নতুন ছবি ‘১২০ বাহাদুর’ মুক্তির পর থেকেই শিরোনামে ফারহান আখতার। গত সপ্তাহে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাওয়া এই যুদ্ধচিত্রটি ১৯৬২-র ইন্দো-চিনা যুদ্ধের সময় রেজাং লা-র ঐতিহাসিক সংঘর্ষকে অবলম্বন করে তৈরি। যেখানে মেজর শৈতান সিংয়ের নেতৃত্বে মাত্র ১২০ জন ভারতীয় জওয়ান লড়াই করেছিলেন ৩,০০০ চীনা সৈন্যের বিরুদ্ধে। রজনীশ ঘাই পরিচালিত এই ছবিতে সেই বীরত্বগাথার কেন্দ্রীয় চরিত্রে ফারহান।

প্রমোশনের মাঝেই তবে অভিনেতাকে নিয়ে তৈরি হল নতুন ঝড়। ‘আনফিল্টার্ড বাই সমদীশ ’ নামক অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে ইউটিউবার সমদীশ ভাটিয়ার এক প্রশ্নে হেসে ফেলেন ফারহান। প্রশ্নটি ছিল, ফারহানের প্রিয় প্রধানমন্ত্রী কে?—এমন প্রশ্ন শুনে অভিনেতা-পরিচালক প্রথমে বলেন “একটা হাস্যকর প্রশ্ন!” তারপরই যোগ করেন,“সর্বাধিক দূরদৃষ্টি যার ছিল, তিনি জওহরলাল নেহরু। তিনি দেশকে বৈজ্ঞানিক দিশায় নিয়ে গিয়েছিলেন। আমি তাঁকে গভীরভাবে সম্মান করি।”

এই ভিডিও ছড়িয়ে পড়তেই নেটদুনিয়ায় শুরু আগুন-আগুন। বিশেষত বিজেপি-সমর্থিত এক অংশ ফারহানকে তীব্র সমালোচনায় কটাক্ষ করছে। কেউ লিখলেন, “বয়কট ফারহান! মোদির প্রতি ঘৃণা ওদের সহ্য হয় না।” আরেকজনের মন্তব্য, “নেহরু ছিলেন ভারতের সবচেয়ে খারাপ প্রধানমন্ত্রী, যিনি নিজের স্বার্থকে দেশমাতৃকার উপরে রেখেছিলেন।” কেউ আবার কটাক্ষ করলেন, “এবার মোদি ওর বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করবেন।” এমনকি আরও একটি প্রতিক্রিয়া, "গান্ধী-নেহরু-ইন্দিরা বংশই ভারতের সবচেয়ে বড় অভিশাপ।”

 

অন্যদিকে, এক দল নেটিজেন ফারহানের পাশে দাঁড়িয়ে বলছেন, “সাবধান ফারহান স্যার, সত্যি বললে আজকাল টার্গেট করা হয়। সইফ আলি খানের মতো উদাহরণ তো আছে।” আরেকজনের মন্তব্য, “এটাই ভারতের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সত্য।” তৃতীয় এক্স হ্যান্ডেল ব্যবহারকারী লিখলেন, “দারুণ বলেছেন ফারহান। নেহরু শুধু দেশ চালাননি, ভবিষ্যতের ভারত কল্পনা করেছিলেন। বিজ্ঞান, শিক্ষা আর গণতন্ত্রের উপর তাঁর অঙ্গীকার এখনও আমাদের পথ দেখায়।”

 

এদিকে '১২০ বাহাদুর' বক্স অফিসে খুব ঝাঁকুনি দিতে পারেনি। প্রথম দিনে সংগ্রহ মাত্র ২.২৫ কোটি টাকা, আর সপ্তাহান্তে নেট আয় দাঁড়ায় ১০ কোটি টাকা। ফারহান ছাড়াও ছবিতে রয়েছেন রাশি খান্না, অঙ্কিত সিওয়াচ, বিবান ভাটেনা, এজাজ খান, স্পর্শ ওয়ালিয়া, আশুতোষ শুক্লা, আতুল সিং সহ আরও অনেকে।
প্রসঙ্গত, ফারহানের এই ছবিটি এবার নাম লিখিয়েছে  এক অভূতপূর্ব অধ্যায়ে- ১৬,৪৫২ ফুট উচ্চতায়, লাদাখের রেজাং লা ওয়ার মেমোরিয়াল অডিটোরিয়াম-এ প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেই নিরিখে এই ছবি প্রদর্শনী হয়েছেএই অর্জন শুধু প্রযুক্তিগত জয়ে সীমাবদ্ধ নয়, বরং ফিরে দেখা সেই বীরগাথা- ১৯৬২ সালের রেজাং লা যুদ্ধ, যেখানে ১৩ কুমায়ুন রেজিমেন্টের চ্যালি কোম্পানির ১২০ জন জওয়ান অসম্ভব কঠিন পরিস্থিতিতে চীনা বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়েছিলেন প্রানপণ যুদ্ধ। তাঁদের মধ্যে ১১৪ জন শহিদ হয়েছিলেন। এই সিনেমাটিক সম্মান যেন তাদের প্রতি এক ঐতিহাসিক প্রণাম। বিশ্বের সর্বোচ্চ উচ্চতার সিনেমা-স্ক্রিনিং! ২২ নভেম্বর থেকে চুশুল গ্রামের স্মারক অডিটোরিয়ামে শুরু হয়েছে এই বিশেষ প্রদর্শনী। যেখান থেকে মাত্র কিছু দূরেই সেই পাহাড়ি পাস, যেখানে রক্তে লেখা হয়েছিল ভারতের সাহসের সেই অধ্যায়। মোবাইল থিয়েটার কোম্পানি পিকচারটাইম এই চরম -১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার মাঝেই আয়োজন করছে ১৪টি শো, যা দেখবেন সীমান্তে মোতায়েন সেনা ও স্থানীয় বাসিন্দারা।

 
পিকচারটাইম-এর প্রতিষ্ঠাতা-সিইও সুশীল চৌধুরী বলেন,“এই স্ক্রিনিং হবে বিশ্বের সর্বোচ্চ উচ্চতায় কোনও ছবির প্রদর্শনী। আমরা গর্বিত যে সেই অবিশ্বাস্য বীরত্বের গল্প স্থানীয় মানুষ আর সেনারা বড়পর্দায় দেখতে পাবেন। অন্তত দুই সপ্তাহ ছবি দেখানো হবে।”