পরিচালক মোহিত সুরি এখন ডুবে রয়েছেন ‘সাইয়ারা’–র সাফল্যের মধুচন্দ্রিমায়। গত ১৮ জুলাই মুক্তি পাওয়া এই তীব্র প্রেমের কাহিনি দর্শকের হৃদয় ছুঁয়েছে এক ঝলকেই। তবে এই গল্পের মধ্যে এক জায়গায় এসে কেঁপে উঠেছিলেন পরিচালক নিজেই। সে দৃশ্য ছিল ছবিতে বাবা-ছেলের এক ভয়ানক সংঘাতের! ছবিতে এই সিকোয়েন্সে, অহন পাণ্ডে অভিনীত কৃষ কাপুর এবং তাঁর বাবা অশোক কাপুর (অভিনয়ে বরুণ বাদোলা)-এর সঙ্গে এমন এক তর্কে জড়িয়ে পড়ে, যা গিয়ে পৌঁছয় হিংস্রতায়।

 

মোহিত জানালেন, প্রথমে তাঁর মনে হয়েছিল দৃশ্যটা “অত্যধিক নাটকীয় আর ডার্ক”। সেই অস্বস্তির মধ্যেই এক ভোরবেলায়—ঠিক ৬টায়—ফোন করলেন তাঁর মামা মহেশ ভাটকে। কিন্তু দৃশ্যটা নিয়ে খুব একটা কিছু বললেন না সুরি। শুধু জানালেন—তিনি ভয় পাচ্ছেন, এই মুহূর্তটা ঠিকভাবে তুলে ধরতে পারবেন তো?

 

আরও পড়ুন: ইশা কোপিকরকে প্রকাশ্যে ১৪ বার চড় মেরেছিলেন নাগার্জুন! কেন এরকম কাণ্ড করেছিলেন দক্ষিণী তারকা? ফাঁস হল এই প্রথম

 

তারপরেই হোয়াটসঅ্যাপ ডিসপ্লে ছবি আর ভাট সাহেবের একলাইনে ম্যাজিক!  সেই সময় ভাট সাহেব চোখ রাখলেন সুরির হোয়াটসঅ্যাপ ডিসপ্লে ছবিতে। সেখানে দেখা যাচ্ছিল মোহিত নিজের ছেলের হাত ধরে আছেন। তখনই ভাট বলেন— “তোর ফোনের ডিসপ্লেতে যদি এমন একটা ছবি থাকে, তাহলে তুই এই দৃশ্য কখনও ভুল করতে পারিস না। কারণ তুই এই সম্পর্কটাকে ভালবাসিস।”তারপর মহেশ ভাটের আরেকটি অমূল্য উপদেশ ভেসে এসেছিল তাঁর উদ্দেশ্যে —“যে পরিচালক নিজের আবেগ ঠিকভাবে প্রকাশ করতে পারে, সে কখনও ব্যর্থ হয় না।”

 

সুরি-ভাট জুটির পুরনো সম্পর্ক জানেন? সাইয়ারা ছবির পরিচালক মোহিত সুরি আর মহেশ ভাটের সম্পর্ক শুধু পারিবারিক নয়, পেশাগত ভাবেও বহু ছবিতে তাঁরা একসঙ্গে কাজ করেছেন। যেমন— ‘কলিযুগ’ ও ‘হামারি আধুরি কহানি’ ছবিতে সুরি ছিলেন পরিচালক আর ভাট ছিলেন প্রযোজক। তবে ‘সাইয়ারা’ তৈরি হয়েছে যশ রাজ ফিল্মস-এর ব্যানারে।এই ছবিতেই আত্মপ্রকাশ করেছেন আহান পাণ্ডে ও অনীত পাড্ডা। রয়েছেন শাদ রন্ধাওয়া, রাজেশ কুমার, বরুণ বাদোলা প্রমুখ।

 

প্রসঙ্গত, মোহিত সুরির ‘সইয়ারা’ এখন ভারতীয় রোম্যান্টিক সিনেমার ইতিহাসে সবচেয়ে সফল লাভ স্টোরি। মুক্তির মাত্র ১১ দিনের মাথায় এই ছবি বিশ্বজুড়ে আয় করেছে ৪০৪ কোটি টাকা, যা নতুন রেকর্ড।১৮ জুলাই মুক্তি পাওয়া ‘সইয়ারা’-র এই অবিশ্বাস্য সাফল্য প্রমাণ করে দিল—প্রেম এখনও টিকিট কাটায়! নতুন মুখ অহন পাণ্ডে এবং অনিত পাড্ডা অভিনীত এই রোম্যান্টিক ড্রামা বক্স অফিসে যেভাবে তাণ্ডব চালাচ্ছে, তাতে পিছনে পড়ে গিয়েছে বলিউডের অনেক বিখ্যাত লাভস্টোরি।

 ভারতে: ৩১৮ কোটি টাকা।
 বিদেশে: ৮৬ কোটি টাকা।
 মোট বিশ্বব্যাপী আয়: ৪০৪ কোটি টাকা। 

 

এই রেকর্ড সাফল্যে ‘সইয়ারা’ টপকে গিয়েছে শাহিদ কাপুরের সুপারহিট ছবি ‘কবীর সিং’ (৩৭৯ কোটি টাকা) এবং আমির খানের হৃদয়স্পর্শী ছবি ‘সিতারে জমিন পার’ (২৬৪ কোটি টাকা)-কে। ‘সইয়ারা’ ইতিমধ্যেই ছাপিয়ে গিয়েছে মোহিত সুরির আগের রোম্যান্টিক হিটগুলো—‘আশিকি ২’, ‘মার্ডার ২’, ‘হাফ গার্লফ্রেন্ড’, ‘এক ভিলেন’—সবই এখন অতীত। মুক্তির প্রথম দিনেই ২১.২৫ কোটি টাকা আয় করে ছবিটি স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছিল যে, এটা কোনও সাধারণ লাভস্টোরি নয়। মুক্তির চার দিনের মধ্যেই ছবি ছাড়িয়ে যায় ১০০ কোটি টাকার গণ্ডি। ছবির দুই মুখ্য চরিত্র—আহান পাণ্ডে ও অনিত পাড্ডা—এটাই তাঁদের বড়পর্দায় আত্মপ্রকাশ। তবুও তাঁদের অনস্ক্রিন কেমিস্ট্রি ও অভিনয় দর্শক-সমালোচক সকলকে মুগ্ধ করেছে। মোহিত সুরির সংবেদনশীল পরিচালনা, হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া সঙ্গীত এবং আবেগঘন চিত্রনাট্য—সব মিলিয়ে এক নিখুঁত রসায়ন তৈরি করেছে।