২০২২ সালে অভিজিৎ সেনের পরিচালনায় মুক্তি পেয়েছিল ‘প্রজাপতি’। এক বাবা-ছেলের অন্যরকমের গল্প নিয়ে দর্শকের সামনে হাজির হয়েছিলেন মিঠুন চক্রবর্তী এবং দেব। দুই তারকা ক্যামেরার সামনে যেভাবে মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছিলেন, তা দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন দর্শক। ‘প্রজাপতি’ মুক্তির পরেই দর্শকদের আবেদন ছিল এমন জুটি আবার ফিরে আসুক বড়পর্দায়। দর্শকের আবেদন মেনেই এই বছরের বড়দিনে মুক্তি পেয়েছে ‘প্রজাপতি ২’। অভিজিৎ সেনের পরিচালিনায় এই ছবিতে ফের মিঠুন-দেবকে দেখতে প্রেক্ষেগৃহে উপচে পড়ছে দর্শক। ক্রিসমাসের এই আবহে আরও দু'টি বাংলা ছবি মুক্তি পেলেও এখনও পর্যন্ত ‘প্রজাপতি ২’-ই ফার্স্ট বয়।  দর্শকমহলে দুর্দান্ত সাড়া পাওয়ার পর এদিন শিশুশিল্পী অনুমেঘাকে সঙ্গে নিয়ে একটি ভিডিও আপলোড করলেন দেব। জানিয়ে রাখা ভাল, ‘প্রজাপতি ২’তে ‘সিঙ্গল ফাদার’-এর চরিত্রে দেখা যাবে দেবকে। ছবিতে তাঁর ছোট্ট মেয়ের ভূমিকায় দেখা গিয়েছে অনুমেঘ কাহালি-কে। 

 

 

 

 

এই ভিডিও শুধুই ‘প্রজাপতি ২’ নায়কের অনুরাগী ও দর্শকককে ধন্যবাদ জ্ঞাপনের বার্তা নয়। এই ভিডিওর মাধ্যমে দেব জানালেন, প্রজাপতি ২ আসলে তাঁর নিজের বাবাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন। শুধু বাবা নয়, মা'কেও। ভিডিওতে দেখা যায় দেবের কোলে বসে রয়েছেন অনুমেঘা। এক হাতে আলতো করে জড়িয়ে ধরে আছে দেবের হাত।  দেবের কথায়, “এই ছবি করতে রাজি হওয়ার পিছনে অনেকগুলো কারণ ছিল। তবে তার মধ্যে মূল কারণটি ছিল, আমার বাবাকে ধন্যবাদ জানানো। যখন ছোট ছিলাম, আমাদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভাল ছিল না। সেই সময় আমি ছোট। আবদার করেছিলাম, ক্রিকেট শিখতে চাই। শোনামাত্রই বাবা আমাকে বোম্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ক্রিকেট কোচ রমাকান্ত আচরেকরের অ্যাকাডেমিতে ভর্তি করে দিয়েছিলেন। সচিন তেন্ডুলকরের শিক্ষাগুরু ছিলেন আচরেকর। তখন একবারও ভাবিনি, এই অ্যাকাডেমির খরচ কত, বাবার কত টাকা খরচ হচ্ছে আমার জন্য। ভাবতাম বাবা-র দায়িত্ব এটা। এরপর যখন বড় হলাম, দেখলাম আমার চেনাশোনা সবাই গাড়ি করে যাতায়াত শুরু করছে। বাবার কাছে আবদার করলাম, আমারও গাড়ি চাই। সেই সময়ে বাবা গাড়ি কিনে দিয়েছিল। স্যান্ট্রো সংস্থার গাড়ি, যদিও সেকেন্ড হ্যান্ড। দামটা আজও মনে আছে, ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা! একবারও ভাবিনি সেই সময়ে দাঁড়িয়ে এই মূল্যের টাকাটা বাবা-মায়ের কাছে ঠিক কতটা জরুরি। মনে হয়েছিল, এটা বাবা-মায়েরই দায়িত্ব। এরপর যখন ভাবলাম সিনেমার নায়ক হবে, কলকাতায় চলে এলাম। তখন একবারও ভাবিনি আমার ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনার ব্যাপারে বাবা কত টাকা খরচ করেছে। সেই টাকাগুলো তো একদিক দিয়ে দেখতে গেলে জলেই গেল। একবারও ভাবিনি, এত টাকা বাবা কোথা থেকে নিয়ে আসত। ভাবতাম, এটাই তো বাবা-মায়ের দায়িত্ব। ছেলে-মেয়েকে বড় করা, মানুষ করা।” নেপথ্যে থেকে শুরু হয়েছে নচিকেতার গাওয়া 'প্রজাপতি ২'-এর একটি আবেগময় গানের সুর। 

 

 

 

বলতে বলে আবেগের বাষ্প জমে গলা ভারী হয়ে আসে দেবের। সামান্য থেমে ফের বলা শুরু করেন এই অভিনেতা-প্রযোজক, “বাবা-মায়েরা তাঁদের সবকিছু উজাড় করে দেন তাঁদের ছেলেমেয়েদের জন্য। ওডির জন্যই তাঁরা বাঁচেন। আজ বয়স বেড়েছে, জীবনের নানান অভিজ্ঞতা হয়েছে। যখন এই ছবির চিত্রনাট্য নিয়ে আলোচনা করছিলাম, তখনই মাথায় আসে এভাবেও তো আমি আমার বাবা-মা কে ধন্যবাদ জানাতে পারি। কারণ সিনেমা আমার মতে বিগেস্ট ইমোশন। তাই’ প্রজাপতি ২’ আমার কাছে আমার বাবা-মাকে ধন্যবাদ জানানোর মাধ্যম।”

 

এরপরেই ক্যামেরার দিকে সোজাসুজি তাকিয়ে নিজের বাবা উদ্দেশ্যে দেব বলে ওঠেন, “থ্যাঙ্ক য়ু, বাবা। তুমি কোনওদিন বুঝতে দাওনি টাকা আসছে কথা থেকে। তুমি শুধু আমাকে বলে গিয়েছি, " আমি যেন আমার দেখা কোনও স্বপ্ন না নষ্ট করি। অনেক, অনেক ধন্যবাদ।”

 

 

এরপরেই নেটিজেনদের উদ্দেশ্যে দেব-বার্তা, “আমি নিশ্চিত আপনাদেরও নিজেদের বাবা-মা'কে নিয়ে এরকম অনেক গল্প আছে। যদি চান, সেইসং গল্প আমার সঙ্গে, আমাদের সঙ্গে সমাজমাধ্যমে ভাগ করে নিন। ভাল থাকবেন। আর হ্যাঁ, এই কথাটুকু ভীষণ সত্যি যে বাবা-মায়েরা ভাল থাকার জন্য বাঁচে না। ভাল রাখার জন্য বাঁচে।”

দেবের কথা শেষ হওয়ামাত্রই তাঁর গালে চুমু এঁকে দেয় ছোট্ট অনুমেঘ। সেরি করেননি দেব-ও। শিশুশিল্পীর গালে পাল্টা স্নেহভরা চুম্বন ফেরত দিলেন তিনি। অনুমেঘার মুখ জুড়ে তখন অনাবিল হাসি।