স্বামী তাপস পালকে হারানোর পর সবকিছু থেকে নিজেকে খানিকটা গুটিয়ে নিয়েছিলেন স্ত্রী নন্দিনী মুখোপাধ্যায় পাল। তবে এখন বিভিন্ন ছবির প্রিমিয়ারে হাসিমুখে দেখা যায় মা ও মেয়েকে। যন্ত্রণা মনের মধ্যে থাকলেও তা মুখে প্রকাশ করেন না কখনওই। একসময় এই টলিউড নিয়ে নানা অভিযোগ থাকলেও সম্প্রতি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখা যায় তাঁদের। জীবনের অত্যন্ত খারাপ সময় কাটিয়ে একসঙ্গে ভাল থাকার চেষ্টা করে চলেছেন মা ও মেয়ে। 

 

 

 

 

তবে এর মধ্যেই অত্যন্ত অপমানের শিকার হলেন নন্দিনী মুখোপাধ্যায় পাল। সকলের সামনে 'বডি শেমিং'-এর শিকার তিনি। শরীরের গঠন নিয়ে বাজে মন্তব্য করা হয় নন্দিনীকে। তবে এক সময় খারাপ লাগলেও তা এখন আর পাত্তা দেন না তিনি। এমনই এক খারাপ অভিজ্ঞতার কথা সমাজমাধ্যমে ভাগ করে নিলেন নন্দিনী।  

 

 

 

 

নন্দিনী নিজের একটি ছবি পোস্ট করে লিখেছেন,'সেদিন আমি চুপ ছিলাম। একজন তথাকথিত ডাক্তার আমার শরীর নিয়ে কটাক্ষ করে বলল, “তুমি তো আরও মোটা হয়ে গিয়েছো, ইলাস্টিকের মতো বাড়ছো।” আর চারপাশে সবাই হাসল। বিশেষ করে একজন মহিলা—যিনি আমার থেকে বয়সে বড় এবং আরও মোটা , তিনি হাসলেন সবচেয়ে জোরে।'

 

 

 

নন্দিনী আরও লেখেন, 'এটা শুধু ওজনের ব্যাপার নয়। এটা মৌলিক মানবিক মর্যাদার প্রশ্ন। ওই ডাক্তার যা বলল, সেটা কোনও “মজা” ছিল না। সেটা ছিল সরাসরি অপমান। আর সেই মহিলা, যিনি সবচেয়ে বেশি হেসেছিলেন। আপনি জানেন, সমাজের দৃষ্টিতে শরীর নিয়ে বিচার হওয়া কতটা যন্ত্রণাদায়ক। আপনি হাসলেন আমাকে ছোট করে নিজেকে কিছুটা পাতলা বা নিরাপদ বা শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করতে। কিন্তু আপনার হাসি আমার কোনও দোষ নয়, সেটা ছিল আপনার নিজের ভিতরের কমজোরি ও হীনমন্যতার প্রতিফলন।

তাই আজ আমি স্পষ্টভাবে বলছি। আমি কারও হাসির খোরাক নই। আমার শরীর কারও রসিকতার ক্ষেত্র নয়। আমার শরীর , এই শরীর , দুঃখ, মাতৃত্ব, বিশ্বাসভঙ্গ, নিঃসঙ্গতা, এবং নীরব লড়াই বহন করেছে।ওজন বেড়েছে, কারণ আমি বেঁচে আছি, এবং লড়েছি।'

 

আরও পড়ুন: মারা যাবে 'স্বস্তিক'! সন্তান আসার আগেই স্বামীহারা হবে 'গীতা'? কী হতে চলেছে গল্পের নতুন মোড়ে?

 

 

নন্দিনী লেখেন, 'আমাকে বিচার করার কোনও অধিকার কারওর নেই। আর কারওর স্বীকৃতিও আমি চাই না। আমার যা প্রাপ্য, তা হল সম্মান।আমি ক্ষমা করে দিচ্ছি, কারণ আমি শান্তি বেছে নিচ্ছি। কিন্তু জেনে রাখুন , আমি আর নিজেকে কারওর সুবিধার জন্য ছোট করব না। আমার উপস্থিতি যদি আপনাকে অস্বস্তিতে ফেলে, তাহলে মুখ ঘুরিয়ে নিন। আমার শরীর যদি আপনার অস্বস্তির কারণ হয়, তাহলে নিজের মধ্যে তাকান। তাঁদের জন্য বলছি, যাঁরা কখনও "অতিরিক্ত" বলে উপহাসের শিকার হয়েছেন ,বেশি ওজন, বেশি আবেগ, বেশি সত্য, বা বেশি সাহসের জন্য,আপনি অতিরিক্ত নন। আপনি ঠিক যেমন, তেমনটাই যথেষ্ট। মুখ খুলুন। সোজা হয়ে দাঁড়ান। আর আর কাউকে আপনাকে নরম টার্গেট বানাতে দেবেন না।'

 

 

 

 

আগে নানা ধরনের কথায় ভেঙে পড়লেও এখন নিজের মনকে অনেকটাই শক্ত করে নিয়েছেন নন্দিনী। কারণ এই সমাজ ভালবাসার চেয়ে অন্য মানুষকে ভাল রাখার চেয়ে আঘাত বেশি দিতে পারে, সেটা নিজের মনকে বুঝিয়ে নিয়েছেন তিনি।