মমতা শঙ্কর—অভিনেত্রী ও নৃত্যশিল্পী, দুই পরিচয়েই তিনি সমান উজ্জ্বল। সাফল্যে তাঁর ঝুলি ভরা, কিন্তু সেই সঙ্গেই এসেছে বিতর্কও। খ্যাতির সঙ্গে জড়িয়ে থাকা এই অস্বস্তিই যেন তাঁর অনিবার্য সঙ্গী। সাম্প্রতিক সময়ে তাঁর কয়েকটি মন্তব্য ঘিরে তৈরি হয়েছে প্রবল আলোড়ন। সমালোচকেরা তাঁকে কখনও ‘নারীবিদ্বেষী’, কখনও বা ‘রক্ষণশীল’ তকমা দিতে পিছপা হননি।

তবু নিজের অবস্থান নিয়ে মুখ খুলতে ভয় পান না মমতা শঙ্কর। আজকাল ডট ইন–কে দেওয়া একখানি বিশেষ সাক্ষাৎকারে ‘কাস্টিং কাউচ’ ও ‘মি টু’–সহ স্পর্শকাতর বিষয়েও অকপট মন্তব্য করলেন পদ্মশ্রী সম্মানপ্রাপ্ত এই শিল্পী।

বাংলা চলচ্চিত্রে পাঁচ দশকের দীর্ঘ পথচলা—তিক্ত-মধুর অসংখ্য অভিজ্ঞতা সঙ্গেই নিয়ে এগিয়েছেন তিনি। পথ কখনোই মসৃণ ছিল না, বাধা ও চ্যালেঞ্জই ছিল নিত্যসঙ্গী। তবু মমতার বিশ্বাস, একজন নারীই সর্বপ্রথম নিজের সম্মানের রক্ষক। কাজের সুযোগ বা সুবিধার লোভে কাউকে নিজের উপর কর্তৃত্ব বিস্তার করতে না দেওয়াই তাঁর মতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর কথায়, “খুব অল্প বয়স থেকে আমি নাচ করি, ছবি করেছি। কিন্তু কেউ কোনও দিন আমায় খারাপ প্রস্তাব দেয়নি। আমি যদি বুঝি, কেউ আমাকে চালাকি করে কিছু একটা বলার চেষ্টা করছে, আমি এমন ভান করি যেন কিছু বুঝতেই পারিনি। আমি এত ভালভাবে কাটিয়ে গিয়েছি বিষয়টাকে যে, তাঁর সঙ্গে আমার ভাল সম্পর্ক হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এই ধরনের কথা সে আর আমায় বলতে পারেনি।”

মমতা মনে করেন, অনৈতিক কাজে শুধু পুরুষেরাই জড়িত থাকেন—এ কথা ঠিক নয়। সব ক্ষেত্রে না হলেও, অনেক সময় মহিলারাও অতিরিক্ত সুবিধা পাওয়ার আশায় তাঁদের প্রশ্রয় দেন। তিনি বলেন, “কিছু কিছু ক্ষেত্রে মেয়েদের দিক থেকে ভুল হয়। কিছু একটা পাওয়ার জন্য আমরা (মহিলারা) হয়তো নিজেকে ছেড়ে দিলাম। উল্টো দিকের মানুষটাকে কিছুটা এগোতে দিলাম। কিন্তু তারপর হয়তো কাজটা হল না। তখন তার নামে মি টু হয়ে গেল। এই জিনিসগুলো আমি একদম পারি না নিতে পারি না। কেউ কাউকে শারীরিক হেনস্থা করলে, সেটা আলাদা বিষয়। কিন্তু আমার মনে হয়, বুদ্ধি দিয়ে যে কোনও খারাপ প্রস্তাব কাটিয়ে যাওয়া যায়।”

মমতা জানান, দীর্ঘ কর্মজীবনে তাঁর সঙ্গে কখনও কোনও অপ্রীতিকর ঘটনার মুখোমুখি হতে হয়নি, কারণ তিনি নিজের চারদিকে এক অদৃশ্য সীমারেখা তৈরি করে রেখেছিলেন—যেখানে অন্য কারও প্রবেশাধিকার ছিল না। এখনও নিজের মতো ছন্দেই বাঁচতে ভালোবাসেন অভিনেত্রী। তাঁর কথায় যেন প্রতিফলিত হয় সেই আত্মবিশ্বাস। তাই ট্রোল বা কটাক্ষ—কিছুই আর তাঁকে স্পর্শ করতে পারে না।