বলিউডের অন্যতম সেরা অভিনেতা নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি আজ নিজের যোগ্যতায় পৌঁছে গেছেন এক আলাদা উচ্চতায়। কিন্তু এই সম্মান বা সাফল্য কোনও রাতারাতি প্রাপ্তি নয়। এই অবস্থানে পৌঁছতে তাঁর লেগে গিয়েছিল প্রায় দুই দশকের নিরন্তর লড়াই। অভিনয়ের শুরুটা হয়েছিল একেবারে ছোট ভূমিকায়, যে চরিত্রগুলো দর্শক প্রায় চোখে ফেলতেনই না। কখনও গুণ্ডা, কখনও চোর, কখনও পকেটমার। এমনই ক্ষণিক উপস্থিতি দেখা যেত ‘সারফরোশ’ কিংবা ‘মুন্নাভাই এমবিবিএস’-এর মতো ছবিতে, যেখানে পর্দায় নওয়াজউদ্দিনের কাজ মানেই, কেউ না কেউ তাঁকে মারছে!

 

সম্প্রতি, দেওয়া সাক্ষাৎকারে অভিনেতা জানালেন, এই বিষয়টা তাঁর বাবাকে ভীষণ কষ্ট দিত। নওয়াজউদ্দিন বলেন, “আমার প্রথম দিকের সব ছবিতেই আমাকে মার খেতে হতো। ‘সারফরোশ’-এ মার খাচ্ছ, ‘মুন্নাভাই এমবিবিএস’-এও তাই। গ্রাম থেকে মানুষ এসে বাবাকে বলত, ‘তোমার ছেলে তো প্রতিবারই সিনেমায় মার খায়!’ বাবা খুব অস্বস্তিতে থাকতেন। আমরা পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের, যেখানে মানুষ নিজের সম্মান নিয়ে বাঁচে। যাই হোক, তারপরেই আমাকে একদিন উনি বলেছিলেন, ‘তুই গ্রামে ঢুকবি না আর!’” নওয়াজউদ্দিন আরও বলেন, “বাবা বলতেন, ছোট ছোট ভূমিকায় কাজ করিস না, এতে লোকে ভাবে সত্যিই তোকে মারছে। প্রতিবেশীরা টিটকিরি দিত। উনি ভাবতেন সত্যি আমি মার খাচ্ছি!”

 

তবে সময় বদলেছিল যখন অনুরাগ কাশ্যপের ‘গ্যাংস অফ ওয়াসেপুর’-এ নওয়াজউদ্দিন মুখ্যভূমিকায় অভিনয়ের সুযোগ পান। তখনই তিনি গর্বের সঙ্গে বাবাকে বলেছিলেন, “এইবার আমার সিনেমাটা দেখে নিও।” অভিনেতা জানালেন, সেই ছবিতে তাঁর অভিনীত চরিত্র দেখে খুব খুশি হয়েছিলেন টিনার বাবা। খোশমেজাজের স্বরে বলে উঠেছিলেন, “এইবার ঠিক আছে একদম।”

 

কিন্তু সেই জায়গায় পৌঁছতে নওয়াজউদ্দিনের কেটেছে বছরের পর বছর অদম্য সংগ্রামে। এ প্রসঙ্গে তিনি একসময় বলেছিলেন, “বন্ধুদের কাছ থেকে টাকা ধার নিতাম, দু'দিন পর অন্যের কাছ থেকে ধার করে সেই টাকা ফেরত দিতাম। চারজনের সঙ্গে এক ফ্ল্যাটে থাকতাম। কখনও ওয়াচম্যানের কাজ, কখনও ধনেপাতা বিক্রি করেছি। অভিনয় ওয়ার্কশপও নিয়েছি। টিকে থাকার লড়াই ছিল।” তাঁর কথায়, “সংগ্রাম মানে সংগ্রাম। এতে কোনও সৌন্দর্য নেই, কেবল বেঁচে থাকার লড়াই।”

 

নওয়াজউদ্দিন নয় ভাইবোনের মধ্যে সবচেয়ে বড়। ছোটবেলায় দীপাবলির সময় বন্ধুদের সঙ্গে প্রদীপ চুরি করার স্মৃতিও আজ তাঁর মুখে হাসি ফোটায়। আজ বলিউডে তাঁর নামই মানে এক ক্লাস, কিন্তু সেই নামের পেছনে লুকিয়ে আছে পরিশ্রম, অপমান, আর এক বাবার অদেখা গর্বের গল্প।