মধ্যপ্রদেশের সিহোর জেলায় সোমবার ভোরে মর্মান্তিকভাবে মৃত অবস্থায় উদ্ধার হলেন ২৭ বছর বয়সি মডেল খুশবু আহিরওয়ার। অভিযোগ, অসুস্থ অবস্থায় প্রেমিক তাঁকে এক বেসরকারি হাসপাতালে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। এরপরই পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায়।
ঘটনাটি ঘটেছে ভৈনসাখেডি এলাকার এক বেসরকারি হাসপাতালে। চিকিৎসকরা জানান, খুশবুকে হাসপাতালে আনার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়েছিল। খবর পেয়ে পুলিশ পৌঁছে দেহটি বাজেয়াপ্ত করে ভোপালের গান্ধী মেডিকেল কলেজে পাঠায়। পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে ময়নাতদন্ত চলছে ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে।
হাসপাতালের বাইরে কান্নায় ভেঙে পড়েন খুশবুর মা লক্ষ্মী আহিরওয়ার। তাঁর অভিযোগ, “আমার মেয়েকে নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছে। শরীর জুড়ে নীলচে দাগ, মুখ ফুলে গেছে, ব্যক্তিগত অঙ্গে আঘাতের চিহ্ন। ওকে পিটিয়ে মারা হয়েছে।” খুশবুর বোনের কথায়, “ওকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। সর্বত্র দাগ রয়েছে। আমরা ন্যায় চাই। খুনি যেন কঠোর শাস্তি পায়।”
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, খুশবু তাঁর প্রেমিক কাশিমের সঙ্গে লিভ-ইন সম্পর্কে ছিলেন। কাশিম-ই তাঁকে হাসপাতালে রেখে উধাও হন। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, তাঁরা উজ্জয়িনী থেকে ভোপালে ফিরছিলেন, তখনই খুশবুর শরীর খারাপ হয়। কাশিম তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।
ঘটনার তিন দিন আগেই কাশিম খুশবুর মাকে ফোন করে বলেছিল, “আমি মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ, কিন্তু আপনার মেয়েকে উজ্জয়িনী নিয়ে যাচ্ছি। আমি ওর সঙ্গে আছি। চিন্তা করবেন না, ” পরে খুশবু নিজেও ফোনে আশ্বস্ত করেছিলেন তাঁর মা-কে, “মা, চিন্তা করো না, কাশিম খুব ভালো মানুষ।” সেটিই ছিল পরিবারের সঙ্গে খুশবুর শেষ কথা।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘@ডায়মন্ড গার্ল৩০’ নামে পরিচিত ছিলেন খুশবু। তিনি ভোপালের এক উঠতি মডেল ছিলেন। ইনস্টাগ্রামে হাজার হাজার অনুসারী, নিয়মিত ফটোশুট আর ব্র্যান্ড সহযোগিতায় ব্যস্ত থাকতেন তিনি। বিএ কোর্সের প্রথম বর্ষের পর পড়াশোনা ছেড়ে মডেলিংকেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। তিন বছর ধরে ভোপালে একা থাকতেন, পার্টটাইম কাজ করতেন, আর নিজের পরিচয় গড়ার স্বপ্ন দেখতেন।
খুশবুর দিদি মুখ্যমন্ত্রী মোহন যাদবের কাছে আবেদন জানিয়েছেন, “স্যার, এ আপনার রাজ্যের ঘটনা। দয়া করে ব্যবস্থা নিন। আমার বোনের জন্য ন্যায়বিচার চাই।” পারওয়ালিয়া থানার পুলিশ জানিয়েছে, “ময়নাতদন্তের রিপোর্টের অপেক্ষায় আছি। যৌন নির্যাতন এবং হত্যার অভিযোগ দুই দিকেই তদন্ত চলছে।”
এক তরুণী, যিনি নিজের আলোয় ভেসে ওঠার স্বপ্ন দেখছিলেন, তাঁর এমন নিষ্ঠুর পরিণতি এখন প্রশ্ন তুলছে গোটা মধ্যপ্রদেশে। স্বপ্নের পথে পা বাড়ানো মেয়েরা কতটা নিরাপদ?
