সংবাদ সংস্থা মুম্বই: পরিচালক মণি রত্নমের সঙ্গে ‘ঠগ লাইফ’-এর প্রচারে ব্যস্ত থাকা কমল হাসান সম্প্রতি ফাঁস করলেন এমন এক অবাক করা ঘটনা, যা শুনলে যে কোনও সিনেমাপ্রেমীর বুক ধক করে ওঠার পাশাপাশি বুক ঠেলে বেরোবে লম্বা দীর্ঘশ্বাস!
ভারতীয় সিনেমার অন্যতম পরীক্ষাধর্মী ছবি ‘পুষ্পক’। ১৯৮৭ সালের সেই নির্বাক ব্ল্যাক কমেডিতে যদি ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকে থাকতেন সত্যজিৎ রায়? শুনতে যেন রূপকথার মতো, কিন্তু বাস্তবে একদম কাছাকাছি এসেও সেই ব্যাপার হয়নি।
“আমরা প্রায় সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছিলাম সত্যজিৎ রায়কে দিয়ে ‘পুষ্পক’-এর সঙ্গীত করাব। কিন্তু শেষমেশ বাজারের চাপ, সময়সীমা—সব মিলিয়ে আর হয়ে ওঠেনি। এই নিয়ে আজও আফসোস করি। এ আফসোস আমার কখনও যাবে না!”— এক সাক্ষাৎকারে বললেন কমল হাসান।
সত্যজিৎ রায় শুধুই তো বিশ্বখ্যাত একপরিচালক ছিলেন না। এর পাশাপাশি তিনি ছিলেন একজন লেখক, চিত্রকর, সম্পাদক, ক্যালিগ্রাফার—আর এক অসাধারণ সুরকার। ‘চারুলতা’, ‘মহানগর’, ‘নায়ক’, গুপী গাইন বাঘা বাইন —সব ছবির সুর করেছিলেন তিনি নিজেই। কমল হাসানের মতে, “সত্যজিৎ রায় যদি ‘পুষ্পক’-এর সঙ্গে যুক্ত হতেন, সে ছবি এক অন্য মাত্রায় পৌঁছে যেত।” তিনি আরও বলে চলেন, “আমরা ভাবছিলাম, উনি ‘হয়তো’ কাজ করতেন। কিন্তু এখন বুঝি, উনি নিশ্চয়ই করতেন। কারণ পরে এই ছবির একটি দৃশ্য দেখে প্রশংসা করতে শুনেছি ওঁকে। ওঁর গলার স্বরে ছিল মুগ্ধতা...”—বললেন কামাল হাসান।
নির্বাক ‘পুষ্পক’-এর জন্য ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর ছিল মেরুদণ্ডের মতো। সেই জায়গায় সত্যজিৎ রায়ের মতো একজন শিল্পী যোগ হলে সিনেমার ভাষা যেন নতুন প্রাণ পেত—এ কথা নিঃসন্দেহে স্বীকার করছেন অভিনেতা।ছবিতে কমলের সঙ্গে ছিলেন সমীর খাখর, টিনু আনন্দ, কেএস রমেশ, অমলা, ফরিদা জলাল, প্রতাপ পোথেন, রম্যা প্রমুখ। গল্প ছিল এক বেকার স্নাতকের, যে এক মদ্যপ ধনীর সঙ্গে পরিচয় ঘটার পর তার জীবন দখল করে নেয়। আজ, প্রায় চার দশক পর, কামাল হাসানের কণ্ঠে সত্যজিৎ রায়কে না-পাবার আফসোস যেন ভারতীয় সিনেমারই এক অপূর্ণ অধ্যায়।
সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে যদি সেই সুরেলা অধ্যায় শুরু হতো, আজ ‘পুষ্পক’ হয়তো বিশ্ব সিনেমার এক মাইলস্টোন হয়ে থাকত!
