মঞ্চ এবার মোবাইলে! ঐতিহ্য, সংস্কৃতিকে এবার মুঠোফোনে বন্দি করবে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম। বাংলা থিয়েটারের ঐতিহ্যের কথা সবাই দর্শক কমবেশি জানেন। সেই গেরাসিম লেবেদেফের হাত ধরে যার যাত্রা শুরু, আজকের কলকাতা ও জেলায় জেলায় গ্রুপ থিয়েটারে তার ধারাবাহিকতা। অথচ, সেই প্রবহমান সংস্কৃতির সংরক্ষণ তেমনভাবে হয়নি। তৈরি হয়নি কোনও প্রামাণ্য আর্কাইভ।
জিটিপিএল-কেসিবিপিএল গ্রুপ, বঙ্গমঞ্চকে বিশ্বমঞ্চে পেশ করার তাগিদে ও মহানগর সহ পশ্চিমবঙ্গের জেলার গ্রুপ থিয়েটারকে আরও বৃহত্তর আঙিনায় উপস্থাপনের লক্ষ্যে নিয়ে এল ভারতের প্রথম থিয়েটার ওটিটি প্ল্যাটফর্ম, ওয়ান থিয়েটার। এখানে মঞ্চ থেকে সরাসরি মোবাইলে বিনোদনকে কাছ থেকে উপভোগ করতে পারবেন দর্শক, একটি মাত্র স্মার্ট অ্যাপের মাধ্যমে।
৩০০-টিরও বেশি নাটকে সমৃদ্ধ এই অ্যাপ বাংলা থিয়েটার তথা বাংলাকে আবার বিশ্বমানচিত্রে প্রতিষ্ঠিত করবে, এই আমাদের সম্মিলিত প্রত্যাশা। এই অ্যাপে থাকবে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের একটি বিশেষ আর্কাইভ। ৩০০টি নাটকের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পৌলমী চট্টোপাধ্যায়ের নির্দেশনায়, শ্যামবাজার মুখোমুখির প্রযোজনায় 'টাইপিস্ট'।
আরও পড়ুন: 'পরশুরাম'কে সামলে বড়পর্দায় তৃণা সাহা! কার সঙ্গে জুটি বাঁধবেন নায়িকা?
এই নাটকে অনিরুদ্ধ হালদার একটি মেল অর্ডার হাউজে পোস্ট কার্ড লেখার কাজ করেন। অফিসে তাঁর সহকর্মী ইন্দ্রানী দাসগুপ্তকে সহকর্মী হিসাবে পান। কাজ করতে করতে একসময় উপলব্ধি করেন তাঁর চাকরি অস্থায়ী তিনি আরও উপলব্ধি করেন তত্ত্বাবধায়ক ইন্দ্রানীরও কিছু স্বপ্ন রয়েছে। এভাবে কাজ করতে করতে তাঁদের মধ্যে ঘনিষ্টতা বারে তাঁরা দৈনন্দিন আবেগগুলো ভাগ করে নিতে থাকেন। এই নাটকটি জীবন চক্রের একটি নির্দিষ্ট দিককে প্রত্যক্ষ করে। অভিনয়ে রয়েছেন দেবশঙ্কর হালদার ও পৌলমী চট্টোপাধ্যায়।
রয়েছে জ্যোতিস্মান চট্টোপাধ্যায়ের নির্দেশনায় কল্পায়ুর প্রযোজনায় নাটক 'মনে জঙ্গলে'। এই নাটকে দেখানো হয় মানব মন অনাদিকাল থেকেই গবেষণার বিষয়। একই পরিস্থিতিতে বিভিন্ন মন ভিন্নভাবে কাজ করে। এমনকী একই মনও বিভিন্ন পরিস্থিতিতে ভিন্নভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায়। মনের সমস্ত বৈশিষ্ট্যের মধ্যে, এই নাটকটি স্মৃতি এবং এর অভাব নিয়ে আলোচনা করে। স্মৃতি হল জিনিসগুলি মনে রাখার ক্ষমতা। একটি ঘটনা একজন মনে রাখে এবং একই সাথে অন্যজন সম্পূর্ণরূপে ভুলে যেতে পারে। উভয়েরই সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে, তবে উভয়ের জন্যই কষ্ট সমান হতে পারে। তাছাড়া, সম্ভবত কিছুই সম্পূর্ণরূপে ভুলে যাওয়া বা সঠিকভাবে মনে রাখা যায় না। এর মধ্যে মানবিক কারণগুলি ভূমিকা পালন করে, যা আসলে মানুষের মস্তিষ্কের প্রকৃতি এবং এটি স্মৃতি প্রক্রিয়াকরণের পদ্ধতি। এই নাটকটি হ্যাপি মাইন্ডস-এর পটভূমিতে তৈরি। অভিনয়ে রয়েছেন রজতাভ দত্ত, শঙ্কর চক্রবর্তী,দেবলীনা দত্ত,অনিন্দিতা ব্যানার্জি, প্রীথা মজুমদার, জ্যোতিস্মান চট্টোপাধ্যায়, বরুণ গাঙ্গুলি, শঙ্খবরন দে ও সৌরভ কর।
থাকছে গৌতম হালদারের নির্দেশনায় ও নয়ে নাটুয়ার প্রযোজনায় নাটক 'মিতালী'। এটি চারটি রাতের গল্প। যে রাত্রি শুধু কমবয়সেই বোঝা যায়। এক কিশোর মনের রাত। তারায় তারায় ভরা এক স্বচ্ছ আকাশ যার নীচে দাঁড়িয়ে ওই কম বয়সে মনে হয় কীকরে এমন ঝলমলে আকাশের নীচে নষ্ট মন আর বদমেজাজ নিয়ে লোকেরা বেঁচে আছে। এমন আকাশ মন ভাল করে দেবেই। রয়েছে আজ থেকে তিরিশ-চল্লিশ.. বছর আগের একটি গল্প। প্রেমের গল্প, কিশোর প্রেমের গল্প। যখন মোবাইল ছিল না। খবর দেওয়া নেওয়ার প্রধান মাধ্যম ছিল চিঠি লেখা। আর প্রেমের চিঠির কথা তো বলে শেষ করা যায় না। সেই সময়ের কথা বলতে গেলে সব কিশোর-কিশোরীরই একটি একটি আলাদা প্রেমের চিঠির ইতিহাস থাকে। বিশ্ববিখ্যাত সাহিত্যিক ফিওদর দস্তয়েভস্কির একটি গল্পের অনুপ্রেরণায় এই নাটক লেখা।অভিনয়ে রয়েছেন দ্যুতি ঘোষ হালদার, গৌতম হালদার,পার্থিব রায়, স্পন্দন ব্যানার্জি, ও ঋতুপর্ণা চ্যাটার্জি।
এছাড়াও থাকছে পৌলমী চট্টোপাধ্যায়ের আরও একটি নাটক 'চন্দনপুরের চোর'। প্রযোজনায় শ্যামবাজার মুখোমুখি। এই কৌতুক মহাকাব্যিক নাটকটিতে দেখানো হয়েছে যে মানবিক মূল্যবোধ এবং সম্পর্ক জীবনের গুরুত্বপূর্ণ মূল্যবোধগুলি একজন ব্যক্তিকেও বদলে দিতে পারে। নাটকটি তিনজন চোরের দুঃসাহসিক কাজের বর্ণনা দেয়। যারা বিনোদনের সন্ধানে একজন ধনী এবং বৃদ্ধ মহিলার অতিথি হয়ে ওঠেন। তিনজনের জীবন যে ভিন্ন খাতে বয়, সেই নিয়েই এগোয় নাটকটি অভিনয়ছ রয়েছেন শঙ্কর চক্রবর্তী, অরিন্দম চ্যাটার্জি, মানস মুখার্জি, সুব্রত সমজদার,বিশ্বজিৎ সরকার, সপ্তর্ষি ভৌমিক, পৌলমী চট্টোপাধ্যায়, সাহানা সেন, রুবি মণ্ডল, সুতপা অধিকারী, অরিজিৎ ঘোষ, ঐন্দ্রিলা চ্যাটার্জি, সুদীপ কর ও অনুপ কর।
