যজিৎ রায়, তা হল তারিণীখুড়ো। রহস্য, রোমাঞ্চ, ভূত, ডাকাত, ম্যাজিক, বাঘ- কী নেই তারিণী বাঁড়ুজ্যের সব গল্পে। যাঁর জীবনের ঘটনা সব বলা হলে দু’দুটো আরব্য রজনী হয়ে যায়। এবং সেই গল্পগুলো এতটাই জমাটি যে একটি পড়া শুরু করলে থামতে পারেন না পাঠক।  বেনিয়াটোলা লেন থেকে বালিগঞ্জে মাঝেমধ্যেই আসতেন খুড়ো ভুলু, ন্যাপলা, চটপটিদের নিজের জীবনে গল্প শোনাতে।  ‘গল্পবলিয়ে তারিণীখুড়ো’ তার মধ্যে একটি। ১৯৮৮ সালে এই ছোটগল্পটি লেখেন সত্যজিৎ। তাকেই অনন্ত নারায়ণ মহাদেবন এবার চলচ্চিত্রের রূপ দিলেন। নাম দিলেন, ‘দ্য স্টোরিটেলার’। ওটিটিতে সম্প্রচার হওয়ার পর থেকেই প্রশংসা ভেসে এসেছে এই সিরিজের উদ্দেশ্যে। তারিণীর চরিত্রে পর্দায় হাজির হয়েছেন জনপ্রিয় বলি-অভিনেতা পরেশ রাওয়াল। কেমন লাগল তাঁর বাঙালি সেজে? সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে কোনওদিন কি তাঁর কাজের কথা হয়েছিল? ভবিষ্যতে কি আবার তারিণী রূপে পর্দায় হাজির হবেন? সবকিছু নিয়েই আজকাল ডট ইন-এর সঙ্গে জমিয়ে আড্ডা মারলেন পরেশ রাওয়াল। শুনলেন রাহুল মজুমদার।   

 

প্রশ্ন: কেমন আছেন? 

পরেশ: খুব ভাল আছি। আপনি? (ভাঙা বাংলায়)

 

প্রশ্ন: আপনি বাংলা বলতে পারেন?

পরেশ: দাদা, আমি বাঙালা বু-উ-উ-ঝতে পারি...বোলতে পারি না খুব (হাসি)

 

প্রশ্ন: কেমন লাগল  বাঙালি সেজে?

পরেশ: হোয়াট অ্যান এক্সপেরিয়েন্স! দারুণ। তার উপর সত্যজিৎ রায়ের তৈরি চরিত্র। অসাধারণ। আর শুনুন, একটা কথা বলি। বাঙালিদের আমার এমনিই ভাল লাগে কারণ ওঁরা মনে যা ভাবেন, দ্বিধাহীনভাবে তা বলে দেন। সাহিত্যচর্চা থেকে শিল্পচর্চা-সংস্কৃতি বিষয়টা বাঙালির মজ্জায় মজ্জায়। আর এত উষ্ণ ব্যবহার...

 

প্রশ্ন: আর কলকাতা? বহু বছর ধরেই তো আসছেন এ শহরে। কখনও থিয়েটারের জন্য, কখনও ছবির শুটিংয়ের জন্য।  

পরেশ: আমি চাইছিলাম এই প্রশ্নটা আপনি করুন। হ্যাঁ, কলকাতায় অনেকবার এসেছি। একটা কথা জোর দিয়ে বলছি, লর্ডসে যেমন ক্রিকেট না খেললে কুলীন পর্যায় ক্রিকেটার হওয়া যায় না ঠিক তেমন ওহ আর্টিস্ট হি ক্যায়া যিসনে কলকাত্তা মে পারফর্ম নেহি কিয়া হো! ভীষণ সুন্দর আপনাদের শহর। এতবার এসেও আশ মেটেনি আমার। একই শহরে ইতিহাস এবং আধুনিকতা পাশাপাশি বসবাস করে। ইনক্রেডিবল। 
আর একটা কথা বলতে চাই। 

 

প্রশ্ন: হ্যাঁ, বলুন না। 

পরেশ: আমি কিন্তু সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, উত্তমকুমার, উৎপল দত্ত, সুচিত্রা সেন, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, ঋত্বিক ঘটক, বিমল রায় সবার কাজের ভীষণ ভক্ত। অভিনেতা ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায়ের  অভিনয়-ও আমার ভারি পছন্দের। আর সবার উপরে শম্ভু মিত্র! উফফফ, কীসব কাজ করে গিয়েছেন ওঁরা। ভাবা যায় না! 

 

 

প্রশ্ন: ‘দ্য স্টোরিটেলার’-এ ফিরি। তারিণীখুড়োর গল্প কখনও পড়ার সুযোগ হয়েছিল এই ছবির শুটিংয়ের আগে?

পরেশ: কী বলছেন, কী বলছেন! অবশ্যই পড়েছি। তবে ইংরেজিতে।  

 

প্রশ্ন: সত্যজিৎ যেমন লিখেছিলেন, তার থেকে তো খানিক অদলবদল করা হয়েছে তারিণীখুড়োকে? 

পরেশ: হ্যাঁ, খুব বেশি হয়নি। সিনেম্যাটিক কারণেই করা হয়েছে। তবে যতুটুকু হয়েছে, সেটা না করলেই হতো না। 

 

প্রশ্ন: কেন রাজি হলেন এই ছবিতে অভিনয় করতে?

পরেশ: আমি গল্প-আড্ডা করতে খুব ভালবাসি। মিশতে ভালবাসি মানুষের সঙ্গে। এই চরিত্রের মধ্যে নিজের সঙ্গে মিল পেয়েছিলাম। সেটা একটা কারণ। আর তাছাড়া চিত্রনাট্য পড়ে তো ভাল লেগেছিল। 

 

প্রশ্ন: আটের দশক থেকে মঞ্চ, চলচ্চিত্রর বিষয়ে কলকাতায় আসছেন। সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে কখনও দেখা হয়েছিল কিংবা ওঁর সঙ্গে কাজ করার কথা?

পরেশ: না। আমার দুর্ভাগ্য যে তা হয়নি। তবে হ্যাঁ, এই সিরিজের শুটিংয়ের সময় একদিন ঝপ করে ওঁর বাড়ি চলে গিয়েছিলাম। সন্দীপ রায়ের সঙ্গে আড্ডা মেরেছি। ওঁর আশীর্বাদ নিয়েছিলাম। আর ওই যে পেল্লায় বাড়ি, পুরনো দিনের মতো টানা বারান্দা, সত্যজিৎবাবুর কাজের ঘর, গ্র্যান্ড পিয়ানো, বই...কী যে রোমাঞ্চিত হয়েছিলাম, ভাবতে পারবেন না। 

 


প্রশ্ন: তারিণীখুড়োর গল্প নিয়ে আর সিরিজ তৈরি হবে?

পরেশ: দেখুন, এই সিরিজ যা রেসপন্স পাচ্ছে, তাতে তৈরি হওয়া উচিত। তারিণীর আবার আসা উচিত পর্দায়। আমি তো এই চরিত্রে ফের অভিনয় করার জন্য মুখিয়ে রয়েছি। 

 

প্রশ্ন: তারিণী থেকে একটু বেরোই। পরেশ রাওয়াল মানেই বড় তারকা-অভিনেতা, গুরুগম্ভীর স্বভাব। নতুন পরিচালক-প্রযোজকদের আপনার সঙ্গে কাজ করতে গেলে কোন কোন বিষয় মাথায় রাখা উচিত?

পরেশ: কোন কোন নয়। স্রেফ একটা বিষয়। চিত্রনাট্য। ওইটি ঠিক থাকলেই আর সবকিছু খাপে খাপে মিলে যায়। 

 

প্রশ্ন: কী বলছেন? পরেশ রাওয়াল থাকবে আর বাজেট নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে হবে না?

পরেশ: (হাসি) না, না দেখুন বাজেট তো একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বটেই। কিন্তু চিত্রনাট্য ঠিক না থাকলে, বাজেট দিয়ে কী হবে? আমার বিশ্বাস, বাজেট নিয়ে টানাটানি হলেও চিত্রনাট্য মজবুত থাকলে ছবি কিন্তু দাঁড়িয়ে যায়।  

 

প্রশ্ন:  নন্দিতা-শিবপ্রসাদের পরিচালনায় আরও একবার তো কাজ করবেন?

পরেশ: অফ কোর্স! এই তো দিন তিনেক আগেই শিবুদাদার সঙ্গে কথা হল। 

 

 

প্রশ্ন: পরেশ রাওয়াল-এর সঙ্গে কথা হবে, আর ‘বাবু ভাইয়া’র কথা উঠবে না, এ কি হয়?

পরেশ: (জোরে হাসি) বুঝেছি। এই বছরই ‘হেরা ফেরি ৩’-এর শুটিং শুরু হবে। হবেই। ‘রাম’, ‘শ্যাম’, ‘বাবু ভাইয়া’রা একসঙ্গে ফিরবে।