বলিউডের ‘হি-ম্যান’ ধর্মেন্দ্রর প্রয়াণে শোকস্তব্ধ গোটা দেশ। গত ২৪ নভেম্বর ৮৯ বছর বয়সে কিংবদন্তী এই অভিনেতার প্রয়াণের পর তাঁর আত্মার শান্তি কামনায় বৃহস্পতিবার নয়া দিল্লিতে এক বিশেষ প্রার্থনা সভার আয়োজন করেন তাঁর স্ত্রী, বর্ষীয়ান সাংসদ, অভিনেত্রী হেমা মালিনী। সঙ্গে ছিলেন তাঁর দুই মেয়ে এষা দেওল ও অহনা দেওল। ড. আম্বেদকর ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারে আয়োজিত হয় এই অনুষ্ঠান। সেখানে যোগ দেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, বিজেপি সভাপতি জে পি নাড্ডা, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন-সহ বলিউডের একাধিক তারকা, যার মধ্যে ছিলেন কঙ্গনা রানাউত ও রবি কিষাণ সহ আরও অনেকে।

 

 

তবে এই শোকসভায় সকলের মনোযোগের কেন্দ্রে ছিলেন হেমা মালিনী। এত বছরের জীবনসঙ্গীকে হারানোর অসহ্য যন্ত্রণা তাঁর চোখে-মুখে স্পষ্ট হয়ে উঠছিল এদিন। শোকস্তব্ধ হেমা মালিনী ছলছল চোখে যখন মঞ্চে ওঠেন, তখন তাঁর কণ্ঠস্বর ছিল বেদনার ভারে রুদ্ধ। তিনি উপস্থিত সকলকে স্বাগত জানিয়ে গভীর বিষাদে বলেন, “আমি কখনও ভাবিনি আমার জীবনে এমন একটি দিন আসবে, যখন আমাকে ধরমজির জন্য শোকসভার আয়োজন করতে হবে। পুরো বিশ্ব আজ শোক পালন করছে, কিন্তু আমার জন্য এটি এক অপূরণীয় আঘাত।”

 


তাঁর দীর্ঘ ৫৬ বছরের সম্পর্কের কথা স্মরণ করে তিনি আরও আবেগপ্রবণ হয়ে ওঠেন। হেমা জানান, যখন তিনি প্রথম ইন্ডাস্ট্রিতে আসেন, তখন ধর্মেন্দ্রর সঙ্গেই তিনি সবচেয়ে বেশি ছবিতে কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলেন— প্রায় ৪৫টি ছবিতে তাঁরা জুটি বেঁধেছিলেন, যার মধ্যে পঁচিশটিরও বেশি ছবি ছিল সুপারহিট। দর্শক ও ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি থেকে 'হিট জুটি' হিসেবে তাঁরা অগণিত ভালবাসা পেয়েছিলেন। এই অমূল্য সম্পর্কের ভিত কত গভীর ছিল, তা বোঝাতে গিয়েই তিনি বলেন, "প্রেমের ছবিতে রোম্যান্স করতে গিয়ে ভালবেসে ফেলি। আমাদের প্রেম সত্যিই ছিল খাঁটি। আমাকে এবার ওঁর স্মৃতিটুকু নিয়েই বেঁচে থাকার অভ্যাস করতে হবে।”

 


ধর্মেন্দ্র কেবল একজন মহান অভিনেতা ছিলেন না, ব্যক্তিগত জীবনেও তিনি ছিলেন একজন মাটির মানুষ। হেমা তাঁর প্রয়াত স্বামীর সরলতা ও বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণের কথা উল্লেখ করে বলেন, এত বড় মাপের ব্যক্তিত্ব হওয়া সত্ত্বেও তিনি নিজেকে কখনও আর পাঁচজনের থেকে আলাদা ভাবেননি, সবসময়ই ছিলেন অতি সাধারণ ও প্রাণবন্ত। শোকসভায় হেমা ধর্মেন্দ্রর একটি গোপন প্রতিভার কথা প্রকাশ করেন। 

 


তিনি জানান, ধর্মেন্দ্রর ছিল উর্দু শায়েরি লেখার এক বিশেষ দক্ষতা। জীবনের যেকোনও পরিস্থিতিতে তিনি সহজে কবিতা রচনা করতে পারতেন। হেমা তাঁকে সেই শায়েরিগুলি নিয়ে একটি বই লেখার জন্য উৎসাহিত করেছিলেন, এমনকী পরিকল্পনাও চূড়ান্ত হয়েছিল— কিন্তু সেই স্বপ্ন এবার চিরতরে অসমাপ্ত থেকে গেল বলে জানান বর্ষীয়ান অভিনেত্রী।