বাংলা চলচ্চিত্র জগতে সাম্প্রতিক সময়ে বক্স অফিসে মুক্তির তারিখ ও প্রেক্ষাগৃহ বণ্টন নিয়ে তৈরি হয়েছিল তীব্র মনোমালিন্য। একই সময়ে একাধিক বড় বাজেটের ছবি মুক্তি পাওয়া, প্রেক্ষাগৃহে স্থান না পাওয়া, এমনকি কিছু ছবিকে অগ্রাধিকার দেওয়ার অভিযোগে ফাটল ধরেছিল ইন্ডাস্ট্রির ঐক্যে। সেই অস্থিরতা কাটাতে ইস্টার্ন ইন্ডিয়া মোশন পিকচার্স অ্যাসোসিয়েশন (ইমপা), ফেডারেশন এবং প্রযোজকদের বৈঠকের পর নতুন কিছু নিয়ম চালু হতে চলেছে। ইন্ডাস্ট্রির সদস্যরা মনে করছেন, এই নিয়মগুলি কার্যকর হলে বাংলা ছবির বাজারে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে এবং অস্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা অনেকটাই কমবে।
কী কী নতুন নিয়ম প্রবর্তিত হল
প্রযোজনার পরিকল্পনা আগে থেকে জানানো বাধ্যতামূলক
প্রযোজকদের বছরে ক’টি ছবি তৈরি করবেন, তা আগেই জানাতে হবে। সেই তথ্যের ভিত্তিতে মুক্তির ক্যালেন্ডার তৈরি করা হবে এবং ছবির মুক্তির তারিখ ভাগ করে দেওয়া হবে।
টেকনিশিয়ানদের পারিশ্রমিক বৃদ্ধি
টেকনিশিয়ানদের পারিশ্রমিক ৩৩ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এটি শিল্পের কর্মীদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল।
একই প্রযোজকের ছবির মুক্তির মধ্যে সময়সীমা
কোনও প্রযোজক প্রাইম টাইমে একটি ছবি মুক্তি দিলে, সেই ছবির ১৫ দিন আগে বা পরে তিনি আরেকটি ছবি মুক্তি দিতে পারবেন না।
প্রেক্ষাগৃহে ছবির প্রদর্শনের ন্যূনতম সময়সীমা
প্রাইম টাইমে মুক্তিপ্রাপ্ত একটি ছবিকে অন্তত দু’সপ্তাহ প্রদর্শনের সময় দেওয়া বাধ্যতামূলক। দর্শকের প্রতিক্রিয়া ভাল হলে ছবিটি আরও চলবে। না হলে দু’সপ্তাহ পর তা প্রেক্ষাগৃহ থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে। এর ফলে ‘ভাল চলা’ ছবিকে আগেভাগে নামিয়ে দেওয়ার অভিযোগ আর থাকবে না।
বড় ছবির মুক্তি নিয়ে সময় সমন্বয়
ডিসেম্বরে একাধিক বড় বাজেটের ছবি মুক্তি এড়াতে শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ও নন্দিতা রায় তাঁদের নতুন ছবি ‘ভানুপ্রিয়া ভূতের হোটেল’এর মুক্তি পিছিয়ে দিয়েছেন। এটি এখন ২৩ জানুয়ারি মুক্তি পাবে। অঙ্কুশ হাজরার ‘নারী চরিত্র বেজায় জটিল ’ ছবির মুক্তির তারিখও প্রয়োজন অনুযায়ী এগিয়ে বা পিছিয়ে দেওয়া হতে পারে।
বার্ষিক মুক্তির ক্যালেন্ডার ও পুজোর সীমাবদ্ধতা
বছরের শুরুতেই একটি অফিসিয়াল বাংলা ছবির ক্যালেন্ডার প্রকাশ করা হবে, যেখানে স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকবে কোন ছবি কখন মুক্তি পাচ্ছে। এছাড়া দুর্গাপুজোয় সর্বাধিক তিনটি বাংলা ছবি মুক্তির সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে, যাতে বক্স অফিসে অপ্রয়োজনীয় প্রতিযোগিতা না হয়।
শুটিং সময়সীমা ও নতুন প্রযোজকদের ছাড়
দিনে সর্বাধিক ১৮ ঘণ্টা পর্যন্ত শুটিং করা যাবে। নতুন প্রযোজকরা যদি ৩০ লক্ষ টাকার কম বাজেটে ছবি তৈরি করেন, তবে তাঁদের জন্য বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা থাকবে— যদিও এটি পরবর্তী আলোচনার উপর নির্ভর করবে। এই সব নিয়মই আলোচনা সাপেক্ষ।
ইমপার সভাপতি পিয়া সেনগুপ্ত এবং ফেডারেশনের সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাসের উদ্যোগে বুধবার অনুষ্ঠিত বৈঠকটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্তে আপাতত খুশি গোটা শিল্পীমহল। ঠিক হয়েছে, বড়দিনে মুক্তি পাবে তিনটি বড় ছবি — দেব ও মিঠুন চক্রবর্তী অভিনীত ‘প্রজাপতি ২’, শ্রী ভেঙ্কটেশ ফিল্মস প্রযোজিত একটি বড় বাজেটের ছবি (যা ‘লহ গৌরাঙ্গের নাম রে’ বা কাকাবাবু ফ্র্যাঞ্চাইজির নতুন অধ্যায় হতে পারে) এবং কোয়েল মল্লিক অভিনীত ‘মিতিন মাসি’ সিরিজের কিস্তি।
ইন্ডাস্ট্রির বিদ্বজনেরা মনে করছেন, এই নিয়মগুলি কার্যকর হলে প্রযোজক, পরিচালক, শিল্পী ও প্রেক্ষাগৃহ মালিক— সকলে উপকৃত হবেন। বাংলা ছবির বাজারে ফের আসবে ভারসাম্য ও সুস্থ প্রতিযোগিতা।
