বলি তারকা জন আব্রাহাম এখন ব্যস্ত তাঁর আসন্ন ছবি ‘তেহরান’–এর প্রচারে। এই ছবি ১৪ আগস্ট ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পাবে, যা ২০১২ সালে দিল্লিতে ইজরায়েলি কূটনীতিকদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত। জন এখানে অভিনয় করছেন এসিপি রাজীব কুমার–এর ভূমিকায়, যিনি আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসের জাল ভেদ করে অপরাধীদের ধরার মিশনে নেমেছেন।
সেই ছবির প্রচারে এক সাক্ষাৎকার দেওয়াকালীন জন স্পষ্ট বললেন — “আমাদের দেশে সেন্সরশিপ প্রয়োজন, কিন্তু কীভাবে সেটি নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে, সেখানে প্রশ্নচিহ্ন আছে!” জানান, সেন্সর বোর্ড তাঁর ছবির প্রতি ভাল ব্যবহার করেছে, তবে এর পাশাপাশি তিনি নিজেও দায়িত্ব নিয়ে কনটেন্ট তৈরি করেন। “আমি না ডানপন্থী ,না বামপন্থী — আমি রাজনৈতিকভাবে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ,” বলেন জন। তাঁর চিন্তা হচ্ছে, ডানপন্থী ধাঁচের ছবি অনেক বেশি দর্শক পায়। আর সেই আবহেই তখন একজন নির্মাতা হিসেবে সিদ্ধান্ত নিতে হয় — বাণিজ্যিক পথে যাবেন, না কি নিজের অবস্থানে অটল থাকবেন। এক্ষেত্রে জন বেছে নিয়েছেন দ্বিতীয় পথ।
জাতীয়তাবাদী ছবির প্রলোভনে তিনি পা দেবেন না, স্পষ্ট জানালেন জন! যখন অভিনেতাকে জিজ্ঞেস করা হয়, ‘ছাভা’ বা ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’–এর মতো ছবি তিনি কি বানাতে চাইবেন, জন খোলাখুলি উত্তর দেন — “আমি এই দুটি ছবি দেখিনি, কিন্তু জানি মানুষ এগুলো পছন্দ করেছে। তবে যখন কোনও ছবি অতিরিক্ত রাজনৈতিক আবহে মানুষের মতপ্রকাশ প্রভাবিত করার উদ্দেশ্যে তৈরি হয়, এবং তবুও দর্শক পায়, সেটা আমার ভয়ঙ্কর মনে হয়। আমার জবাব — না, আমি এমন ছবি বানাতে কখনও রাজি হইনি, আর হবও না।”
জনের আসন্ন ‘তেহরান’ ছবিটি ইরান, ইজরায়েল ও ভারতের রাজনৈতিক-সন্ত্রাসী প্রেক্ষাপটের মাঝে দাঁড়িয়ে তৈরি হয়েছে। কাহিনি গড়ে উঠেছে দিল্লির প্রাণকেন্দ্রে ইজরায়েলি কূটনীতিকদের ওপর হওয়া আক্রমণ এবং তার তদন্তের রহস্যঘেরা গল্প ঘিরে। জনের চরিত্র এসিপি রাজীব কুমার এখানে উচ্চপদস্থ পুলিশ অফিসার হলেও রাজনৈতিক চাপে ভুগছেন না—তাঁর একমাত্র লক্ষ্য সন্ত্রাসের মূল খুঁজে বের করা। ছবিতে থাকবে শ্বাসরুদ্ধকর চেজ সিকোয়েন্স, তীব্র অ্যাকশন, এবং বাস্তব ঘটনার ছোঁয়া।
প্রসঙ্গত, বক্স অফিসে সশব্দে মুখ থুবড়ে পড়েছিল জন আব্রাহামের ‘সত্যমেব জয়তে ২’। এবং এই ছবির ব্যর্থতা নিদারুণ প্রভাব ফেলেছিল পরিচালক মিলাপ জাভেরির সঙ্গে জনের সম্পর্কে। কীভাবে? সেকথা এই প্রথমবার খোলসা করলেন খোদ পরিচালক। সম্প্রতি, এক সাক্ষাৎকারে মিলাপ জাভেরি জানালেন, ‘সত্যমেব জয়তে ২’ ছবির গল্পেই গলদ ছিল। আরও ভাল করে বললে, ছবির গল্প মোটেই মজবুত ছিল না। আক্ষেপের সুরে জানালেন একজন অভিনেতা হিসাবে তাঁর পরিচালনার উপর অসম্ভব ভরসা রেখেছিলেন জন। তাই এই ছবির নৌকাডুবি হওয়ার অর্থ ছিল জনের ভরসা করার গুরুত্ব দিতে ব্যর্থ হওয়া। সেই ভাবনা আজও তাঁকে কষ্ট দেয়। বললেন, “এই ছবিটি ব্যর্থ হওয়ার পর আমার সঙ্গে মাস তিনেক কথা বললেনি জন। আমি যতবারই ফোন করে অথবা টেক্সট করে জনকে ‘আমাকে ক্ষমা করো’ বলতাম বা লিখতাম জবাবে জন শুধু এটুকু বলতেন, ‘মিলাপ, আমার সত্যিই খারাপ লেগেছে’। যার কিচ্ছুটি বলতেন না। তবে হ্যাঁ, জন কিন্তু কখনও একটিবারের জন্য জানান যে তিনি আমার কাজে অসন্তুষ্ট হয়েছেন কিংবা হতাশ। ওঁর বলা কথা থেকে টের পেতাম যে এই ছবিটিকে ঘিরে তাঁর বিশ্বাস ছিল, আশা ছিল। সেটা এইভাবে ব্যর্থ হওয়ায় খুব কষ্ট পেয়েছেন।”
তবে জনের সঙ্গে পরে যে তাঁর বনিবনা হয়ে গিয়েছিলেন সেকথাও জানিয়েছেন মিলাপ জাভেরি। “জন আমাকে জড়িয়ে ধরে পরে জানিয়েছেন পরিচালক হিসাবে আমার উপর তাঁর ভরসা আজও রয়েছে। ভবিষ্যতে আমার সঙ্গে আবার ছবিও করবেন। কিন্তু অন্তর থেকে আমি জানি, আমাদের ভিতরে পরস্পরের সঙ্গে সেই সম্পর্কের উষ্ণতাটা আর নেই।”
