নাগরিকত্বের দমবন্ধ করা আতঙ্ক, ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের নোটিশ, উদ্বাস্তু বাঙালির রাতের ঘুম কেড়ে নেওয়া সেই আতঙ্ক এবার উঠে আসছে পর্দায়। তবে এ শুধুই ছবি নয়—একেবারে রাজনৈতিক বার্তা দেওয়া স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবি। আর সেই ছবিতে অভিনয় করছেন খোদ তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক সনৎ দে।
কিছুদিন আগেই দক্ষিণ কলকাতায় এক ব্যক্তি নাগরিকত্ব নিয়ে দুশ্চিন্তায় আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছিল। অন্যদিকে বিজেপি শাসিত কয়েকটি রাজ্যে পরিযায়ী বাঙালী শ্রমিকদের কেবল বাংলা বলার জন্য ‘বাংলাদেশী’ তকমা দিয়ে আটক রাখার ঘটনা খবরের শিরোনামে জায়গা করে নিয়েছে। এ রাজ্যের মাটিতেও রাজনীতি ক্রমশ উত্তপ্ত। ঠিক এই প্রেক্ষিতেই নৈহাটির বিধায়ক সনৎ দে অভিনয় করেছেন এক স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবিতে।

এই ছবি নিয়ে সনৎবাবুর সাফ কথা— “নাগরিকত্বের ইস্যু এখন বাংলার বাঙালীর বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণা। আধার, ভোটার কার্ড থাকার পরেও কেন প্রমাণ করতে হবে যে আমি ভারতীয়? এই ছবির সঙ্গে যুক্ত হওয়া আমার সামাজিক দায়বদ্ধতা।” শুধু অভিনয়ই নয়, নির্মাণ প্রক্রিয়ার সঙ্গেও জড়িয়ে আছেন তিনি।

ছবির প্রযোজক ও গল্পকার মিলন ঘোষ—যিনি নিজে স্থানীয় তৃণমূল নেতা এবং ব্যারাকপুর ব্লক ১ পঞ্চায়েত সমিতির ভূমি ও বন দপ্তরর কর্মাধ্যক্ষ। বললেন, “আমরা রোজ মাটির সঙ্গে মিশে দেখছি, উদ্বাস্তু পরিবারের কত মানুষ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। মতুয়া-নমশূদ্র সম্প্রদায়ের ভেতরে ভয় আরও প্রবল। সরকার একদিকে বলে হিন্দু বাঙালিদের চিন্তা নেই, আবার সেই পরিবারগুলোকেই ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের নোটিশ ধরানো হচ্ছে।” তাঁর প্রশ্ন, “একজন ভারতের নাগরিককে আবার প্রমাণ করতে হবে, যে সে ভারতের নাগরিক?”
ছবির পরিচালক শমিত ঘোষ স্পষ্ট করে দিলেন, এটা কোনো দলের প্রোপাগান্ডা ফিল্ম নয়। তবে বার্তা আছে। বললেন, “আমরা বিবেক অগ্নিহোত্রীর মতো সিনেমা বানাচ্ছি না। আমাদের অনুপ্রেরণা ঋত্বিক ঘটক। দেশভাগ, উদ্বাস্তু সমস্যা, কলোনির ইতিহাস—ঋত্বিকবাবুর ছবিতে যেভাবে উঠে এসেছে, আমরাও চাই দর্শক ভাবুক, প্রশ্ন করুক। কারণ সেই বিষয়গুলো তো ঋত্বিক ঘটকের ছবিতে বারবার এসেছে৷ ভাবলে অবাক লাগে, সেই সব ছবির কয়েক দশক বাদেও উদ্বাস্তু হিন্দু বাঙালিকে প্রমান দিয়ে যেতে হচ্ছে। হ্যাঁ, আমাদের ছবিতে প্রোপাগান্ডা আছে, তবে সেটা ঋত্বিক ঘটকের মতো—বিবেক অগ্নিহোত্রীর মতো নয়।”
কথাশেষে তাঁর সংযোজন, “আমরা কিন্তু কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষ নিচ্ছি না। আমরা বিবেক অগ্নিহোত্রী নই। তবে হ্যাঁ, আমাদের ছবিতেও একটা বার্তা আছে। আমরা দর্শককে ভাবতে বলছি৷ একটা শিল্প যদি দর্শককে না ভাবায়, তাহলে কীসের শিল্প? আমরা চাই দর্শক ভাবুক।!”
সব মিলিয়ে নাগরিকত্বের জটিলতা নিয়ে যখন রাজ্য রাজনীতি তপ্ত, তখন এই ৩০ মিনিটের স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবি নিছক কোনও ছবি নয়, বরং আরও এক রাজনৈতিক মঞ্চ হয়ে উঠতে চলেছে—যেখানে আলো-ছায়ায় ফুটে উঠবে বাঙালীর অস্তিত্বের প্রশ্ন।
