বাংলা ছবির দুনিয়ায় নতুন ঝড় তুলেছে দেবের ‘ধূমকেতু’। তবে শুধু বাংলা নয়, গোটা ভারত জুড়েই এই ছবি ঘিরে তৈরি হয়েছে অদ্ভুত উত্তেজনা। ইতিমধ্যেই জানা গিয়েছে, সারা ভারত জুড়ে ৩০টি-রও বেশি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেতে চলেছে এই দেব-শুভশ্রীর রি মেগা প্রজেক্ট। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়—এমন সব প্রেক্ষাগৃহ থেকেও ‘ধূমকেতু’র জন্য অনুরোধ আসছে, যেখানে আগে কোনওদিনও বাংলা ছবি মুক্তিই পায়নি। নির্মাতাদের দাবি, ইতিমধ্যেই ১০ কোটিরও বেশি ব্যবসা করে ফেলেছে এই সিনেমা।ছবিতে দেব-শুভশ্রীর রসায়ন ছাড়াও প্রশংসিত ছবির গান। আলোচিত হচ্ছে এই সিনেমারই একটি গান, 'স্মৃতি ফাটলে'। অনুপম রায়ের সুরে এই গান গেয়েছেন নচিকেতা। কিন্তু, নচিকেতা নাকি এই গানটির জন্য প্রথম পছন্দ ছিল না পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের। শেষমেশ অনুপম রায়ের অনুরোধেই নাকি কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় রাজি হয়েছিলেন নচিকেতাকে দিয়ে এই গানটি গাওয়ানোর জন্য। তারপর? তারপর কী হল, ফেসবুকে এক খোলা চিঠিতে জানালেন কৌশিক নিজেই। 

 

“নচিকেতাকে খোলা চিঠি
প্রিয় নচি, 
যদ্দুর জানি তুমি ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম বা হোয়্যাট্সঅ্যাপ থেকে দূরে থাকো। ফলো করো না। তবু ভাবলাম একটা খোলা চিঠি লিখে ফেলি তোমায়। তোমার অগনিত ভক্তের কেউ একজন ঠিক এই চিঠি পৌঁছে দেবে তোমার কাছে। আসলে চিঠিটা কেবল তোমাকে লেখাই নয়, লিখছি তোমার লক্ষ লক্ষ ফ্যানেদের জন্য। টেলিভিশনের জমানা থেকেই আমাদের এই বন্ধন শুরু। যখন পুজোর বেসিক অ্যালবামের থেকে নচিকেতার বানানো সিরিয়ালের টাইটেল গানের ক্যাসেট হট কেকের মতো বিক্রি হতো। নিজের হাজারটা ‘মন ব্যাকুল’ করা মুহূর্তে তোমার গানে ভর করে বারবার বেরিয়ে এসেছি। আজও গোপনে তোমার হাত ধরি ‘ঘিরে ধরে  কুয়াশা যখন’। 
নচি, আমার বাবার গানবাজনা করে রোজগার করা অর্থে আমাদের বড় করেছেন মা। কাজেই আজও যন্ত্র সঙ্গীত বা কণ্ঠ সঙ্গীত শিল্পীদের স্থান আমার জীবনে সবার ওপরে। তুমিও তার ব্যতিক্রম নও। বিসর্জনে তোমার গাওয়া গান অন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছিল ছবিটাকে। 
এসব তো সবার জানা কথা, তাহলে কেন লিখতে বসেছি তোমায়? সরাসরি বলে ফেলি। প্রসঙ্গ ধূমকেতু।
‘স্মৃতি ফাটলে’ গানটা অনুপমের কাছে শুনেই লক্ করেছিলাম। অসম্ভব জরুরি ছিলো গানটা কারণ ছবির চূড়ান্ত পর্যায়ে ব্যবহার করা হবে বলে। সব গানের আগেই কে গাইবে তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা, মতান্তর হয়ই থাকে। স্মৃতি ফাটলে নিয়ে অনুপমের মতামতের সাথে আমার মত মিলছিলো না। ও নচিকেতা বলছে, আর আমি বলছি তোমার এখনকার গলায় গানটা যেমন চাইছি তেমন খুলবে না। আমার আপত্তি সত্ত্বেও অনুপম জেদ ধরে তোমার কথাই বলে চললো। আমি বললাম ওকে যে, আমিও নচির অন্ধ ভক্ত, কিন্তু…

 

 

শেষকালে ঠিক হলো তুমি গাইবে। আমার তখনও মত নেই। ২২শে জুলাই সকালে গানটা রেকর্ড করলে তুমি। ২৩শে জুলাই সকাল সাড়ে এগারোটায় আনমিক্সড ট্র্যাকটা পেলাম তোমার গানের! আমি ডাবিং স্টুডিওতে বসে শুনলাম! সব তালগোল হয়ে গেলো আমার! পরপর দুবার শুনলাম তোমার স্মৃতি ফাটলে গানটা। আমার এক ঘনিষ্ঠ সহকর্মীকে শুধু বললাম, “বাঘ শালা বাঘই থাকে! এমনি এমনি ও নচিকেতা হয়নি!”
তারপরই অনুপমকে লিখলাম, ‘ আমার মতামতের জন্য আমি ক্ষমা চেয়ে নিলাম ভাই! আমি ভুল বলেছিলাম।এবার তুই যা যা ইচ্ছে বাজিয়ে নে অ্যারেঞ্জমেন্টে!’ 
তুমি আমায় ভুল প্রমান করে দিয়েছো বন্ধু। স্মৃতি ফাটলে আমার পছন্দের কেউ গাইলেও ঐ গভীর ফাটলে আমায় ডুবিয়ে দিতে পারতো না।
গতকাল সিনেমা হল ভিসিট করতে মধ্যমগ্রাম স্টার মলে গিয়েছিলাম। অন্ধকার হলে ঢুকে পাশে সিঁড়ির আড়ালে দাঁড়িয়ে দেখছি বাকি ছবিটা। তখনই শুরু হলো তোমার গান! গান শুনে দর্শক চোখ মুছছে, আর আমি চোখ মুছছি একজন শিল্পীর অহংকার, নিষ্ঠা ও মননের গভীরতা দেখে! নিজের ভুল স্বীকার করতে কোনোদিনও আমার ছোট লাগেনি, আজও লাগছে না নচি । ধূমকেতুর ক্লাইম্যাক্সে নচিকেতা আগুন লাগিয়ে দিয়েছে বড় পর্দায়। 
আমার স্বাধীনতা ছিলো আপত্তি করার, তোমারও স্বাধীনতা ছিলো তোমার সবটুকু নিংড়ে দেওয়ার। আমি ভুল প্রমাণিত হলাম জিতে গেলো অনুপম আর ধূমকেতু। জানি, তোমার এসবে কিছু যায় আসেনা। তবু আজ ধূমকেতুর বিজয়রথের পতাকায় নিজে হাতে তোমার নামটা পরিচালক ও বন্ধু হিসেবে লিখে রাখলাম। দেখা হলে জড়িয়ে ধরে আবার স্যরি বলে নেবো। দেখাবো অনুপমকে পাঠানো আমার সারেন্ডার নোট। তবু এমন একটা উপলব্ধি গোপনে জানালে আমার শান্তি হতো না।
আমার এই খোলা চিঠি কেউ একজন আমার ‘পাগলা জাগাই’য়ের কাছে পৌঁছে দেবেন প্লিজ। ধূমকেতু যারা দেখেছেন তারা বুঝবেন কেন এই গানের পিছনে এতটা আবেগ প্রকাশ করলাম।
ধূমকেতুর টিমের কৃতজ্ঞতা গ্রহণ কোরো নচি। ভালো থেকো।
কৌশিক”